আজ নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শাপলা কলিসহ বেশ কিছু প্রতীক সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে শাপলা কলি ছিল না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সমঝোতার পথে ট্রাম্প-সি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুই দেশের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ শান্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাজারকে নাড়া দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে তাঁদের মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানোর দাবি করেছেন ট্রাম্প ও সি। তাঁদের আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে কিছু শুল্ক কমানোর এবং চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজের সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ছয় বছর পর ট্রাম্পের সঙ্গে এটিই ছিল সির প্রথম সাক্ষাৎ। ট্রাম্প একে ‘মহান সাফল্য’ বলে অভিহিত করেন, আর চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে তাঁরা ‘গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে’ পৌঁছেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা ছিল এক অসাধারণ বৈঠক।’ তিনি সিকে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী দেশের অসাধারণ নেতা’ বলে প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করার কথাও জানান।

ট্রাম্প আরও বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে চীন অবিলম্বে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষিপণ্য কিনতে সম্মত হয়েছে। সয়াবিন কেনার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে ট্রাম্পের সমর্থনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বেইজিংয়ের জন্যও প্রভাব বিস্তারের উপায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, আলোচনার ফলে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ে এক বছরের চুক্তি হয়েছে। পরবর্তীকালে এ সময় বাড়ানো হবে। উল্লেখ্য, বিরল খনিজ উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে কাজে লাগে।

বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এক বছরের জন্য কিছু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যার মধ্যে বিরল খনিজও রয়েছে। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প বলেন, সব বিরল খনিজের বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।

সি বলেন, একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে এবং তিনি যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান।

ট্রাম্প আরও বলেন, চীনা নেতা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি প্রাণঘাতী ওপিওয়েড ফেন্টানিলের প্রবাহ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ফেন্টানিল বাণিজ্যে সহযোগিতার অভিযোগ করে আসছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘ফেন্টানিল আমদানি হওয়ার কারণে আমি চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলাম। বুসানে আলোচনায় সির বক্তব্যের ভিত্তিতে আমি সেটি ১০ শতাংশ কমাতে যাচ্ছি।’

দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ‘আলোচনার ফলাফল নিয়ে আমাদের কৃষকেরা খুবই খুশি হবেন।’ তিনি আরও বলেন, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে যার মধ্যে আলাস্কার তেল ও গ্যাসও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা শিগগিরই সেই জ্বালানি চুক্তি চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবেন।

ট্রাম্প বলেন, দুই পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি চিপের বিষয়ে আলোচনা করেছে, যার মধ্যে এনভিডিয়ার তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপও রয়েছে।

অংশীদার ও বন্ধু

ট্রাম্প ও সির বৈঠক হয় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। বৈঠক শেষে সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি দুই নেতা। বৈঠক শেষ হতেই ট্রাম্প সরাসরি এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠেন, হাত নাড়িয়ে ও মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে সমর্থকদের অভিবাদন জানান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর বিমান উড্ডয়ন করে। সিকে দেখা যায়, বৈঠককক্ষের বাইরে তাঁর লিমুজিনে উঠতে।

বৈঠক শুরু হওয়ার আগে সি স্বীকার করেন, দুই দেশের মধ্যে সব সময় মতের মিল হয় না, তবে তাদের উচিত অংশীদার ও বন্ধু হওয়ার জন্য চেষ্টা করা। সি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ দেশ হিসেবে দায়িত্ব যৌথভাবে বহন করতে পারে এবং দুই দেশ ও সমগ্র বিশ্বের কল্যাণে আরও বড় ও বাস্তব সাফল্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

দুই নেতা মুখোমুখি বসেছিলেন। তাঁদের পাশে ছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক উপস্থিত ছিলেন। বেইজিং থেকে সির দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং।

গৌরবময় সাফল্য

বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে ২১টি দেশের এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে। ওই সম্মেলনে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নেতারাও অংশ নেন।

এটি ছিল ট্রাম্পের এশিয়া সফরের শেষ গন্তব্য। এর আগে পাঁচ দিনের এশিয়া সফরে ট্রাম্প মালয়েশিয়া ও জাপান সফর করেছেন। ট্রাম্পের আশা ছিল, বুসানে ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি হবে; কিন্তু তা হয়নি। তবু ট্রাম্প বলেন, তাঁদের আবার দেখা হবে এবং তিনি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনার সমাধান করতে চান।

বৈঠকে সি তাইওয়ানের বিষয়টি তুলতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। বেইজিং হয়তো তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানোর জন্য চাপ দিতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। ট্রাম্প বলেন, তাইওয়ানের বিষয়টি ওঠেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ