ভারতজুড়ে শুরু হওয়া ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন ‘এসআইআর’ আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে প্রাণ গেলো আরো এক ব্যক্তির। এই নিয়ে গত তিন দিনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনজন। যাদের একজনকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হলেও দুজনের মৃত্যু ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের তোলাপাড়া এলাকায়। যদিও বীরভূম জেলার ইলামবাজারে অবস্থিত তার মেয়ের বাসায় আত্মহত্যা করেন ক্ষিতীশ চন্দ্র মজুমদার নামে ৯৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় শোকের ছায়া নিয়ে এসেছে এলাকায়।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই ক্ষিতীশ মজুমদারের। কার্যত তখন থেকেই মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। তার আশঙ্কা ছিল নাম না থাকার কারণে এসআইআর শুরু হলে তাকে হয়তো দেশ থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে। অবশ্য ২০০২ সালের পরবর্তী ভোটার তালিকাগুলিতে তার নাম ছিল।

ক্ষিতীশের কন্যা পুতুল বিশ্বাস বলেন, “চারপাশে এনআরসি এবং এসআইআর নিয়ে যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে তা গ্রাস করেছিল আমার বাবাকেও। যদিও এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতেন না। অধিকাংশ সময় মনমরা হয়ে থাকতেন। সেই থেকেই তার মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।  যা থেকে এই ভয়ঙ্কর পরিণতি।”  

ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের মেদিনীপুরের বিধায়ক ও দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা সব দলের শীর্ষ নেতারা ওই ব্যাক্তির বাড়িতে যান।

স্থানীয় সুত্র জানিয়েছে, ক্ষিতীশ মজুমদার ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে মেদিনীপুর পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডের তোলাপাড়া এলাকায় বসবাস করছিলেন। সেখানে নিজের বাড়িও করেছেন। সেখানে থাকতেন ছেলে ও নাতি-নাতনি। 

নাতনি হিরুবালা মজুমদার জানান তার দাদুর ভোটার কার্ড ছিল না। অতি সম্প্রতি সেই ভোটার কার্ড তৈরি হয়। দাদুর মত তার পরিবারের অন্য সদস্যরা যথেষ্ট আতঙ্কিত আর এই ঘটনা নিয়ে।

উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) আতঙ্কে গত মঙ্গলবারই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মহাজাতি নগর এলাকায় একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ওইদিন সকালবেলায় নিজের ঘর থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয় প্রদীপ কর নামে ৫৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির। এই ঘটনায় যথেষ্ট চঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। গত বুধবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বুড়িরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জিতপুর গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল শেখ। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় খাইরুল শেখ’ এর পরিবর্তে রয়েছে ‘খইরুল শেখ’। ফলে খাইরুল ও খইরুল- নাম বিভ্রাটে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। 
 

সুচরিতা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক য ওই ব য আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২ রাজ্যে এসআইআরের ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে দ্বিতীয় দফায় ১২টি অঞ্চলে এসআইআর-এর দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। তালিকায় রয়েছে সেই সব রাজ্য, যেখানে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।

এর আগে, প্রথম পর্যায়ে ভারতের বিহারে এসআইআর ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সোমবার বিকেলে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে প্রথম দফার এসআইআর।

আরো পড়ুন:

সিনেমাটির ভরাডুবি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে: অনুপমা

আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে চিরঞ্জীবীর মামলা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানান, দ্বিতীয় দফায় এসআইআর হবে- পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পুদুচেরি, আন্দামান-নিকোবর, গোয়া, গুজরাট, তামিলনাড়ু, লাক্ষাদ্বীপ এবং কেরালায়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক যোশীও।

ভোটার তালিকা সংশোধনের মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি হলো- বেআইনি বিদেশি অভিবাসীদের নাম চিহ্নিত ও অপসারণ করা। এজন্য ভোটারদের জন্মস্থান যাচাই করার কাজেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে আগত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে এই সংশোধন প্রক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

দেশের মধ্যে প্রথম বিহারে এসআইআর করে কমিশন। সেই সময় কমিশন জানিয়েছিল, গোটা দেশে ধাপে ধাপে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হবে। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু করে কমিশন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বুথ লেভেল কর্মকর্তাদের। পশ্চিমবঙ্গে শেষবার ২০০২ সালে এসআইআর হয়েছিল।

আগামী বছর শুরুর দিকে যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে আসামে আপাতত এসআইআর হচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দাবি, আসামের এনআরসির কাজ প্রায় শেষের দিকে। পরবর্তীতে সেখানে হবে এসআইআর।

বিহারে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে। সেখানে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় প্রায় ৭ কোটি ৪২ লাখ নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রাজ্যটির বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ দুই দফায় হবে- ৬ ও ১১ নভেম্বর, ভোটগণনা হবে ১৪ নভেম্বর। স্থানীয় নির্বাচনের কারণে ভারতের কিছু রাজ্যে দেরিতে এসআইআর শুরু করা হবে জানা গেছে।

এসআইআর নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে প্রথম থেকেই নিশানা করছে বিরোধী দলগুলো। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, বিহারে আরজেডি, উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর ডিএমকে এসআইআরের বিরোধিতা করেছে। এর আগে বিহারে এসআইএর নিয়ে তুমুল ঝামেলা দেখা যায় বিজেপি ও বিরোধীদের মধ্যে। বিহারে এসআইআর-এর পরে তালিকা থেকে বাদ গিয়েছিল ৬৫ লাখ নাম।

এসআইআর-এর পদ্ধতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলছে। বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করার অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা। যদিও সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেন, বিহারে এসআইআর- এর বিরোধিতা করে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে মর্মান্তিক ঘটনা
  • পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ১২ রাজ্যে এসআইআরের ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের