লালমনিরহাটের আদিতমারীতে এনজিও কর্মীকে ধর্ষণচেষ্টার মামলায় এক বিএনপি নেতা ও তাঁর সহযোগীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া রিপন (৪২) পশ্চিম ভেলাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভেলাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং স্থানীয় উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আরেক অভিযুক্ত চান মিয়া (৪৩) পার্শ্ববর্তী তালুক দুলালী গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার বাদী ওই এনজিও কর্মী এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। এই সময় স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে বিয়ে করতে রাজি হননি ওই ব্যক্তি। বিয়ের দাবিতে তিনি ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাঁকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাঁর সহযোগী চান মিয়ার বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন। চান মিয়ার বাড়িতে অবস্থানকালে গোলাম কিবরিয়া প্রথম রাতে এবং পরের রাতে চান মিয়া তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। গতকাল বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা লালমনিরহাটের আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত তা নামঞ্জুর করে লালমনিরহাটের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে নাজুক ‘যুদ্ধবিরতি’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠককে ‘অসাধারণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বৈঠককে ১০-এর মধ্যে ‘১২’ নম্বরও দিয়েছেন। তবে বিশ্লেষকেদের চোখে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে দুই নেতার এই সমঝোতা বা চুক্তি আসলে একধরনের নাজুক ‘যুদ্ধবিরতি’, যার মূল সমস্যাগুলো এখনো অমীমাংসিত।

গতকাল বৃহস্পতিবার যে কাঠামোতে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন চীন কেনা আবার শুরু করবে, বিরল খনিজ রপ্তানিতে এক বছরের জন্য নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ কমাবে—তা কার্যত দুই দেশের সম্পর্ককে ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’ অভিযান-পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প লিবারেশন ডে ঘোষণা করে চীনের ওপর বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচনা দাবি করেন।

বুসানের বৈঠকের পর ওয়াশিংটন যা চায় এবং বেইজিং যা দিতে প্রস্তুত, তার মৌলিক অমিল পাওয়া যাচ্ছে। আলোচনায় ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের মূল কারণগুলো যেমন চীনের শিল্পনীতি, অতিরিক্ত উৎপাদন এবং রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি মডেল—এসব বিষয় অনুপস্থিত ছিল।

নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক এমিলি কিলক্রিজ বলেন, ‘আসলে আমরা কী নিয়ে কথা বলছি? আমরা বলছি, দুই পক্ষের নেওয়া পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ কমানোর ব্যাপারে।’ বৈঠকের ফলাফলে দেখা যায়, সি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মোকাবিলায় নতুন এক বাস্তববাদী পদ্ধতি নিয়েছেন। যেখানে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মতো নানা হাতিয়ার প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, চীনা প্রতিনিধিদলের প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত ছিল। তারা জানত এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন আসবে না। তবে ট্রাম্পের ইতিবাচক মনোভাব ও বৈঠকটিকে ‘জি-টু’ বা দুই পরাশক্তির বৈঠক হিসেবে উপস্থাপন করা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট ছিল।

কর্মকর্তা আরও বলেন, বেইজিং এই বৈঠককে বৃহত্তর এক আলোচনার সোপান হিসেবে দেখছে, যার মাধ্যমে দুই দেশ সম্পর্ক স্থিতিশীল করার সুযোগ পাবে।

বিশ্বমানের নেতা

দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর দুই নেতার উষ্ণ বৈঠক এবং আগামী বছর ট্রাম্পের বেইজিং সফরের প্রতিশ্রুতি ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে বাণিজ্যযুদ্ধের মাঝে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

এপেক সম্মেলনের আগে বৈঠক শুরুর সময় সি বলেন, চীনের উন্নয়ন ও পুনরুত্থান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকাকে আবার মহান করার লক্ষ্যবিরোধী নয়।

সি আরও বলেন, ‘আমি ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চাই, যাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য দৃঢ় ভিত্তি তৈরি হয় এবং দুই দেশের উন্নয়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।’

বৈঠক শেষে ট্রাম্প উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তিনি সিকে এক মহান দেশের মহান নেতা বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘দুই বিশ্বশক্তির এমনভাবেই পরস্পরের সঙ্গে আচরণ করা উচিত।’

সাংহাইভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্লেনামের অংশীদার বো ঝেংইয়ান বলেন, ‘সীমিত সময়ের মধ্যে এই চুক্তি ও এর কাঠামো দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের একটি উপায় হিসেবে কাজ করছে। এতে তারা ধীরে ধীরে পারস্পরিক স্বার্থ সামঞ্জস্য করতে পারে এবং আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সুযোগ পাবে।’

কঠিন পরিস্থিতি

এই চুক্তি উভয় পক্ষকেই কিছুটা সময় দিচ্ছে। এপ্রিলের বেইজিং সফরের আগে ট্রাম্প যেমন কূটনৈতিক সাফল্য পেলেন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেলেন। তবে এই কৌশলগত যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণ নয়। চীনের সাম্প্রতিক বিরল খনিজ রপ্তানির লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ কেবল বিলম্বিত হয়েছে, বাতিল নয়। আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলো এখনো কাঁচামাল সরবরাহের অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

ট্রিভিয়াম চায়নার ভূরাজনীতি বিশ্লেষক জো মাজুর বলেন, ‘এই বছর আমরা দেখেছি চীনের “আগে আঘাত নয়, পরে প্রত্যাঘাত” কৌশল পুরোপুরি সফল হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিষ্কার, বিরল খনিজই চীনের মূল প্রভাবের অস্ত্র, যার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলনীয় কোনো শক্তি বা বিকল্প নেই।’

চিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কৌশল কেন্দ্রের পরিচালক দা ওয়েই সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এমন উত্তেজনা বারবার বাড়তে থাকে, তবে দুই নেতার ব্যক্তিগত ধৈর্য ও আস্থাও ফুরিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে আমরা এক অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ