যবিপ্রবিতে বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
Published: 30th, October 2025 GMT
ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পাঠদান, গবেষণা, অনলাইন ক্লাস ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক আবহাওয়া বা সামান্য বাতাস হলেই ক্যাম্পাস এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বন্ধের দিনে এ ভোগান্তি আরো চরম আকার ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
স্নাতকের শেষ দিনে জবি শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী আয়োজন
জকসুতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়া করেছে প্রশাসন: ছাত্রদল
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের দিনে একাডেমিক ভবন ও জেনারেল ল্যাবগুলোতে জেনারেটর সেবা চালু না থাকায় গবেষণা কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো ক্যাম্পাস অন্ধকারে ঢেকে যায়। এতে তাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।
এ বিষয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আসিফ ইসলাম বলেন, “গত ২-৩ বছরের তুলনায় এ বছর যবিপ্রবিতে লোডশেডিং উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে আগাম নোটিশ দিলেও বাস্তবে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিশেষ করে রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ১–২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনা ও বিশ্রাম উভয়ই ব্যাহত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলাকালে সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিস্মিত হন। আশ্চর্যের বিষয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যুৎ চলে গেলেও, শেষ মুহূর্তে হঠাৎ ফিরে আসে—যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। অনুষ্ঠানটি জেনারেটরের সাহায্যে সম্পন্ন হলেও, আবাসিক হলগুলোতে তখনো বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।”
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা.
তিনি বলেন, “অনেকে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এমনকি কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই বিঘ্নিত করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ মূলত পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের হাতে। আমাদের নিজস্ব সাবস্টেশন থাকলেও বিদ্যুতের উৎস সেখান থেকেই আসে। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।”
তিনি বলেন, “যেহেতু বিদ্যুতের লাইনগুলো গ্রামের মধ্য দিয়ে আসে, তাই সামান্য বাতাস বা গাছপালা পড়ে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংযোগ ঠিক না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয় না।”
“সব ভবনে জেনারেটর নেই। যেসব ভবনে জেনারেটর আছে, সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা ব্যাকআপ দিয়ে থাকি,” যোগ করেন প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত, বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে দৈনিক ৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ২০২২ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি তাদের সর্বোচ্চ তেল আমদানি।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত এড়াতে ভারত যে কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে, এটি তারই অংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যঘাটতি–সংক্রান্ত উদ্বেগও আমলে নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তেল আমদানি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত তেল আমদানি বাড়িয়েছে, কেননা সেখান থেকে তেল আমদানি করা ভারতের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এর নানা কারণ আছে। প্রথমত, ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের মধ্যে দামের যে ব্যবধান, সেই কারণে ডব্লিউটিআই ক্রুড কেনা ভারতের জন্য লাভজনক হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে থেকে চীনের তেল কেনা কমেছে। ফলে মার্কিন তেল কেনা ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলোর জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে।
কেপলারের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দৈনিক তেল আমদানির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ব্যারেলে উত্তীর্ণ হতে পারে। আগামী নভেম্বর মাসের জন্য যে পূর্বাভাস, তাতে এই পরিমাণ ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অক্টোবর মাসের আগপর্যন্ত দৈনিক গড়ে প্রায় ৩ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে ভারত, সেই তুলনায় এই বৃদ্ধি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
ভারতের সরকারি ও বাণিজ্য কর্মকর্তাদের হিসাব অনুসারে, ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বাড়াতে মার্কিন অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়েছে। এই তেলের মধ্যে আছে মিডল্যান্ড ডব্লিউটিআই ও মার্স। তবে অর্থনৈতিক কারণ যতই বলা হোক না কেন, এর পেছনে আছে মূলত রাজনৈতিক কারণ। সেটা হলো, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়ানো।
এই কৌশলগত পরিবর্তন এমন সময়ে এল, যখন রুশ তেল কোম্পানি রুজনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও তীব্র হচ্ছে।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়ানোর এ ঘটনা বাণিজ্যিক টানাপোড়েন দূর করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যখন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন থেকেই এই পরিবর্তন দেখা গেছে। ভারতের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, ভারত নিজের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও রুশ তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রশমনের কৌশলগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বলেছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করবে। যদিও ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়লেও রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী, দেশটির মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে রাশিয়া থেকে। সরবরাহের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক, তৃতীয় স্থানে সৌদি আরব।
কেপলারের বিশ্লেষক ঋতোলিয়া এই প্রবণতার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন তেল কেনা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভারতীয় তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বহুমুখী করেছে, তা ঠিক। এর মধ্য দিয়ে তারা দেখিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি সুযোগ কাজে লাগানোর সক্ষমতাও তাদের আছে। কিন্তু বিষয়টি কাঠামোগত নয়, শুধু দামের পার্থক্যের কারণে তা হয়েছে। দীর্ঘ পরিবহন সময়, বাড়তি ভাড়া ও ডব্লিউটিআই তেলের গড়নের কারণেও ভারতের পক্ষে এই তেল কেনা তেমন একটা সম্ভব হবে না।
ঋতোলিয়া আরও বলেন, ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের হিস্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের জ্বালানি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পাশাপাশি ভারতের জ্বালানি সরবরাহের বহুমুখীকরণ কৌশল শক্তিশালী হচ্ছে। দেশটি সরবরাহ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য সমানভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে বলেই মনে হয়।