ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে নির্মাণকাজের সময় গ্যাস লাইনে ছিদ্র, সরবরাহ বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে গ্রাহক
Published: 30th, October 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজের সময় এক্সকাভেটরের (খননযন্ত্র) আঘাতে গ্যাসের সংযোগ লাইন ছিদ্র হয়ে যায়। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ। এতে জেলা শহরের প্রায় ১৫ হাজার আবাসিক-বাণিজ্যিক গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে শহরের উলচাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছে বিজিডিসিএলের কারিগরি দল। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানা গেছে।
বিজিডিসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপমহাব্যবস্থাপক মো.
বাখরাবাদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। আজ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উলচাপাড়া অংশে খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলছিল। সে সময় ওই যন্ত্রের আঘাতে গ্যাস সঞ্চালন লাইনের ৬ ইঞ্চি পাইপ ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। বিষয়টি বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাদের কারিগরি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। গ্যাসের সংযোগ লাইন মেরামত করতে সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকায় থাকা গ্যাস সঞ্চালন লাইন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরসহ পৌর এলাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
কালাইশ্রীপাড়ার মনির হোসেন বলেন, ‘বিকেল চারটার পর থেকে গ্যাস নেই। রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। শিশুদের জন্য কোনো খাবার রান্না করতে পারছেন না আমার স্ত্রী।’
কাজীপাড়ার বাসিন্দা তমালিকা দেবনাথ বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার নাশতা বানাতে রান্নাঘরে যাই। গিয়ে দেখি চুলায় গ্যাস আসছে না। কবে আসবে জানি না। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। ছোট বাচ্চারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে।’
বিজিডিসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার রাজস্ব বিভাগের উপব্যবস্থাপক গোলাম মোক্তাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘উলচাপাড়ায় গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। তাই ঘাটুরা থেকে গ্যাসের সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পুরো শহরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের কারিগরি দল কাজ শুরু করেছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব জ ড স এল ছ দ র হয় এল ক য় গ র হক শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত, বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে দৈনিক ৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ২০২২ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি তাদের সর্বোচ্চ তেল আমদানি।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত এড়াতে ভারত যে কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে, এটি তারই অংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যঘাটতি–সংক্রান্ত উদ্বেগও আমলে নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তেল আমদানি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত তেল আমদানি বাড়িয়েছে, কেননা সেখান থেকে তেল আমদানি করা ভারতের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এর নানা কারণ আছে। প্রথমত, ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের মধ্যে দামের যে ব্যবধান, সেই কারণে ডব্লিউটিআই ক্রুড কেনা ভারতের জন্য লাভজনক হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে থেকে চীনের তেল কেনা কমেছে। ফলে মার্কিন তেল কেনা ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলোর জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে।
কেপলারের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দৈনিক তেল আমদানির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ব্যারেলে উত্তীর্ণ হতে পারে। আগামী নভেম্বর মাসের জন্য যে পূর্বাভাস, তাতে এই পরিমাণ ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অক্টোবর মাসের আগপর্যন্ত দৈনিক গড়ে প্রায় ৩ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে ভারত, সেই তুলনায় এই বৃদ্ধি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
ভারতের সরকারি ও বাণিজ্য কর্মকর্তাদের হিসাব অনুসারে, ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বাড়াতে মার্কিন অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়েছে। এই তেলের মধ্যে আছে মিডল্যান্ড ডব্লিউটিআই ও মার্স। তবে অর্থনৈতিক কারণ যতই বলা হোক না কেন, এর পেছনে আছে মূলত রাজনৈতিক কারণ। সেটা হলো, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়ানো।
এই কৌশলগত পরিবর্তন এমন সময়ে এল, যখন রুশ তেল কোম্পানি রুজনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও তীব্র হচ্ছে।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়ানোর এ ঘটনা বাণিজ্যিক টানাপোড়েন দূর করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যখন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন থেকেই এই পরিবর্তন দেখা গেছে। ভারতের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, ভারত নিজের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও রুশ তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রশমনের কৌশলগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বলেছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করবে। যদিও ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়লেও রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী, দেশটির মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে রাশিয়া থেকে। সরবরাহের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক, তৃতীয় স্থানে সৌদি আরব।
কেপলারের বিশ্লেষক ঋতোলিয়া এই প্রবণতার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন তেল কেনা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভারতীয় তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বহুমুখী করেছে, তা ঠিক। এর মধ্য দিয়ে তারা দেখিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি সুযোগ কাজে লাগানোর সক্ষমতাও তাদের আছে। কিন্তু বিষয়টি কাঠামোগত নয়, শুধু দামের পার্থক্যের কারণে তা হয়েছে। দীর্ঘ পরিবহন সময়, বাড়তি ভাড়া ও ডব্লিউটিআই তেলের গড়নের কারণেও ভারতের পক্ষে এই তেল কেনা তেমন একটা সম্ভব হবে না।
ঋতোলিয়া আরও বলেন, ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের হিস্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের জ্বালানি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পাশাপাশি ভারতের জ্বালানি সরবরাহের বহুমুখীকরণ কৌশল শক্তিশালী হচ্ছে। দেশটি সরবরাহ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য সমানভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে বলেই মনে হয়।