কৌশলী ছাত্রশিবিরের সামনে ছিল অগোছালো ছাত্রদল
Published: 18th, October 2025 GMT
দুই বছর আগেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ ছিল না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের। গত এক বছরে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। এই পুরো বছর কাজে লাগিয়েছে ছাত্রশিবির। অন্যদিকে সংগঠন গোছাতে পারেনি ছাত্রদল। আর সেই অগোছালো অবস্থার খেসারত দিতে হলো এবারের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে।
ছাত্রশিবির গত এক বছরে ক্যাম্পাসে নিজস্ব শৃঙ্খলা ও সুসংগঠিত কাঠামো গড়ে তোলে। নিয়মিত সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক আয়োজন, অনলাইন ক্যাম্পেইন—সবকিছুতেই তারা দেখিয়েছে সংগঠিত উপস্থিতি। ফলে নির্বাচনের ময়দানে তারা ছিল প্রস্তুত, ছাত্রদল ছিল এলোমেলো।
গত বুধবার অনুষ্ঠিত সপ্তম চাকসু নির্বাচনে ২৬টির মধ্যে ২৪টি পদে জয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’। শীর্ষ দুই পদ—সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস)—উভয়েই পেয়েছেন শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয় পান ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান।
নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৬ জন। ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ। সে হিসাবে ভোট দিয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার ৮৮৫ জন। এখন পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে সাতবার। ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির পেয়েছিল প্রথম জয়। এরপর ১৯৯০ সালে হেরে যায় তারা। ফলে ৪৪ বছর পর আবার চাকসুর নেতৃত্বে ফিরল ছাত্রশিবির।
ছাত্রদল যেখানে পিছিয়েচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি ৫ সদস্যের, তাও দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ১১ আগস্টে ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই কমিটির মেয়াদ শেষ। কমিটির নেতারা হলেন কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি (বর্তমানে বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। এমনকি বিএনপি সরকারে থাকাকালেও (২০০১-০৬) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি ছাত্রদল। তখন শিবিরের প্রভাব ছিল প্রবল, পরে আসে ছাত্রলীগের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর উন্মুক্ত পরিবেশ ফিরে এলেও ছাত্রদল সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। হলে কোনো শক্ত অবস্থান তৈরি হয়নি। এমনকি প্রার্থী বাছাইয়েও দেখা গেছে মতবিরোধ ও অনৈক্য।
প্রাথমিক বিশ্লেষণে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অন্তত পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো প্রস্তুতির অভাব, সংগঠনের বিভাজন, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং যোগাযোগহীনতা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কার্যত বিভক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা অন্তত তিন ভাগে বিভক্ত। চাকসু নির্বাচনেও এক হতে পারেননি। যেমন ছাত্রদলের ৫ সদস্যের কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ। তিনি ছাত্রদল-মনোনীত প্যানেলের বাইরের এক প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এ ঘটনার পর তাঁকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এই নির্বাচনের জন্য আমাদের এক বছরের পরিকল্পনা ছিল। গত এক বছরে ৮ শতাধিক কর্মসূচি পালন করেছি। এর মধ্যে নবীনবরণ, বিতর্ক, আন্তর্জাতিক সেমিনার, গণ-ইফতার, কৃতী সংবর্ধনাসহ নানা কর্মসূচি ছিল। সবকিছুই ছিল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার অংশ।-সাঈদ বিন হাবিব, নবনির্বাচিত জিএস, চাকসুসাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কাঠামো গঠন করতে পারিনি। এখন আমাদের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
চাকসুতে বিজয়ী ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন (বাঁয়ে) ও জিএস সাঈদ বিন হাবিবউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র এক বছর সমর থ গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
১১ ব্যবসায়ীকে সম্মাননা দিল বিজিএপিএমইএ
সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য খাতে অবদান রাখায় ১১ জন ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীকে সম্মাননা দিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য সরবরাহকারী কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ। গত শনিবার রাতে ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিজিএপিএমইএর সাবেক চার সভাপতি সফিউল্লাহ চৌধুরী, রাফেজ আলম চৌধুরী, মো. আব্দুল কাদের খান এবং মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। মরণোত্তর সম্মাননা পেয়েছেন সংগঠনের সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণ–এর সাবেক সম্পাদক প্রয়াত তসলিম উদ্দিন চৌধুরী। তাঁর পক্ষে সম্মাননা নেন তাঁর মেয়ে তানিতা চৌধুরী।
এ ছাড়া সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য খাতে বিশেষ অবদান রাখায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন, ডায়নামিক প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুনির হোসেন, মনট্রিমসের পরিচালক আছাদুর রহমান সিকদার, গুড অ্যান্ড ফাস্ট প্যাকেজিং কোম্পানির এমডি জুয়াং লাইফেং সম্মাননা পেয়েছেন। এ ছাড়া বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন জেশান ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সিজের এমডি সাহাব উদ্দিন খান ও ব্যাংকর পাল্প অ্যান্ড পেপার করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট ইশারাত হোসেন।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান আ হ ম এহসান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার প্রমুখ।
তার আগে বিজিএপিএমইএর ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং ২০২৫ সালের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার। উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা, মো. মোবারক উল্লাহ মজুমদার, মোজাহারুল হক শহীদ প্রমুখ।
একসঙ্গে তিন বছরের এজিএম অনুষ্ঠানের কারণ হিসেবে বিজিএপিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগসহ নিয়মবহির্ভূত কিছু কারণে সঠিক সময়ে এজিএম করতে না পারার কারণে পরে হাইকোর্টের অনুমতিক্রমে তিনটি বার্ষিক সাধারণ সভা একসঙ্গে করতে হয়েছে।
বিজিএপিএমইএ জানায়, বিশেষ সাধারণ সভায় সংগঠনের বার্ষিক চাঁদা পুনর্নির্ধারণ, পরিচালনা পরিষদের সংখ্যা ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৭ জন (যার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য ৬ জন এবং ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের জন্য ২১) নির্ধারণসহ অন্যান্য কিছু সংশোধনীসহ সংঘ স্মারক ও সংঘবিধি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।