জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেম জালিয়াতি করে সঞ্চয়পত্রের ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ বাদী হয়ে গতকাল বুধবার মামলাটি করেন। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন মো. আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ মারুফ এলাহী, আল আমিন ও মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁদের মধ্যে আরিফুর রহমানকে আজ সন্ধ্যায় মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।

এই ঘটনার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলার আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ মারুফ এলাহী এই চক্রের হোতা। তিনি ছাত্রদলের বিগত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। তার আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।

মোহাম্মদ মারুফ এলাহীর বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, মারুফ এলাহী আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে তাঁর কোনো পদপদবি নেই।

এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে টাকা তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত সোমবার মহা হিসাব নিরীক্ষণ কার্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এস এম রেজভীর আয়কর রিটার্ন পূরণ করতে গিয়ে দেখেন তাঁর নামে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ১৩ অক্টোবর তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রেভজী সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার কোনো আবেদন করেননি। পরে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন, টাকা লেনদেনের সীমা ২ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা করাসহ নানাভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ২৩ অক্টোবর সঞ্চয়পত্রের ওই ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও দুই ব্যক্তির নামে থাকা ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা।

কীভাবে এই জালিয়াতি

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেবেন, সেই হিসাবেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও আসল টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, কোনো তথ্য পরিবর্তন, সুদ বা আসল নেওয়ার জন্য অবশ্যই সেই অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) যায়। উপস্থিত গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে তৎক্ষণাৎ সেই ওটিপি দেখানোর পর তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন করা হয়। সব ক্ষেত্রে সার্ভারে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা প্রমাণ থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, তাঁদের ওখানে যেসব কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাঁদের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ফ এল হ কর মকর ত গ র হক

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার করতে হবে: আলী রীয়াজ

জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে চাইলেও আগামী জাতীয় সংসদ তাদের ইচ্ছেমতো সংবিধানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করতে পারবে না। এমনটি জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ রয়েই গেছে। এর মধ্যেই ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের একটি খসড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে আজ দিয়েছে। সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারি করতে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরু থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করবে। এই কাজ শেষ হওয়ার পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ বিলীন হয়ে যাবে প্রথাগত সংসদে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদকে ‘কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার’ (গাঠনিক ক্ষমতা) দেওয়া হলেও তারা নিজেদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে না বলে স্পষ্ট করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কেন পারবে না—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার দেওয়া হচ্ছে এই বিবেচনা থেকে যে মৌলিক সংস্কার করা হবে। তবে তাদের গাইড করবে জুলাই জাতীয় সনদ। কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার মানে এই নয় যে যা খুশি তাই লিখতে পারা যাবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে, সংস্কারের যেসব প্রস্তাবে তাদের আপত্তি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তারা তাদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, গণভোটের প্রস্তাবটি এসেছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার আলোচনায়, যেখানে প্রস্তাব ছিল সবকিছুই জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার। জনগণ যদি রায় দেয়, তাহলে রাজনৈতিক দল তার ভূমিকা নির্ধারণ করবে। কমিশন মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের রায় পাওয়া জিনিসকে কেবল নিজস্ব দলীয় অবস্থান থেকে বিবেচনা করবেন না।

সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দিতে এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করতে দুটি বিকল্প সরকারের হাতে রয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সরকারের সংবিধান সংস্কার–বিষয়ক আদেশের অধীন একটি গণভোটের আয়োজন হবে। দ্বিতীয় বিকল্পেও বলা হচ্ছে যে সরকার একটি আদেশ জারি করবে। সেই আদেশের অধীন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে, সেগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারে।

দুটি প্রস্তাবের মধ্যে কমিশন কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে—সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, যে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে গণভোটের তফসিলে। সরকার চাইলে এগুলো আইনি সাংবিধানিক ভাষায় পরিবর্তন করে বিলের আকারে দিতে পারে অথবা জুলাই জাতীয় সনদে যে ভাষায় লেখা আছে, সেভাবে দিতে পারে। এটা সরকারের ওপরে। কমিশন আশা করে, এটা বিল আকারে দেওয়া যায়, সরকার দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সরকারের। ফলে একটার চেয়ে আরেকটা শ্রেয়, এভাবে কমিশন বিবেচনা করেনি।

গণভোটে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো পাস না হলে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণভোটে যদি পাস না হয়, তার মানে হলো জনগণ সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে।…গণভোটে পাস না হলে বুঝতে হবে জনগণ তা গ্রহণ করছে না।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কয়েকটি দল এখনো জুলাই সনদে সই করেনি। তবে কমিশন আশা করছে, শেষ পর্যন্ত সব দলই সনদে সই করবে।

চূড়ান্ত দিন পর্যন্ত এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করলে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, যারা স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে কমিশনের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে। তারা যেন স্বাক্ষর করে, সেই অনুরোধ প্রকাশ্য ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগে করা হয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে আদেশ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা জানলে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। কমিশন আশা করে যে তারা তা দেখবে, বিবেচনা করবে এবং স্বাক্ষর করবে। কমিশনের মেয়াদ আরও তিন দিন আছে। কমিশন আশা করে, এই মেয়াদের মধ্যেই তারা স্বাক্ষর করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সঞ্চয়পত্রে জালিয়াতির ঘটনায় ছাত্রদল নেতার নাম
  • ফরিদপুরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
  • সঞ্চয়পত্রে জালিয়াতি: মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাৎ
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের অর্থ আত্মসাৎ
  • অভিজ্ঞদের নিয়ে দুই প্যানেল, সরে যাচ্ছেন অন্যরা
  • সম্মোহন
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নতুন বাংলাদেশের পথ দেখাবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার করতে হবে: আলী রীয়াজ