রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র অনৈক্যের কারণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে ‘দুরূহ চ্যালেঞ্জ’ দেখছে সরকার। তবে গণভোটসহ সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার বিষয়টিও গভীরভাবে চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের প্রসঙ্গ এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে এ ব্যাপারে উপদেষ্টাদের মতামত জানতে চান। উপদেষ্টাদের বেশির ভাগই একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, শুধু মতামত শুনেছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার বিষয়টিও গভীরভাবে চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এর আগে তাঁরা দেখেছিলেন বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধ ছিল। এখন আরও দুই ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। একটা হচ্ছে এটি কী পদ্ধতিতে পাস করা হবে। আরেকটি হচ্ছে, এ জন্য গণভোট হলে তা কবে হবে। পরস্পরবিরোধী উত্তেজিত ভূমিকায় রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল।দ্বিধায় থাকলেও সিদ্ধান্ত দ্রুত

একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ, অন্যদিকে সনদ বাস্তবায়নের চাপ—এ নিয়ে সরকার একধরনের দ্বিধায় পড়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বক্তব্যেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘২৭০ দিন যাবৎ আলাপ-আলোচনার পর আমরা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখছি, এটা হতাশাব্যঞ্জক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে কীভাবে সমঝোতার দলিল পাস হয়, এটা দুরূহ একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, এর আগে তাঁরা দেখেছিলেন বিষয়বস্তু নিয়ে বিরোধ ছিল। এখন আরও দুই ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। একটা হচ্ছে এটি কী পদ্ধতিতে পাস করা হবে। আরেকটি হচ্ছে, এ জন্য গণভোট হলে তা কবে হবে। পরস্পরবিরোধী উত্তেজিত ভূমিকায় রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল। তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি এ রকম ভূমিকা নেন, সরকার কী করবে, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। এত দিন আলোচনার পর যদি ঐকমত্য না আসে, তো আমরা আসলে কীভাবে কী করব, সত্যি আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করছে। দ্রুতই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, দুটো বিকল্পের মধ্যে কোনটা বেশি গ্রহণযোগ্য, সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। আর গণভোট কবে হবে, এটা নিয়ে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বোধ হয়। একটা সময়ে এটা নিয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, আমরা খুব দৃঢ় থাকব। আর সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত নেওয়া হবে।’

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানান অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

জুলাই সনদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার কী ভাবছে? সরকার কি আবার দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে? নাকি অবিলম্বে আদেশ জারি করে সনদ বাস্তবায়নের পথে এগোবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করছে। দ্রুতই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই জ ত য় সনদ ব ক র প রস ত ব ন উপদ ষ ট সরক র র গণভ ট ক ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

নাগেশ্বরীতে আগুনে পুড়ল ৮ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান  

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা বাজারে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে লাগা আগুনে আটটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুনে ৪২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, সার-তেল, বীজ ও কীটনাশক ব্যাবসায়ী অধির চন্দ্র সাহার ১৭ লাখ, একই পণ্যের ব্যাবসায়ী আমিনুল ইসলামের ১০ লাখ, কাকলী ট্রেডর্সের মালিক হাছেন আলীর ১০ লাখ, মুদি দোকান মালিক মমিনুল ইসলাম, সুপারি ব্যবসায়ী আতাউর ও ইব্রাহিমের ৩ লাখ, সেলুন মালিক ফনি চন্দ্র শীলের দেড় লাখ এবং মসলা ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর আলীর ৫০ হাজার টাকার মালমাল আগুনে পুড়ে গেছে। 

আরো পড়ুন:

পাঁচ কোটি টাকা সংগ্রহে ব্রেইন স্টেশনের কিউআইও’র আবেদন

ই-জেনারেশনের ২.২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা

স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, “আজ ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বাজারের উত্তর পাশের একটি দোকানে আগুন জ্বলছে। মানুষজনকে ডাকাডাকি করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি।” 

খাইরুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, “মূহূর্তেই আগুন অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।”

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানের ছোট ভাই মমিনুল ইসলাম জানান, তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অধির চন্দ্র সাহার ছেলে প্রাণ চন্দ্র সাহা বলেন, “রাতে বাবা দোকন বন্ধ করে বাসায় ফেরেন। ভোরে মানুষের হৈচৈ শুনে বাজারে এসে দেখি, দোকানে আগুন জ্বলছে। আগুনে আমাদের ১৭ লাখ টাকা মালামাল পুড়ে গেছে।”

কেদার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়াম্যান আ.খ.ম ওয়াজিদুল কবীর রাশেদ বলেন, “ঘটনাস্থলে এসে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। তাদরে একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে স্থানীয়রা আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন।”

নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম লিডার সাইফুল ইসলাম জানান, বৈদ্যতিক শট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হচ্ছে।

ঢাকা/বাদশাহ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ