উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করবে রিয়াল মাদ্রিদ
Published: 30th, October 2025 GMT
ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক হতে পারে ৪৫০ কোটি ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে স্পেনের একটি আদালতের সর্বশেষ রায়ের পর এমন অবস্থান নিয়েছে রিয়াল।
সুপার লিগের পরিকল্পনা আটকে দিয়ে উয়েফা ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা আইন ভঙ্গ করেছে বলে এর আগে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেই রায়ের বিরুদ্ধে করা উয়েফার আপিল বুধবার মাদ্রিদের প্রাদেশিক আদালত খারিজ করে দেন। একই আদালত স্প্যানিশ লিগ লা লিগা এবং স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের আপিলও খারিজ করেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালত সিজেইউ রায় দিয়েছিল, ২০২১ সালে উয়েফা ও ফিফা যে নিয়মগুলো প্রস্তাবিত সুপার লিগ ঠেকাতে ব্যবহার করেছিল, তা ইউরোপীয় আইনের পরিপন্থী। সেই রায় আপিলের পরও বহাল থাকায় রিয়াল মাদ্রিদ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এই রায়ে ‘আনন্দিত’, কারণ এটি ‘ক্লাবের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দাবি করার পথ খুলে দিয়েছে।’
আপিল খারিজের পর বিবৃতি দিয়েছে উয়েফাও। ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থাটি বলেছে, সর্বশেষ এই রায় ‘২০২১ সালে ঘোষিত এবং ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ‘সুপার লিগ’ প্রকল্পকে বৈধতা দেয় না। একই সঙ্গে এটি উয়েফার ২০২২ সালে গৃহীত ও ২০২৪ সালে হালনাগাদ করা বর্তমান অনুমোদন-নিয়মকেও খর্ব করে না, যেগুলো এখনো কার্যকর রয়েছে।’
আদালতের রায় বিস্তারিত পর্যালোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছে উয়েফা। আর লা লিগা জানিয়েছে, তারা আদালতের নতুন রায়কে সম্মান জানালেও এর গুরুত্বকে খাটো করে দেখছে। লিগ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘এই সিদ্ধান্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতা কাঠামো অনুমোদন বা সমর্থন করে না, আর ২০২১ সালে ঘোষিত প্রাথমিক প্রকল্প সম্পর্কেও কিছু বলে না, যা পরবর্তীতে আয়োজকেরা পরিবর্তন করেছে।’
২০২১ সালের এপ্রিলে স্পেন, ইতালি ও ইংল্যান্ডের ১২টি ক্লাবের অংশগ্রহণে চালু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সুপার লিগ প্রকল্প ভেস্তে যায়। প্রথমে ইংলিশ ক্লাবগুলো, পরে ধীরে ধীরে ইতালি ও স্পেনের ক্লাবগুলো সুপার লিগ থেকে সরে আসে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং আয়োজক কর্তৃপক্ষ এ২২ স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট এ নিয়ে উয়েফার সঙ্গে আলোচনা ও আইনি লড়াই চালিয়ে যায়।
মাদ্রিদভিত্তিক দৈনিক এএস জানিয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদ ও সুপার লিগের আয়োজক সংস্থা এ২২-এর আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের দাবি প্রস্তুত করছেন। এই পত্রিকার সূত্রমতে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪,৫০০ মিলিয়ন ইউরো, যা আর্থিক ক্ষতি, সম্ভাব্য লাভ হারানো এবং ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে যোগ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্ল্যাক টিউসডে ১৯২৯, যেভাবে শুরু হয় মহামন্দা
আজ ২৯ অক্টোবর। বিশ্ব অর্থনীতির এক বিশেষ দিন। ১৯২৯ সালের ২৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ধস, যা ‘ব্ল্যাক টিউসডে’ বা কালো মঙ্গলবার নামে এর পরিচিতি। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের অন্যতম সূচক ডাও জোন্স ১২ শতাংশ পড়ে যায়। আতঙ্কে বিক্রি হয়ে যায় ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি শেয়ার।
এই বিপর্যয় শুধু এক দিনের নয়; এর মধ্য দিয়ে ‘রোরিং টোয়েন্টিজ’-এর আপাত সমৃদ্ধির যুগের অবসান হয়েছিল। সেই সঙ্গে শুরু হয় মহামন্দার সূচনা। এই মহামন্দার কারণে পরবর্তী দশকজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মার্কিন বাণিজ্যনীতিতেও তার গভীর প্রভাব পড়েছিল। শেয়ারবাজার পতনের পেছনে নানা কারণ ছিল। তখনকার বিনিয়োগ সংস্কৃতি ছিল অতিমাত্রায় ঋণনির্ভর। মানুষ দালালদের কাছ থেকে ধার করে শেয়ার কিনত এবং জামানত হিসেবে রাখত সেই শেয়ার। এতে অর্থনীতি চাঙা মনে হলেও বাস্তবে তা ছিল না। এর সঙ্গে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্মুথ হাওলি ট্যারিফ অ্যাক্টসহ নানা সুরক্ষা নীতি। এই আইনের মাধ্যমে আমদানি পণ্যে বিপুল হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। ফলাফল ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের বিপর্যয়। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমে গিয়েছিল প্রায় ৬৬ শতাংশ।
এই ধসের অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ‘নিউ ডিল’ কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিলেন। বিশেষ করে ব্যাংক সংস্কার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহযোগিতার নতুন পথ খোঁজেন তিনি। তবু বাজার পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয় না; আগের উচ্চতায় পৌঁছাতে সময় লাগে দীর্ঘ ২৫ বছর। অবশেষে ১৯৫৪ সালে শেয়ারবাজার আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে।
‘ব্ল্যাক টিউসডে’ তাই শুধু অর্থনৈতিক ঘটনা নয়, ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা এটি। এ ঘটনায় বোঝা যায়, বিনিয়োগের উন্মাদনা, ঋণনির্ভর ঝুঁকি ও সুরক্ষা নীতির মিশ্রণ কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ব্ল্যাক টিউসডের অর্থনৈতিক প্রভাবব্ল্যাক টিউসডের মধ্য দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সমৃদ্ধির যুগের সমাপ্তি হয়েছিল। শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত স্থায়ী মহামন্দা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত পরাশক্তিতে পরিণত হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিবর্তে নিজেদের শিল্প রক্ষায় মনোযোগ দেয় তারা। গাড়ি, ইস্পাতসহ উদীয়মান শিল্প খাতগুলোকে রক্ষা করতে সরকার আমদানি করা পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিল। ইউরোপ যুদ্ধোত্তর সময়ে আবার কৃষি উৎপাদন শুরু করলে কৃষিপণ্যের দাম পড়ে গিয়েছিল। কৃষকদের রক্ষায় আমেরিকা শুল্ক বাড়ালেও মানুষের আয় ও জমির দাম কমতে থাকে। ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বড় অংশ শহরমুখী হয়।
রোরিং টোয়েন্টিজ নামে পরিচিত সে দশকটি ছিল সমৃদ্ধির যুগ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মন্দা আর আসবে না—এই বিশ্বাসে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিনিয়োগের জোয়ার বয়ে যায়। ১৯২১ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত শেয়ারের মূল্য বেড়েছিল প্রায় পাঁচ গুণ। সাধারণ মানুষও এই প্রথম শেয়ারবাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনেক দালাল ক্রেতাদের শেয়ার কেনার মূল্যের দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ঋণ দিত, সেই শেয়ারই জামানত হিসেবে থাকত। এভাবে ঋণনির্ভরতার ওপর ভর করে গড়ে উঠেছিল অস্থির অর্থনৈতিক বুদ্বুদ। একই সঙ্গে আয়বৈষম্যও বাড়তে থাকে। তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল দেশটির মোট সম্পদের ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
১৯২৯ সালের মাঝামাঝি থেকেই অর্থনীতিতে দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যেতে শুরু করে। মানুষের বাড়ি ও গাড়ি কেনার প্রবণতা কমে যায়; কেননা অধিকাংশ ভোক্তা ঋণের চাপে ক্লান্ত। শিল্পোৎপাদন বিশেষ করে ইস্পাতে মন্দাভাব দেখা যায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আবার কৃষি উৎপাদন শুরু হলে কৃষকদের রক্ষায় মার্কিন কংগ্রেস শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এদিকে ইউরোপে ভালো ফসলের খবর বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। এতে কৃষিপণ্যের দাম আরও পড়ে গিয়েছিল।
পরিস্থিতি সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস স্মুথ হাওলি শুল্ক আইন পাস করে। শুধু কৃষিপণ্য নয়, শিল্পপণ্যের আমদানিতেও বিপুল শুল্ক আরোপ করা হয়। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশও পাল্টা শুল্কনীতি গ্রহণ করে। এর ফল ছিল ধ্বংসাত্মক।
ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড