এবার জনগণই ভোট পাহারা দেবে: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 27th, October 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জনগণ বহু বছর পর স্বাধীনভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছে। তাই এবার জনগণই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। জনগণই ভোট পাহারা দেবে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে, মুখ্য হবে ভোটারদের ভূমিকা।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। একশনএইড বাংলাদেশ এবং প্রথম আলোর আয়োজনে এ গোলটেবিল বৈঠকটি হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে।
গোলটেবিল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অবশ্যই নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও জনগণই প্রধান অংশীজন। নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচন পরিচালনা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলা দেখে এবং সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্ব থাকে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে লক্ষ্যে বিএনপি যাবতীয় ভূমিকা রাখবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপির অঙ্গীকার ছিল ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পারলে এরপর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। এসব দফায় অনেকগুলো কমিশন গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। সেসব কমিশনের অনেকগুলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে। তবে সংস্কার কমিশনগুলোর মাধ্যমে যেসব বিষয় বেরিয়ে এসেছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়। সেজন্য বিএনপি দায়িত্ব পেলে ৩১ দফায় কমিশন গঠনের বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পুনরায় গঠন করা হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশন, বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনসহ বহু কমিশন করতে হবে। কমিশনগুলোর মধ্য দিয়ে যে সংস্কার আসবে, সেগুলো আগেই পাওয়া গেছে বলে ধরে নেওয়া হবে। এরপরও অনেক বেশি সংস্কার করতে হবে।
তখন সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করলে সেখানে সারা জাতির জন্য সেটা উন্মুক্ত থাকবে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব আহ্বান করা হবে। এখানে কোনো প্রস্তাব যদি জনগণের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় যেটা রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সেগুলো গ্রহণ করা হবে।
সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে এর আগে দেশের ৯টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক থেকে করা সুপারিশগুলো আজকের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ– এর উইমেন রাইটস লিড মরিয়মনেছা। গোলটেবিল বৈঠক পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ র জন ত ক গঠন কর র জন য র র জন ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ‘হল অব প্রাইডে’ বাংলাদেশ পুলিশ আয়োজিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‘কারাগার ঘোষণা’
আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এ দেশের আপামর জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। সবার প্রত্যাশা-বাংলাদেশ পুলিশ সামনের জাতীয় নির্বাচনে এমন এক মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশসহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
উপদেষ্টা বলেন, “আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়, ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়।’
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচনী মাঠে আপনারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নন; আপনারা জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সামনে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন, বিশেষ সুবিধা প্রদান ও গ্রহণ এবং নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী ভাবা যাবে না।”
উপদেষ্টা বলেন,“ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। তাছাড়া অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপরাধ ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেপ্তার বাড়াতে হবে। তবে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।”
ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও ট্রুপসদের পেশাদারিত্ব, টিম স্পিরিট, শৃঙ্খলা ও মনোবল বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অধীনস্থদের মধ্যে যাদের পেশাদারিত্ব নাই, শৃঙ্খলা নাই, কমান্ড মানতে চায় না, যারা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে চায়; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “জেলা পর্যায়ে ঘনঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার, মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।”
তিনি বলেন, “পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চকে আরো সক্রিয় করতে হবে। জেলার সকল বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে।”
“থানা থেকে লুট হওয়া বা হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে হবে। জেলার কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,“পুলিশের ওপর আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ