কোনো এক দেশে সাঁওতালদের এক রাজা ছিল। নামটি তার অন্য রকম। তখভন। সে তার রানিকে অসম্ভব ভালোবাসত। রানি যখন যা চাইত, তা–ই নিয়েই হাজির হতো রাজা। রানির মুখ কালো, তো রাজারও মন খারাপ। কোনো কাজেই মন বসত না তখন। এমন রানিপাগল রাজাকে নিয়ে প্রজারা খুব হাসাহাসিও করত। তবু রাজাই ওই রাজ্যের সব। প্রজারাও তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করত।
রাজার এত ভালোবাসার পরও রানির ছিল এক গোপন প্রেমিক। রানি প্রেমিকের সঙ্গে গোপনে প্রণয়বন্ধনেও আবদ্ধ হতো। ওই প্রেমিক থাকত বনের নির্দিষ্ট একটা দিকে, সর্পরাজের বেশ ধরে। কাউকে দেখলেই সে সাপের রূপ নিত। ফলে সাপের ভয়ে ওই দিকে কেউ যাওয়ারও সাহস করত না। শুধু রানি যেত ওই জায়গায়।
রাজা যখন বনের ভেতর শিকারে বের হতো, রানি তখন তাকে জঙ্গলের ওই বিশেষ দিকে যেতে সব সময় নিষেধ করত। সাপের ভয়ের কথাও বারবার বলত।
একবার শিকারে গিয়ে রাজা কৌতূহলবশত ওই বিশেষ দিকে প্রবেশ করে। টের পেয়ে ওই প্রেমিক তখনই সাপের বেশ ধরে। রাজা অবাক হয়ে দেখতে পায় সর্পরাজকে। নিজের প্রাণ যাবে ভেবেই সে তির দিয়ে ওই হিংস্র সর্পরাজকে মেরে ফেলে।
শিকার থেকে ফিরে রাজা ঘটনাটি রানিকে খুলে বলে। সর্পরাজরূপী প্রেমিকের মৃত্যুর খবর শুনে ভেতরে ভেতরে রানি বেশ কষ্ট পায়। সে প্রেমিক হত্যার বদলা নিতে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
রানির ছিল এক গোপন প্রেমিক। রানি প্রেমিকের সঙ্গে গোপনে প্রণয়বন্ধনেও আবদ্ধ হতো। ওই প্রেমিক থাকত বনের নির্দিষ্ট একটা দিকে, সর্পরাজের বেশ ধরে। কাউকে দেখলেই সে সাপের রূপ নিত। ফলে সাপের ভয়ে ওই দিকে কেউ যাওয়ারও সাহস করত না। শুধু রানি যেত ওই জায়গায়।রাতের আঁধারে জঙ্গলে গিয়ে রানি সেখান থেকে সর্পরাজের হাড়গোড় কুড়িয়ে এনে রাজবাড়ির বাগানের একটি অংশে পুঁতে রাখে।
দিন কেটে যায়। বৃষ্টি ও রোদের ছোঁয়ায় কিছুদিন পর ওই জায়গায় জন্ম নেয় অদ্ভুত ধরনের একটি গাছ। গাছটিতে একসময় একটি আধফোটা ফুলও ফোটে। ওই ফুলের ভেতর থেকে বের হয় বিশেষ ধরনের আলো। সে আলোয় আলোকিত হয় গোটা বাগান। সেই আলো দেখতে প্রতিদিনই রানি ঘুরে বেড়ায় বাগানে।
ধীরে ধীরে রানি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে নানা পরিকল্পনা আঁটে। কৌশলে রাজার সঙ্গে একবার সে মেতে ওঠে সর্বনাশা বাজির খেলায়। সেটা দেখতে গোটা রাজ্যের মানুষ জড়ো হয়।
কী সেই বাজি?
রাজাকে তার বাগানের সব ফুলের নাম বলতে হবে। অন্যথায় রানির হুকুমে প্রজারা রাজার প্রাণদণ্ড দেবে। রানির কথা শুনে রাজা মুচকি হাসে! নিজের বাগানের ফুলের নাম বলা খুবই সহজ। এমনটা ভেবেই আত্মবিশ্বাসী রাজা বাজিতে রাজি হয়।
অতঃপর গ্রামে গ্রামে ঢোল পিটিয়ে এ খবর সর্বত্র জানিয়ে দেওয়া হলো। নির্দিষ্ট দিনে রাজ্যের প্রজারা বাজির খেলা দেখার জন্য রাজপ্রাসাদের বাগানে উপস্থিত হয়। রাজাও তখন বাগানে ঘুরে বেড়ায়। একে একে ফুলের নামও বলতে থাকে। কিন্তু অদ্ভুত ওই আধফোটা ফুলের কাছে এসেই সে আটকে গেল। এই ফুল তো সে লাগায়নি। ফুলটি দেখে সে বেশ অবাক হয়। কিন্তু কিছুতেই অপরিচিত ফুলটার নাম বলতে পারে না।
রাজার প্রাণ যাবে ভেবে রানি ভেতরে ভেতরে খুশি হয়। ওই সময় রাজার পক্ষে প্রজারা রানির কাছ থেকে সাত দিন সময় চেয়ে নেয়। মুচকি হেসে রানি তাতে রাজি হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ে অন্য রাজ্যগুলোতেও। খবর পেয়ে রাজাকে বাঁচাতে আরেক রাজ্য থেকে হেঁটে রওনা দেয় তারই এক বোন। হাঁটতে হাঁটতে ষষ্ঠ রাতে সে বিশ্রাম নিচ্ছিল বনের ভেতর, একটি শিমুলগাছের তলায়।
রানি নানা পরিকল্পনা আঁটে। কৌশলে রাজার সঙ্গে একবার সে মেতে ওঠে সর্বনাশা বাজির খেলায়। কী সেই বাজি? রাজাকে তার বাগানের সব ফুলের নাম বলতে হবে। অন্যথায় রানির হুকুমে প্রজারা রাজার প্রাণদণ্ড দেবে। নিজের বাগানের ফুলের নাম বলা খুবই সহজ। এমনটা ভেবেই আত্মবিশ্বাসী রাজা বাজিতে রাজি হয়।গাছটির মগডালে বাসা বেঁধে থাকত এক শকুনি। গভীর রাতে হঠাৎ বোনটি শুনতে পায়, শকুনি তার ক্ষুধার্ত বাচ্চাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে এই বলে যে পরের দিনই সে তাদের রাজার দেহের মাংস খাওয়াবে।
কীভাবে তা সম্ভব?
শকুনির উৎসুক বাচ্চারা মায়ের কাছে তা জানতে চায়। শকুনি তখন গল্পচ্ছলে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে পাড়াতে সব ঘটনা এবং ফুলের নাম ও জন্মবৃত্তান্ত খুলে বলে। শিমুলগাছের নিচে বসে রাজার বোনটি সেসব কথা শুনে নেয়। ভোর হতেই বোনটি দৌড়ে পৌঁছে যায় রাজদরবারে। অতঃপর রাজার কাছে ফুলের নামসহ সব ঘটনা খুলে বলে।
সাত দিনের দিন প্রজারা ও রানির উপস্থিত হয়। রাজার কাছে আবারও ফুলের নাম জানতে চায় রানি।
সবার সামনে রাজা উচ্চকণ্ঠে বলে ওঠে, অদ্ভুত ওই ফুলের নাম ‘কারি নাগিন হাড় বাহা’। রাজা ফুলের নামটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই বাগানের আধফোটা সেই ফুল পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়ে যায়। রাজাও রানির বাজির খেলায় প্রাণদণ্ড থেকে মুক্তি পায়। অতঃপর সে প্রজাদের কাছে বোনের মুখে শোনা সব ঘটনা খুলে বলে।
আরও পড়ুনসওদাগরের টিয়া১৫ অক্টোবর ২০২৫সব জেনে ক্ষুব্ধ প্রজারা প্রতিহিংসাপরায়ণ রানিকে তির মেরে ঝাঁজরা করে দেয়। তাতেও তারা ক্ষান্ত হয় না। প্রিয় রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করায় লাঠির আঘাতে রানির মাথাও গুঁড়িয়ে দেয় তারা।
সাঁওতালদের বিশ্বাস, এর পর থেকেই যেকোনো উৎসবে কলাগাছে তির বিদ্ধ করা এবং লাঠি দিয়ে হাঁড়ি ভাঙার আচারটি তাদের কাছে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে ওঠে। এ খেলা দুটিকে তারা অশুভ শক্তির প্রতীকী বিনাশও বলে মনে করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল র ন ম বল
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুতে আরও ১৩ পদ সংযুক্তি চায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল শিক্ষার্থী সংসদসমূহের গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, ২০২৫–এর সংশোধনী চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। গঠনতন্ত্রে আরও ১৩টি পদ সংযুক্তির দাবি জানিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ছাত্রদল জকসু গঠনবিধিতে ১০টি নতুন সম্পাদক পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে। পদগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী বিষয়ক সম্পাদক, শুধু নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, ধর্ম ও সম্প্রীতি বিষয়ক সম্পাদক, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক এবং বিতর্ক সম্পাদক।
পাশাপাশি বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদকে বিভক্ত করে স্বাস্থ্য সম্পাদক ও পরিবেশ সম্পাদক এই দুটি আলাদা পদ সৃষ্টির দাবি তুলেছে ছাত্রদল। একইভাবে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদটিকে ভেঙে সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পাদক—এই দুটি পৃথক পদ গঠনের প্রস্তাব করেছে। কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টিরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এ ছাড়া বর্তমান সংবিধিতে উল্লিখিত সদস্যপদগুলোর সাথে আরও তিনটি নতুন সদস্যপদ যুক্ত করে ১০টি সদস্যপদ করার প্রস্তাব করেছে ছাত্রদল।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে ২৭ অক্টোবর জকসুর সংবিধি চূড়ান্ত হয়। সংবিধিতে জকসুতে ২১টি পদ রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল বলেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সেশনজট, গবেষণা সংকট, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা, ক্যানটিন ও লাইব্রেরির সীমাবদ্ধতার মতো ইস্যুগুলো দীর্ঘদিনের। ছাত্রদলের চাওয়া, জকসু শুধু রাজনৈতিক নয়, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউজিসিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে জকসুর সংবিধিতে পদ সংযোজন করার দাবি জানানো হয়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের সুযোগ না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাসাবাড়িতে থাকেন। শুধু একটি ছাত্রী হল রয়েছে, সেখানে সংকট সীমাহীন। যেহেতু হল নেই, সেখানে ছাত্র সংসদ বিদ্যমান না থাকায় জকসুতে সম্পাদকীয় পদ বৃদ্ধির কথা জানানো হয়েছিল। ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব ও সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি অত্যাবশ্যকীয়।
সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন কিছু পদ সংযুক্ত করেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি অত্যাধুনিক, যুগোপযোগী এবং বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবে। কিন্তু আমরা জকসু নীতিমালায় একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে প্রশাসনের ব্যাপক তাড়াহুড়ো দেখেছি, যা খুবই হতাশাজনক। আমরা আশা করছি আমাদের দাবি করা পদগুলো নীতিমালাতে সংযুক্ত করা হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা আশা করি এই নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। প্রশাসন সব ছাত্রসংগঠনকে সমান সুযোগ দেবে, যাতে প্রত্যেকে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। রোডম্যাপ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংশোধন, মনোনয়নপত্র জমা ও যাচাইসহ সব ধাপ শেষে আগামী ২৭ নভেম্বর ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।