অদ্ভুত সব নিয়ম নিয়ে এল ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ—টেস্ট টোয়েন্টি
Published: 17th, October 2025 GMT
একটাই খেলা, ক্রিকেট। অথচ কতভাবে যে খেলা যায় সেটা, কতভাবে যে খেলা হচ্ছে! এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরই আছে তিনটি সংস্করণ—টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। এর সঙ্গে খেলা হচ্ছে ১০ ওভারের টি-টেন, ১০০ বলের দ্য হানড্রেড, সিক্স আ সাইড ক্রিকেটও। পৃথিবীর আর কোনো খেলার এতগুলো সংস্করণ আছে কি না, সেটাও গবেষণার বিষয় হতে পারে।
এসবের সঙ্গে এবার যোগ হচ্ছে টেস্ট টোয়েন্টি নামের নতুন এক সংস্করণ। নতুন এ সংস্করণের ধারণা নিয়ে এসেছেন ক্রীড়া উদ্যোক্তা ও দ্য ওয়ান ওয়ান সিক্স নেটওয়ার্কের নির্বাহী চেয়ারম্যান গৌরব বহিরবানি।
তাঁর এই উদ্যোগের সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছেন ক্রিকেটের চার কিংবদন্তি—ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক স্যার ক্লাইভ লয়েড, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার ম্যাথু হেইডেন, ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। এই চারজনই আছেন এই প্রকল্পের উপদেষ্টা পরিষদে।
টেস্ট টোয়েন্টি কীএটি মূলত টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির মিশ্রণ। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বানানো হয়েছে টেস্ট টোয়েন্টি। এখানে ২০ ওভারের দুটি করে ইনিংস খেলবে প্রতিটি দল। সাদা পোশাকে, লাল বলে, এক দিনেই শেষ হবে ম্যাচ। অর্থাৎ প্রতিটি ম্যাচ হবে ৮০ ওভারের। টেস্টের মতো এখানেও প্রথম ইনিংসের স্কোর যোগ হবে দ্বিতীয় ইনিংসে। ফল হতে পারে জয়, হার, টাই কিংবা ড্র।
নতুন কী আইনকানুন১.
পাওয়ারপ্লে
প্রতিটি দল একটি মাত্র পাওয়ারপ্লে নিতে পারবে, প্রথম বা দ্বিতীয় ইনিংস—যখন খুশি। ৪ ওভার স্থায়ী এই পাওয়ারপ্লেতে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকতে পারবে মাত্র দুই ফিল্ডার। যদি দ্বিতীয় ইনিংসের সপ্তম ওভারের মধ্যে অধিনায়ক পাওয়ারপ্লে কখন নেবেন সেই সিদ্ধান্ত না জানান, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সপ্তম থেকে দশম ওভার পর্যন্ত চলবে পাওয়ারপ্লে।
২. ফলোঅন
প্রথম ইনিংস শেষে যদি পরে ব্যাট করা দল ৭৫ বা এর বেশি রানে পিছিয়ে থাকে, আগে ব্যাট করা দলের অধিনায়ক ফলোঅন করাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে পরে ব্যাট করা দলটিকে সঙ্গে সঙ্গেই আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হবে।
৩. আর্লি কলাপ্স ক্লজ
যদি কোনো দল প্রথম ইনিংসে ১০ ওভারের আগে অলআউট হয়, তবে তাদের অব্যবহৃত ওভারের মধ্য থেকে ৩ ওভার যোগ হবে প্রতিপক্ষের ইনিংসে। যেমন, দল ‘এ’ যদি ৭ ওভারে গুটিয়ে যায়, তবে দল ‘বি’ প্রথম ইনিংসে খেলবে ২৩ ওভার (২০+৩)।
৪. বোলিং বণ্টন
পুরো ম্যাচে সর্বোচ্চ পাঁচজন বোলার ব্যবহার করা যাবে। প্রত্যেক বোলার দুই ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৮ ওভার বল করতে পারবেন। এক ইনিংসে ৬ ওভার, অন্য ইনিংসে ২ ওভার—যেভাবেই ভাগ করা হোক, মোট ৮ ওভারের বেশি নয়।
৫. ওয়াইড ও নো বল
টি–টোয়েন্টির নিয়মই প্রযোজ্য থাকবে। প্রতিটি ওয়াইড ও নো বলে এক রান এবং অতিরিক্ত বল। ফ্রন্টফুট নো বল মানেই ‘ফ্রি হিট’। এক ওভারে যদি কোনো বোলার ৩ বা তার বেশি ওয়াইড/নো বল করেন, তবে অতিরিক্ত ৩ রান পেনাল্টি পাবে প্রতিপক্ষ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে আম্পায়াররা নিজেদের বিবেচনা প্রয়োগ করতে পারেন। যদি কোনো ব্যাটসম্যান ইচ্ছা করে ক্রিজ ছেড়ে সরে যান, তাহলে সেই ডেলিভারিকে আম্পায়ার ‘ওয়াইড’ না–ও দিতে পারেন।
৬. শর্তসাপেক্ষ ড্র
চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা দলের যদি পাঁচের কম উইকেট পড়ে, তারা চাইলে ম্যাচটি ‘ড্র’ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে পঞ্চম উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগ হারাবে—তখন ফল হবে শুধু জয় বা পরাজয়, রানের যোগফল অনুযায়ী। আবহাওয়ার কারণে খেলা অসম্পূর্ণ থেকে গেলে ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হবে। টাই হলে সুপার ওভারে খেলা গড়াবে। এক ওভারের সেই খেলায়ও ফল না পাওয়া গেলে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাউন্ডারি মারায় যে দল এগিয়ে তারা জিতবে।
আপাতত এর উত্তর হলো—না। এই সংস্করণটি শুধু ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী যুব ক্রিকেটারদের জন্য।
এসব টুর্নামেন্টে দেখা যেতে পারে সূর্যবংশীদেরউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত অন্তত ১৭
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানে ১০ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছে কাবুল। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুই পক্ষই জানায়, অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়াতে রাজি তারা।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রথম দফার বৈঠক করেছে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
এদিকে গতকাল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। এটা ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে উদ্বেগজনক।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আফগান উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ নবি ওমরি। তিনি বলেছেন, কাবুল কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি। এসব গোষ্ঠীকে সমর্থনও করে না।
আফগানিস্তানে তিন স্থানে হামলাযুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল জানায়, দেশটির পাকতিকা প্রদেশের পৃথক তিন স্থানে পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদউল্লাহ আমিনি বলেন, পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন বারমাল, উরগুন ও খানাদার এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
পাকতিকার প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলায় স্থানীয় তিন ক্রিকেটারসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সাইয়েদ নাসিম সাদাত জানান, হামলায় নিহত সেই তিন ক্রিকেটার একটি ম্যাচ শেষে উরগুনে ফিরছিলেন।
গতকাল আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে কাবুল। তবে শান্তি আলোচনার বিষয়টি ভেবেই তাদের বাহিনীকে পাল্টা হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান বলছে ‘জঙ্গি আস্তানা’এর আগে গতকাল পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আফগান সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। এতে পাকিস্তানি সাত সেনা নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলী শহরে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা ইরফান আলী।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলাটি চালায় পাকিস্তানের নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ। এর জবাব দিতেই আফগানিস্তানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা নিশানা করে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতি তো আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে হয়নি, যারা পাকিস্তানে হামলা চালায়।
দোহায় শান্তি আলোচনাগতকাল দোহায় প্রথম ধাপের বৈঠকের পর ইসলামাবাদ বা কাবুল এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গতকাল রাতে জানায়, দুই দেশের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হয়েছে।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি ‘অগ্রহণযোগ্য’। আজ সকালে আবার দুই পক্ষ বৈঠকে বসবে।
পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। আরও রয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক। আফগান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।
বৈঠক শুরুর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, আলোচনায় মূলত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অবসান এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে গুরুত্ব দেওয়া হবে।