দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) জন্য বৈদেশিক অনুদান কমছে। গত পাঁচ বছরে এই খাতে বৈদেশিক সহায়তার হার বাড়েনি। গবেষকদের আশঙ্কা, ২০২৩ সালের ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের অনুদান চলতি বছর ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছেন সুবিধাভোগী ও উন্নয়নকর্মীরা। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অনুদান কমার হার দেশের এনজিওগুলোর জন্য একটি সতর্কসংকেত। এনজিও খাতকে এখন থেকেই করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), সামাজিক উদ্যোগ, প্রবাসী অনুদান এবং স্থানীয় তহবিলের মতো অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পর্যটন করপোরেশন ভবনে ‘বৈশ্বিক ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অর্থায়ন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা উঠে আসে। সভায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর চলমান অর্থায়ন সংকট উত্তরণে সম্ভাব্য সমাধান, করণীয় ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। সভার আয়োজন করে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ, কাজেই বিদেশি দাতারা বলবেন নিজেদের টাকায় সহযোগিতা কার্যক্রম চালাতে। আর যাঁরা অনুদান দেবেন, তাঁরা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন দেখতে চাইবেন। তাই স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাশালীদের অবৈধ প্রভাব ও দখলদারির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, দাতা সংস্থাগুলোর তহবিল কমে আসছে, ফলে অনুদানের নতুন উৎস খুঁজে বের করতেই হবে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হতে পারেন একটি বড় ও সম্ভাবনাময় উৎস। তবে প্রবাসীরা আগ্রহী হলেও অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতায় পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি নিজের গ্রামের স্কুলে, হাসপাতালে বা স্থানীয় কোনো সামাজিক প্রকল্পে অর্থ পাঠাতে চান, তিনি তা সহজে পাঠাতে পারেন না। কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী অনুদান পাঠানোর জন্য একটি আইনি সত্তা থাকতে হয়।

এনজিও খাতের জন্য সংকটকে নতুন সুযোগ মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই সংকট এনজিওগুলোকে একাধিক স্তরে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। যার ফলে কাজের ধরনেও নতুনত্বের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে শিক্ষাকে বৈষম্য হ্রাসের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে—যার প্রধান এজেন্ডা ছিল, যারা শিক্ষার বাইরে আছে, তাদের শিক্ষার আওতায় আনা। কিন্তু ২০২৫ সালের বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশের পথে হাঁটছে, তখন এজেন্ডা হতে হবে মানসম্মত শিক্ষা।

সভায় প্যানেল আলোচক ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। প্রবন্ধে বাংলাদেশের এনজিও খাতের বর্তমান অবস্থা, বৈদেশিক অনুদান প্রবণতা এবং টেকসই অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক অনুদান প্রবণতা ২০২৩ সালের ৫.

৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালে ৪.৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদান হ্রাসে ৫০ হাজার উন্নয়নকর্মী চাকরি ঝুঁকিতে পড়েছেন।

সভায় সারা দেশে মাঠপর্যায়ে কাজ করা এনজিওগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের সুবিধাভোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। চাকরি হারাচ্ছেন উন্নয়নকর্মীরাও। সভার শুরুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। আরও বক্তব্য দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।

‘স্বতন্ত্র পরিচালকে’ আপত্তি

অনুষ্ঠানে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃক ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর ব্যাপারে আপত্তি জানান সভায় উপস্থিত বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, সরকারের নজরদারি অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু সেই নজরদারিটা একদমই সীমিত পর্যায়ে থাকা উচিত। এনজিওদের সাথে এমআরএ কর্তৃপক্ষের বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন বলেও সভায় আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনজ ও খ ত র চ লক অন দ ন র জন য প রব স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এনজিও খাতে বৈদেশিক সহায়তা কমছে

দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) জন্য বৈদেশিক অনুদান কমছে। গত পাঁচ বছরে এই খাতে বৈদেশিক সহায়তার হার বাড়েনি। গবেষকদের আশঙ্কা, ২০২৩ সালের ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের অনুদান চলতি বছর ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছেন সুবিধাভোগী ও উন্নয়নকর্মীরা। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অনুদান কমার হার দেশের এনজিওগুলোর জন্য একটি সতর্কসংকেত। এনজিও খাতকে এখন থেকেই করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), সামাজিক উদ্যোগ, প্রবাসী অনুদান এবং স্থানীয় তহবিলের মতো অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পর্যটন করপোরেশন ভবনে ‘বৈশ্বিক ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অর্থায়ন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা উঠে আসে। সভায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর চলমান অর্থায়ন সংকট উত্তরণে সম্ভাব্য সমাধান, করণীয় ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। সভার আয়োজন করে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ, কাজেই বিদেশি দাতারা বলবেন নিজেদের টাকায় সহযোগিতা কার্যক্রম চালাতে। আর যাঁরা অনুদান দেবেন, তাঁরা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন দেখতে চাইবেন। তাই স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাশালীদের অবৈধ প্রভাব ও দখলদারির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, দাতা সংস্থাগুলোর তহবিল কমে আসছে, ফলে অনুদানের নতুন উৎস খুঁজে বের করতেই হবে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হতে পারেন একটি বড় ও সম্ভাবনাময় উৎস। তবে প্রবাসীরা আগ্রহী হলেও অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতায় পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি নিজের গ্রামের স্কুলে, হাসপাতালে বা স্থানীয় কোনো সামাজিক প্রকল্পে অর্থ পাঠাতে চান, তিনি তা সহজে পাঠাতে পারেন না। কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসী অনুদান পাঠানোর জন্য একটি আইনি সত্তা থাকতে হয়।

এনজিও খাতের জন্য সংকটকে নতুন সুযোগ মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই সংকট এনজিওগুলোকে একাধিক স্তরে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। যার ফলে কাজের ধরনেও নতুনত্বের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে শিক্ষাকে বৈষম্য হ্রাসের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে—যার প্রধান এজেন্ডা ছিল, যারা শিক্ষার বাইরে আছে, তাদের শিক্ষার আওতায় আনা। কিন্তু ২০২৫ সালের বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশের পথে হাঁটছে, তখন এজেন্ডা হতে হবে মানসম্মত শিক্ষা।

সভায় প্যানেল আলোচক ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। প্রবন্ধে বাংলাদেশের এনজিও খাতের বর্তমান অবস্থা, বৈদেশিক অনুদান প্রবণতা এবং টেকসই অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক অনুদান প্রবণতা ২০২৩ সালের ৫.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালে ৪.৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদান হ্রাসে ৫০ হাজার উন্নয়নকর্মী চাকরি ঝুঁকিতে পড়েছেন।

সভায় সারা দেশে মাঠপর্যায়ে কাজ করা এনজিওগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতের সুবিধাভোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। চাকরি হারাচ্ছেন উন্নয়নকর্মীরাও। সভার শুরুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। আরও বক্তব্য দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।

‘স্বতন্ত্র পরিচালকে’ আপত্তি

অনুষ্ঠানে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) কর্তৃক ক্ষুদ্রঋণদাতা এনজিওতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর ব্যাপারে আপত্তি জানান সভায় উপস্থিত বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, সরকারের নজরদারি অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু সেই নজরদারিটা একদমই সীমিত পর্যায়ে থাকা উচিত। এনজিওদের সাথে এমআরএ কর্তৃপক্ষের বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন বলেও সভায় আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ