তালেবান শাসকদের অবশ্যই ভারত–সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীকে দমন করতে হবে: পাকিস্তানি সেনাপ্রধান
Published: 18th, October 2025 GMT
আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির তালেবান শাসকদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানো ‘প্রক্সি সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তালেবান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শনিবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের অ্যাবোটাবাদ শহরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে পাসিং-আউট প্যারেডে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এ সময় সেনাপ্রধান মুনির আফগানিস্তানের জনগণের প্রতি ‘সহিংসতার পরিবর্তে পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তার’ পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান।
১৫২তম পিএমএ লং কোর্স, ৩৭তম টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েট কোর্স, ৭১তম ইন্টিগ্রেটেড কোর্স এবং ২৬তম লেডি ক্যাডেট কোর্সের পাসিং-আউট প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বলেন, কাবুলের তালেবান সরকারকে অবশ্যই তার ভূমি থেকে পরিচালিত এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সেনাপ্রধানের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন কয়েক দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এবং আজ তার মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের সংঘাতে কয়েক ডজন মানুষ নিহত এবং শত শত আহত হয়েছেন।
স্নাতক ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ফিল্ড মার্শাল মুনির দেশ সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সীমান্ত রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী জাতির পূর্ণ সমর্থন নিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবিচল সংকল্প, দৃঢ় বিশ্বাস ও পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে।
‘পবিত্র ভূমির এক ইঞ্চিও ছাড়ব না’
ভারতের সঙ্গে সংঘাতে কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বলেন, কৌশলগত অন্ধত্ব এবং ভুল পথে পরিচালিত আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা শত্রুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান আবারও বিজয়ী হয়েছে।
মে মাসের সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে আসিম মুনির বলেন, ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় করেছে।
ফিল্ড মার্শাল মুনির আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী অসাধারণ পেশাদারত্বের সঙ্গে সব হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করেছে। যেমন—রাফালের মতো উন্নত যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, এস–৪০০-এর মতো একাধিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে এবং বহুমাত্রিক যুদ্ধের সক্ষমতা দেখিয়েছে।’
ফিল্ড মার্শাল মুনির ভারতের দোষারোপ করার, নিরপেক্ষ তদন্ত এড়িয়ে যাওয়ার এবং ক্ষমতাসীন শাসনের স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের সমালোচনা করেন।
আফগান তালেবানের সীমান্তচৌকিতে ড্রোন থেকে মর্টার ফেলা হচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র ব হ ন আফগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন–কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেটসহ যাবতীয় কাজ শেষ করার আহ্বান
জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপন, সচিবালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এই সচিবালয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে বলেছে, জারি করা অধ্যাদেশের ধারা ১ (২)–এ উল্লেখ রয়েছে, ‘(২) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন সম্পন্ন ও ইহার কার্যক্রম পূর্ণরূপে চালু হওয়া সাপেক্ষে সরকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে, ধারা ৭–এর বিধানাবলি সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কার্যকর করিবে।’ অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আইন হলেও তা বাস্তবায়ন হওয়ার আগপর্যন্ত বিচারকদের বদলি, পদায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান–সংক্রান্ত বিষয় সরকারের অধীনই রয়ে গেছে। তাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তার মেয়াদের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে পৃথক সচিবালয় স্থাপন ও এর কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অন্যতম বন্দোবস্ত এবং ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ঐতিহাসিকভাবে আলোচিত হলেও তা বিভিন্ন কারণে এ দেশে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৯৯ সালে বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার রায়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হলেও কার্যত তা নির্বাহী বিভাগের অধীন থেকে যায়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আপামর জনগণ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হয়। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো তরুণ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইয়ং জাজেস ফর জুডিশিয়াল রিফর্ম’ তাদের ১২ দফা দাবি ঘোষণা করে। এর ১ নম্বর দফা ছিল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের প্রধান বিচারপতি সারা দেশের বিচারকদের সম্মুখে অভিভাষণের সময় স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যা বিচারকদের মনে অকৃত্রিম আশার সঞ্চার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর অফিশিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গত ১ বছরে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সব বিচারক এবং বিচার বিভাগ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে’
বিবৃতিতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে, যা এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।