Prothomalo:
2025-10-31@00:00:17 GMT

সমঝোতার পথে ট্রাম্প-সি

Published: 30th, October 2025 GMT

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুই দেশের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ শান্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাজারকে নাড়া দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে তাঁদের মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানোর দাবি করেছেন ট্রাম্প ও সি। তাঁদের আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে কিছু শুল্ক কমানোর এবং চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজের সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ছয় বছর পর ট্রাম্পের সঙ্গে এটিই ছিল সির প্রথম সাক্ষাৎ। ট্রাম্প একে ‘মহান সাফল্য’ বলে অভিহিত করেন, আর চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিরোধ মেটাতে তাঁরা ‘গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যে’ পৌঁছেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা ছিল এক অসাধারণ বৈঠক।’ তিনি সিকে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী দেশের অসাধারণ নেতা’ বলে প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করার কথাও জানান।

ট্রাম্প আরও বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে চীন অবিলম্বে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন ও অন্যান্য কৃষিপণ্য কিনতে সম্মত হয়েছে। সয়াবিন কেনার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে ট্রাম্পের সমর্থনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বেইজিংয়ের জন্যও প্রভাব বিস্তারের উপায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, আলোচনার ফলে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ে এক বছরের চুক্তি হয়েছে। পরবর্তীকালে এ সময় বাড়ানো হবে। উল্লেখ্য, বিরল খনিজ উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে কাজে লাগে।

বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এক বছরের জন্য কিছু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যার মধ্যে বিরল খনিজও রয়েছে। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প বলেন, সব বিরল খনিজের বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।

সি বলেন, একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে এবং তিনি যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান।

ট্রাম্প আরও বলেন, চীনা নেতা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি প্রাণঘাতী ওপিওয়েড ফেন্টানিলের প্রবাহ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ফেন্টানিল বাণিজ্যে সহযোগিতার অভিযোগ করে আসছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘ফেন্টানিল আমদানি হওয়ার কারণে আমি চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলাম। বুসানে আলোচনায় সির বক্তব্যের ভিত্তিতে আমি সেটি ১০ শতাংশ কমাতে যাচ্ছি।’

দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ‘আলোচনার ফলাফল নিয়ে আমাদের কৃষকেরা খুবই খুশি হবেন।’ তিনি আরও বলেন, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে যার মধ্যে আলাস্কার তেল ও গ্যাসও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা শিগগিরই সেই জ্বালানি চুক্তি চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবেন।

ট্রাম্প বলেন, দুই পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি চিপের বিষয়ে আলোচনা করেছে, যার মধ্যে এনভিডিয়ার তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপও রয়েছে।

অংশীদার ও বন্ধু

ট্রাম্প ও সির বৈঠক হয় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। বৈঠক শেষে সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি দুই নেতা। বৈঠক শেষ হতেই ট্রাম্প সরাসরি এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠেন, হাত নাড়িয়ে ও মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে সমর্থকদের অভিবাদন জানান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর বিমান উড্ডয়ন করে। সিকে দেখা যায়, বৈঠককক্ষের বাইরে তাঁর লিমুজিনে উঠতে।

বৈঠক শুরু হওয়ার আগে সি স্বীকার করেন, দুই দেশের মধ্যে সব সময় মতের মিল হয় না, তবে তাদের উচিত অংশীদার ও বন্ধু হওয়ার জন্য চেষ্টা করা। সি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ দেশ হিসেবে দায়িত্ব যৌথভাবে বহন করতে পারে এবং দুই দেশ ও সমগ্র বিশ্বের কল্যাণে আরও বড় ও বাস্তব সাফল্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

দুই নেতা মুখোমুখি বসেছিলেন। তাঁদের পাশে ছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক উপস্থিত ছিলেন। বেইজিং থেকে সির দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও ও উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং।

গৌরবময় সাফল্য

বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে ২১টি দেশের এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে। ওই সম্মেলনে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নেতারাও অংশ নেন।

এটি ছিল ট্রাম্পের এশিয়া সফরের শেষ গন্তব্য। এর আগে পাঁচ দিনের এশিয়া সফরে ট্রাম্প মালয়েশিয়া ও জাপান সফর করেছেন। ট্রাম্পের আশা ছিল, বুসানে ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি হবে; কিন্তু তা হয়নি। তবু ট্রাম্প বলেন, তাঁদের আবার দেখা হবে এবং তিনি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনার সমাধান করতে চান।

বৈঠকে সি তাইওয়ানের বিষয়টি তুলতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। বেইজিং হয়তো তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানোর জন্য চাপ দিতে পারেন, এমন জল্পনা ছিল। ট্রাম্প বলেন, তাইওয়ানের বিষয়টি ওঠেনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ট র ম প বল ন র ব ষয়ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

তিন জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ও শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনটি পৃথক জরিপে মামদানিকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের বুধবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, দুজনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। মামদানি কুমোর চেয়ে মাত্র ১০ শতাংশ এগিয়ে। মামদানির সমর্থন ৪৩ শতাংশ আর কুমোর ৩৩ শতাংশ। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার সমর্থন ১৪ শতাংশ।

কয়েক সপ্তাহ আগের জরিপে মামদানির সমর্থন ছিল ৪৬ শতাংশ, কুমোর ৩৩ শতাংশ। তবে মেয়র এরিক অ্যাডামস নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর কুমোর অবস্থান কিছুটা শক্ত হয়েছে।

কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেরি স্নো বলেন, ‘জোহরান মামদানি বর্তমানে অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে আছেন, কার্টিস স্লিওয়ার অনেক পিছিয়ে। তবে এখনো একটি অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে যাঁরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, তাঁদের হার কুমোর ক্ষেত্রে কিছুটা বেড়েছে, যা শেষ মুহূর্তে ফল পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করছে।’

তবে এমারসন কলেজ, পিক্স ১১ ও দ্য হিলের যৌথ জরিপে দেখা গেছে, মামদানি স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর চেয়ে অনেক বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যকার ব্যবধান ২৫ শতাংশ। এই জরিপে মামদানি পেয়েছেন ৫০ শতাংশ সমর্থন, কুমো ২৫ শতাংশ।

ওই জরিপ অনুযায়ী, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ২১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন, যা মামদানিবিরোধী ভোটকে কুমো ও স্লিওয়ার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছে। স্লিওয়ার সমর্থন অন্য জরিপগুলোর তুলনায় বেশি।

গত মাসে এমারসন কলেজের আগের জরিপের তুলনায় মামদানির সমর্থন ৭ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে মামদানির সমর্থন ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে কুমোর সমর্থন ৩ শতাংশ কমে ২৫ শতাংশে নেমেছে। স্লিওয়ার সমর্থন দ্বিগুণ বেড়ে ১০ থেকে ২১ শতাংশ হয়েছে।

ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে কুমোকে পরাজিত করার পর কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে জোহরান মামদানির সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাঁর সমর্থন ৫০ শতাংশ থেকে লাফিয়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটারগোষ্ঠীর দৃঢ় সমর্থন প্রতিফলিত করে। এদিকে মারিস্ট ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক ওপিনিয়নের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, মামদানি কুমোর চেয়ে ১৬ শতাংশ এগিয়ে আছেন তাঁদের সমর্থন যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ ও ৩২ শতাংশ। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১৬ শতাংশ ভোটারের সমর্থন।

তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় মামদানি

মারিস্ট জরিপে দেখা গেছে, ৪৫ বছরের নিচের তরুণ ভোটারদের মধ্যে জোহরান মামদানির বিপুল জনপ্রিয়তা। এই গোষ্ঠীতে তাঁর সমর্থন ৬৪ শতাংশ, যেখানে কুমোর পক্ষে মাত্র ২১ শতাংশ। তবে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্ব ভোটারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হাড্ডাহাড্ডি। কুমোর সমর্থন ৩৯ শতাংশ এবং মামদানি ৩৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। উদারপন্থী ভোটারদের মধ্যে মামদানি বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও মধ্যপন্থী ভোটারদের মধ্যে কুমো সামান্য এগিয়ে। অন্যদিকে রক্ষণশীল ভোটারদের ৪৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া—যা মামদানি ও কুমোর চেয়েও বেশি।

ইহুদি ভোটারদের সমর্থন ধরে রেখেছেন মামদানি

আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগেই জোহরান এমন এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের পথে হাঁটছেন, যেখানে একদিকে রয়েছে তাঁর দীর্ঘদিনের ইসরায়েলবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান, অন্যদিকে তিনি বিশাল ইহুদি জনগোষ্ঠীর সমর্থন আদায়েও কাজ করে যাচ্ছেন। জোহরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে একাধিক প্রগতিশীল ইহুদি সংগঠন। যেমন বেন্ড দ্য আর্ক, জিউইশ ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) অ্যাকশন এবং জিউস ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস (জেএফআরইজে)। এসব সংগঠন প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের ভূমিকার সমালোচনা করেছে এবং জোহরানের প্রচারে মাঠে নেমেছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে বসবাসরত ইহুদি ভোটারদের মধ্যে জোহরান মামদানিই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। গত জুলাইয়ে জেনিথ রিসার্চ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, জোহরান ইহুদি ভোটারদের মধ্যে ১৭ শতাংশ এগিয়ে আছেন। বর্তমানে এখনো তাঁর সমর্থন ১০ শতাংশ বেশি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ