‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন’ প্রতিপাদ্যে জাপানে টানা ছয় মাস ধরে চলল ওসাকা এক্সপো–২০২৫। গত ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ মহা আয়োজনের পর্দা নেমেছে ১৩ অক্টোবর। ভবিষ্যতের নানা ধারণা নিয়ে এতে হাজির হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বড় বড় কোম্পানিগুলো। তারা দিয়েছিল আকর্ষণীয় সব প্যাভিলিয়ন। আয়োজক দেশ জাপানের প্যাভিলিয়নটিই ছিল সবচেয়ে বড়।

প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল—মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডের দেখা পাওয়া। শুধু তা–ই নয়, এর একটি টুকরা স্পর্শ করতে পারা!

প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে অমূল্য আরও দুটি উপাদান। একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে ইতোকাওয়া গ্রহাণু থেকে জাপানের মহাকাশযান হায়াবুসার প্রথমবারের মতো সংগ্রহ করা নমুনার অংশ। অন্যটি হচ্ছে জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা–২–এর রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে আনা নমুনা।

প্যাভিলিয়ন কেমন ছিল

মূলত মানবজাতির টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ চক্রাকার জীবনের ধারণাকে তুলে ধরেছিল এটি। থরে থরে সাজানো অসংখ্য জাপানি সিডারগাছের পাটাতনের বিশাল বৃত্তাকার এ প্যাভিলিয়ন। ক্রস–ল্যামিনেটেড কাঠ (সিএলটি) দিয়ে তৈরি এ পাটাতনগুলো। এক্সপো শেষ হওয়ার পরে জাপানজুড়ে বিভিন্ন ভবনে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে নকশা করা হয় এটি। বিখ্যাত জাপানি কোম্পানি নিকেন সেক্কেই লিমিটেড এর নকশাকার।

জাপানি অ্যান্টার্কটিক গবেষণা অনুসন্ধান দল ২০০০ সালের নভেম্বরে শোওয়া স্টেশন থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইয়ামাতো পর্বতমালার কাছে এ অসাধারণ উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পায়। প্রথম আবিষ্কার করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পোলার রিসার্চের (এনআইপিআর) অধ্যাপক নাওইয়া ইমায়ে। প্রায় ২৯ সেন্টিমিটার চওড়া ও সাড়ে ১৭ সেন্টিমিটার উঁচু রাগবি বলের মতো এ উল্কাপিণ্ডের রং সবুজ।

প্যাভিলিয়নটি তিনটি জোনে বিভক্ত ছিল—প্ল্যান্ট বা প্রক্রিয়াকরণ, ফার্ম বা খামার ও ফ্যাক্টরি বা কারখানা এলাকা। প্ল্যান্ট জোনে বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়। ফার্ম এলাকায় পানি পদার্থে পরিণত হয় এবং কারখানায় পদার্থ পণ্যে পরিণত হয়। এ চক্র নিয়ত চলমান। এটি একটি জীবন্ত প্যাভিলিয়ন। কারণ, সেখানে ঘটমান সবকিছু কেবল প্রদর্শনী নয়, বাস্তবও বটে। যেমন প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় রয়েছে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এক্সপোর সব বর্জ্য যেখানে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন অণুজীবের (মাইক্রোবিয়াল) ক্রিয়ায় সেই আবর্জনা পচে বায়োগ্যাসে রূপান্তরিত হয়।

এ বায়োগ্যাস থেকেই প্ল্যান্টটিকে চালানোর শক্তির জোগান দেওয়া হয়। অন্যদিকে এ পচনের প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহারযোগ্য। যে কার্বন ডাই–অক্সাইড ছিল এত দিন পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে মূল মাথাব্যথা, সেটিই এখন সম্পদে রূপান্তরিত করার একটি অভিনব উপায় তুলে ধরা হয়েছে এ প্যাভিলিয়নে। খাদ্যবর্জ্যের অণুজীবগত পচনের সময় উৎপাদিত কার্বন ডাই–অক্সাইডকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে উৎপন্ন হয় প্রাকৃতিক পচনযোগ্য (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিক, যা দিয়ে নির্মাণ করা যাবে বিভিন্ন জিনিস। এ রকমের একটি পাত্র প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে। আবার সেটি কীভাবে ভেঙে পানিতে মিশে যাচ্ছে, তারও একটি নমুনা আছে সেখানে।

ওসাকা এক্সপোর গ্র্যান্ড রিং.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উল ক প ণ ড

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানি প্যাভিলিয়নে মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ড, ছুঁয়ে দেখার সুযোগ

‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন’ প্রতিপাদ্যে জাপানে টানা ছয় মাস ধরে চলল ওসাকা এক্সপো–২০২৫। গত ১৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ মহা আয়োজনের পর্দা নেমেছে ১৩ অক্টোবর। ভবিষ্যতের নানা ধারণা নিয়ে এতে হাজির হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও বড় বড় কোম্পানিগুলো। তারা দিয়েছিল আকর্ষণীয় সব প্যাভিলিয়ন। আয়োজক দেশ জাপানের প্যাভিলিয়নটিই ছিল সবচেয়ে বড়।

প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি ছিল—মঙ্গল গ্রহের উল্কাপিণ্ডের দেখা পাওয়া। শুধু তা–ই নয়, এর একটি টুকরা স্পর্শ করতে পারা!

প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে অমূল্য আরও দুটি উপাদান। একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে ইতোকাওয়া গ্রহাণু থেকে জাপানের মহাকাশযান হায়াবুসার প্রথমবারের মতো সংগ্রহ করা নমুনার অংশ। অন্যটি হচ্ছে জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা–২–এর রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে আনা নমুনা।

প্যাভিলিয়ন কেমন ছিল

মূলত মানবজাতির টেকসই ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ চক্রাকার জীবনের ধারণাকে তুলে ধরেছিল এটি। থরে থরে সাজানো অসংখ্য জাপানি সিডারগাছের পাটাতনের বিশাল বৃত্তাকার এ প্যাভিলিয়ন। ক্রস–ল্যামিনেটেড কাঠ (সিএলটি) দিয়ে তৈরি এ পাটাতনগুলো। এক্সপো শেষ হওয়ার পরে জাপানজুড়ে বিভিন্ন ভবনে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে নকশা করা হয় এটি। বিখ্যাত জাপানি কোম্পানি নিকেন সেক্কেই লিমিটেড এর নকশাকার।

জাপানি অ্যান্টার্কটিক গবেষণা অনুসন্ধান দল ২০০০ সালের নভেম্বরে শোওয়া স্টেশন থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইয়ামাতো পর্বতমালার কাছে এ অসাধারণ উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পায়। প্রথম আবিষ্কার করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পোলার রিসার্চের (এনআইপিআর) অধ্যাপক নাওইয়া ইমায়ে। প্রায় ২৯ সেন্টিমিটার চওড়া ও সাড়ে ১৭ সেন্টিমিটার উঁচু রাগবি বলের মতো এ উল্কাপিণ্ডের রং সবুজ।

প্যাভিলিয়নটি তিনটি জোনে বিভক্ত ছিল—প্ল্যান্ট বা প্রক্রিয়াকরণ, ফার্ম বা খামার ও ফ্যাক্টরি বা কারখানা এলাকা। প্ল্যান্ট জোনে বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়। ফার্ম এলাকায় পানি পদার্থে পরিণত হয় এবং কারখানায় পদার্থ পণ্যে পরিণত হয়। এ চক্র নিয়ত চলমান। এটি একটি জীবন্ত প্যাভিলিয়ন। কারণ, সেখানে ঘটমান সবকিছু কেবল প্রদর্শনী নয়, বাস্তবও বটে। যেমন প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় রয়েছে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। এক্সপোর সব বর্জ্য যেখানে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন অণুজীবের (মাইক্রোবিয়াল) ক্রিয়ায় সেই আবর্জনা পচে বায়োগ্যাসে রূপান্তরিত হয়।

এ বায়োগ্যাস থেকেই প্ল্যান্টটিকে চালানোর শক্তির জোগান দেওয়া হয়। অন্যদিকে এ পচনের প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই–অক্সাইড ব্যবহারযোগ্য। যে কার্বন ডাই–অক্সাইড ছিল এত দিন পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে মূল মাথাব্যথা, সেটিই এখন সম্পদে রূপান্তরিত করার একটি অভিনব উপায় তুলে ধরা হয়েছে এ প্যাভিলিয়নে। খাদ্যবর্জ্যের অণুজীবগত পচনের সময় উৎপাদিত কার্বন ডাই–অক্সাইডকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে উৎপন্ন হয় প্রাকৃতিক পচনযোগ্য (বায়োডিগ্রেডেবল) প্লাস্টিক, যা দিয়ে নির্মাণ করা যাবে বিভিন্ন জিনিস। এ রকমের একটি পাত্র প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে। আবার সেটি কীভাবে ভেঙে পানিতে মিশে যাচ্ছে, তারও একটি নমুনা আছে সেখানে।

ওসাকা এক্সপোর গ্র্যান্ড রিং

সম্পর্কিত নিবন্ধ