বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটে হারাল দ. আফ্রিকা
Published: 18th, October 2025 GMT
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দারুণ আধিপত্য দেখিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দল। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কলম্বোর আর প্রেমাদাসা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে প্রোটিয়ারা জয় পেয়েছে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে। এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে টানা চতুর্থ ম্যাচে জয় পেল তারা।
এই জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঁচ ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। বিপরীতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এখনো জয়ের দেখা পায়নি; পাঁচ ম্যাচে এটি তাদের তৃতীয় হার।
আরো পড়ুন:
টি-টোয়েন্টিতে ৩৪ বলে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়লেন ভারতের ব্যাটার
ওয়ানডেতে পায়ের নিচে মাটির সন্ধানে বাংলাদেশ, উইন্ডিজের চোখ সিরিজে
এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি ৫০ ওভার থেকে নেমে আসে ২০ ওভারে। নির্ধারিত ওভারে লঙ্কান নারীরা সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে ১০৫ রান।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৪ রান আসে বিষ্মি গুনারত্নের ব্যাট থেকে। ইনিংসের শুরুতে তিনি ইনজুরিতে মাঠ ছাড়লেও শেষ দিকে ফিরে এসে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারানোয় বড় সংগ্রহ দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেন ননকুলুলেকো ম্লাবা। তার শিকার তিনজন ব্যাটার। শুরুতে ক্যাভিশা দিলহারিকে আউট করার পর পরের বলেই ম্লাবা তুলে নেন হর্ষিথা সমারাবিক্রমাকে। শেষ ওভারে তিনি ফেরান গুনারাথনেকেও, যিনি কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
১১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার লরা উলভার্ট ও তাজমিন ব্রিটস। ইনিংসের প্রথম ছয় ওভারে তারা তোলে ২৫ রান। এরপর গতি বাড়িয়ে দেন দুজনেই। মাত্র ১২.
ক্যাপ্টেন উলভার্ট তুলে নেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম হাফ-সেঞ্চুরি। চলতি টুর্নামেন্টে এটি তার দ্বিতীয়। অন্যদিকে ব্রিটস শেষ বলে ছক্কা মেরে পূর্ণ করেন নিজের ফিফটি এবং নিশ্চিত করেন দলের দারুণ ১০ উইকেটের জয়।
এই জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা শুধু টানা চতুর্থ জয়ই পেল না, বরং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বও আরও দৃঢ় করল। ব্যাট-বল দুই বিভাগেই এমন ছন্দময় পারফরম্যান্সে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর তারা, যা নিঃসন্দেহে আসন্ন পাকিস্তান ম্যাচের আগে বড় প্রেরণা হয়ে থাকবে।
প্রোটিয়াদের পরের ম্যাচ ২১ অক্টোবর, একই ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা ২০ অক্টোবর নবী মুম্বাইয়ে লড়বে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’
১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে।
দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?
২.২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্গ্রীব।
আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।
■ দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।
দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি