ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ত্রাণ সরবরাহ বেড়েছে। তবে দুই বছর ধরে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে উপত্যকাটিতে যে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ছাড়া ইসরায়েলি নৃশংসতায় গাজার বেশির ভাগ হাসপাতাল ধ্বংস হওয়ায় সেখানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সংক্রামক রোগবালাই।

গতকাল শুক্রবার ছিল গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির অষ্টম দিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শান্তি’ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির সময় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করতে দেবে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলি বাহিনী বিভিন্ন সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রাখায় নির্ধারিত ত্রাণের অনেক কম গাজায় প্রবেশ করছে।

গাজা থেকে সাংবাদিক হিন্দ কোউদারি জানান, দিনে ৬০০ ট্রাক ত্রাণও উপত্যকাটির জন্য যথেষ্ট নয়। তবে প্রতিদিন ৩০০টির কম গাজায় প্রবেশ করছে। গতকালও অনেক ট্রাক ইসরায়েলের কিসুফিম সীমান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছিল। সেগুলো নিরীক্ষা করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিরীক্ষায় অনেক ট্রাকের পণ্য আটকে রাখা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এসব পণ্যে বিধিনিষেধ আছে।

এমন পরিস্থিতিতে গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। জাতিসংঘের সংস্থাটির মুখপাত্র আবির ইতেফা গতকাল জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আরও কিছু সময় লাগবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে টানা দুই বছর গাজায় নৃশংসতা চালায় ইসরায়েল। অবরোধের জেরে এ সময় উপত্যকাটিতে দেখা দেয় খাবার, পানি, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ জরুরি পণ্যের তীব্র সংকট। অনাহারে মৃত্যু হয় ৪৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির। এমন পরিস্থিতিতে গত আগস্টে জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণবিষয়ক প্যানেল-আইপিসি জানায়, গাজা নগরীতে দুর্ভিক্ষ চলছে।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে সংক্রামক রোগ

গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে ৩৬টি হাসপাতালের মাত্র ১৩টি আংশিক চালু আছে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। গতকাল মিসরের রাজধানী কায়রোয় এএফপিকে সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক হানান বালকি বলেন, ‘এটি মেনিনজাইটিস হোক বা ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ, আমরা বিপুল পরিমাণ কাজের কথা বলছি।’

মধ্যস্থতাকারীদের হামাসের আহ্বান

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাকি শর্তগুলো অনুসরণের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। সংগঠনটির এক বিবৃতির বরাতে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সংঘাত-পরবর্তী গাজায় একটি কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। এই কমিটি উপত্যকাটির প্রশাসনিক কাজ শুরু করবে।

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর গাজার শাসনক্ষমতায় থাকতে পারবে না হামাস। এই শর্তে সংগঠনটি রাজি হয়েছে। তবে গাজায় যেসব এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেখানে হামাস সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সাময়িক সময় অস্ত্র ধারণ করতে পারবে হামাস।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর স থ ত গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধ বন্ধে জেলেনস্কিকে চুক্তি করতে বললেন ট্রাম্প

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চুক্তি করতে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের ‘বিজয় দাবি করা’ উচিত এবং এই রক্তপাত থামানো উচিত।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে এ কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প এ কথা জানান।

ট্রাম্প বলেন, ‘জেলেনস্কির সঙ্গে খুবই আগ্রহোদ্দীপক এবং আন্তরিক বৈঠক হয়েছে। তবে আমি তাঁকে বলেছি, যেমনটি আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও জোর দিয়ে বলেছি, এখন খুনোখুনি বন্ধের সময় আর চুক্তি করে ফেলো।’

বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলেনস্কি বলেন, তিনি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলাপ করেছেন। তবে এ বিষয়ে জনসমক্ষে ‘আমরা কোনো কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চায় না (মস্কোর সঙ্গে) উত্তেজনা তৈরি হোক।’

এ সময় বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন। আমাদের জনগণ আতঙ্কে আছেন যে, যদি (যুদ্ধবিরতি) হয়, তাহলে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন, যাতে পুতিন আবার আগ্রাসন না চালাতে পারেন।’

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগের দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপ হয় ট্রাম্পের। ওই ফোনালাপে দুই নেতা হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বৈঠকে বসার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে এই বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিন দীর্ঘ ফোনালাপ, হাঙ্গেরিতে হবে বৈঠক১৬ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনপুতিন যুদ্ধ না থামালে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেবেন ট্রাম্প১৩ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ