স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘হুমায়ুন আহমেদ সপ্তাহ’
Published: 6th, November 2025 GMT
বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে তার ভক্তদের জন্য বিশেষ আয়োজন করেছে স্টার সিনেপ্লেক্স। এই কিংবদন্তি সাহিত্যিকের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী ১৩ নভেম্বর। তাকে স্মরণ করতে ৭-১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উদযাপিত হবে ‘হুমায়ুন আহমেদ সপ্তাহ’।
এই সময়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার, সনি স্কয়ার ও সামরিক জাদুঘর শাখায় প্রদর্শিত হবে হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় চারটি চলচ্চিত্র। এগুলো হলো—‘আমার আছে জল’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ এবং ‘দারুচিনি দ্বীপ’।
আরো পড়ুন:
উদয়পুরে বসবে বিজয়-রাশমিকার বিয়ের আসর?
হাসপাতালে জিতু কমল
দর্শকদের জন্য থাকছে বিশেষ অফার—একটি টিকিট কিনলে আরেকটি ফ্রি। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ নির্মাণ করেন তৌকীর আহমেদ। হুমায়ুন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ উপন্যাস অবলম্বনে এটি নির্মিত হয়েছে। মুক্তির পরই এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে। একই বছর মুক্তি পাওয়া রম্যধর্মী সিনেমা ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’–এ অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর, তানিয়া আহমেদ, দিতি ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে।
২০০৮ সালে মুক্তি পায় ‘আমার আছে জল’, যেখানে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস, বিদ্যা সিনহা মিম, জাহিদ হাসান ও মেহের আফরোজ শাওন। আর হুমায়ুন আহমেদের শেষ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ (২০১২) ৮৫তম অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।
স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের এজিএম মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে হুমায়ুন আহমেদ একটি জাদুকরি নাম। সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রে তিনি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। দর্শকদের পাশাপাশি আমাদেরও তার প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। তাই এই জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা বিশেষভাবে তাকে স্মরণ করতে চাই।”
বিশেষ এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। আশাবাদী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আশা করি দর্শকরা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করবেন। যারা আগে বড় পর্দায় এসব সিনেমা দেখতে পারেননি, তাদের জন্য এটি হবে এক অনন্য সুযোগ। হুমায়ুন আহমেদের সিনেমা মানেই এক বিশেষ আনন্দ, আর সেই আনন্দ নতুন করে ভাগাভাগি করতে পারছি বলে আমরা আনন্দিত।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র হ ম য় ন আহম দ র চলচ চ ত র দ র জন
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা
বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মণিপুরি অধ্যূষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য ও রাতে রাসনৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ।
পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে এ উৎসব উদযাপন করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ।
এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি মহারাসলীলা উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে এবার।
কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। আগামী বুধবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য।
উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। এছাড়া মণিপুরি রাস উৎসব উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে ‘নুংশিপি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
আলাপকালে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক (অ: দা:) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন।
মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।
মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।
একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে।
রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের টহলও থাকবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ঐতিহ্যবাসী মণিপুরি রাসোৎসব উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা/আজিজ/এস