ফরিদপুরে মন্দিরের দেয়াল ভেঙে ঘণ্টা–টাকা চুরি
Published: 28th, November 2025 GMT
ফরিদপুর শহরে একটি মন্দিরের সামনের দেয়াল ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার ভোরে শহরের আলীপুর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। তবে মন্দিরে থাকা প্রতিমার কোনো ক্ষতি হয়নি।
মন্দির–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আজ ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ‘আলীপুর উদয়ন সংঘ সর্বজনীন দুর্গামন্দির’-এর সামনের দিকের দেয়াল ভেঙে চোরেরা মন্দিরের একটি ফ্যান, আনুমানিক ৯ কেজি ওজনের একটি পিতলের ঘণ্টা, গ্যাস সিলিন্ডার, দানবাক্সের টাকাসহ মন্দিরের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
আলীপুরে কবি জসীমউদ্দীন সড়কের দক্ষিণ পাশের ওই মন্দিরের অবস্থান। বেলা সাড়ে ১১টার দিক প্রঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক পাঁচ শতাংশ জমির প্রায় আড়াই শতাংশ জায়গাজুড়ে মন্দিরের পাকা ভবন। মন্দিরের সামনের দিকে মাঝামাঝি গ্রিলের দরজা। দরজার পাশে দুই দিকে তিন ফুট উঁচু করে দেয়ালের ওপর গ্রিল দেওয়া। মন্দিরের সামনের দরজার দক্ষিণ দিকে তিন ফুট দেয়ালের প্রায় ২০ ইঞ্চি জায়গা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে।
মন্দিরের পাশেই মঞ্জু দাসের বাড়ি। তিনি জানান, সকাল ৬টার দিকে তিনি মন্দির প্রাঙ্গণে এসে মন্দিরের দেয়াল ভাঙা দেখতে পান। পরে বিষয়টি তিনি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার গুহকে জানান।
অজিত কুমার গুহ জানান, মন্দিরটি শতবর্ষ পুরোনো। ২০১১ সালে এটি পাকা করা হয়। তিনি বলেন, মন্দিরে চুরির ঘটনা এর আগে ঘটেনি। ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে দেয়াল ভেঙে এ চুরির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অজ্ঞাত চোরেরা মন্দিরের বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করে নিয়ে গেলেও মন্দিরে থাকা প্রতিমার কোনো ক্ষতি করেনি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স মন র দ চ র র ঘটন মন দ র র
এছাড়াও পড়ুন:
আবুল সরকার: বিচার গানের এ কেমন বিচার
বিচার গান আমাদের সংস্কৃতির একটি অসাধারণ অঙ্গ। কোনো একটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ তর্কে মাতেন দুই পক্ষ, কথা বলেন, গান গান, প্রশ্নের উত্তর দেন, নতুন প্রশ্নও তোলেন। এভাবে আলাপে আলাপে শরিয়ত-মারেফত, জীবাত্মা-পরমাত্মা, নারী-পুরুষ, গুরু-শিষ্য—বিবিধ বিষয়ে শ্রোতারা পক্ষ আর বিপক্ষের যুক্তিগুলোর সাথে পরিচিত হন।
গুরুগম্ভীর তত্ত্বের আলাপ সেখানে যে ভঙ্গিতে উত্থাপিত হয়, সমবেতমণ্ডলী তাতে কখনো হেসে ফেলেন, কখনো গভীর চিন্তায় মগ্ন হন। গায়কেরা সেখানে চর্বিতচর্বণ উপস্থাপন করেন না, নতুন নতুন ভাবনার খোরাক দিতে না পারলে তিনি আকর্ষণ হারাবেন। ফলে মুখস্থ করা কথা আর রপ্ত করা সুর আদৌ যথেষ্ট না; সংগত কারণেই বিচারগানের কিংবদন্তিরা নিজেরাও একেকজন মৌলিক ভাবুক। গুরুর সঙ্গে থেকে থেকেই শিষ্যরা রপ্ত করেন তাঁদের কৌশল।
বিচারগান উপস্থাপন কৌশল যেমন, একই সঙ্গে তা বুদ্ধিবৃত্তিরও চর্চা। আরবি-ফারসি সংস্কৃত–ঐতিহ্য থেকে আসা পরিভাষা ও ভাবনার ছড়াছড়ি সেখানে—নিজের যুক্তি প্রতিষ্ঠায় তারা হাতড়ে বেড়ান তামাম দুনিয়া।
হাঙ্গামা যে লাগত না, তা নয়। সব চাইতে বেশি হাঙ্গামা শরিয়ত-মারেফত নিয়ে। শরিয়তে সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে একটা পর্যায়ের পর ভাবারও অনুমতি নেই ধর্মীয় নির্দেশনায়। কিন্তু এর পরও মানুষের মন কি মানে! ভাবনার এই প্রেরণাও তো অনেকে পান ধর্মগ্রন্থ থেকে।
জগতের অসীমতা উপলব্ধি করতে এই মানবিক সীমাবদ্ধতা নিয়েই অসীমের ভাড়ারে উঁকি দেয়ার যে চেষ্টা শতকের পর শতক ধরে বাংলার ভাবুকদের মধ্যে চলমান, বিচার গানে তারই ধারাটি বয়ে চলেছে। আবুল সরকার তাঁর গ্রেফতার হওয়ার দিনেও গানে গানে যখন বলেন—
‘দয়ালরে, ও দয়াময়
তুমি জুড়িয়াছ পুতুল খেলা
আমার তাতে কিসের জ্বালা
পরাজয় কি জয়ের মালা
পরাও তোমার মন মতন
তবে কেন দোষী আমি
ওহে প্রভু নিরঞ্জন’
এই গানের মাঝে সেই বিস্ময়ই আছে, যে বিস্ময়ে আরবের ‘জাবারিয়া’ আর ‘কাদারিয়া’রা মানবভাগ্য পূর্বনির্ধারিত কি না, নির্ধারিত হলে মানুষের পাপ–পুণ্যের বিচার কীভাবে সম্ভব—সেই তর্কগুলো করেছেন। ধর্মত্তত্ব, দর্শন ও জ্ঞানের এই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা চায় মানুষ, বিচার গানে আসলে চির অমীমাংসিত সেই বিষয়গুলো নিয়েই নিত্য আলোচনা হয়। তর্কযুদ্ধে প্রশ্নের ছলে পরস্পরকে ঠেস দেওয়া, শ্লেষ করা চলে, কখনো কখনো তর্ক চলে যায় উষ্মার পর্যায়ে—কিন্তু বহুবার দেখেছি দুই বিবদমান পক্ষ বিচার শেষে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন, প্রশংসা করেন, শ্রদ্ধা জানান।
দর্শক শ্রোতাদের মনেও কি এই তর্কশেষের মিলনের অনুভূতিটা গভীরভাবে কাজ করে না? অজস্র প্রশ্ন আর ভাবনা নিয়ে তারা বাড়ি ফেরেন, প্রশ্ন আর জবাবগুলো ছড়িয়ে দেন গ্রামান্তরে, নতুন নতুন প্রশ্ন আর জবাবও তৈরি করেন নিজের জন্য।
এই তো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিতে সহিষ্ণুতার ভিত্তি!
পালাগানের আসরে আবুল সরকার