গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকারের টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, তিনি চাঁদার টাকা লেনদেন করেছিলেন। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপি নেতার ভয়ে বাড়িছাড়া দলের এক কর্মী। অন্যদিকে শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনার পর থেকে বাড়িছাড়া দলের আরেক কর্মী। ইতিমধ্যে তাঁরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে দুটি আবেদন করেছেন।

ভুক্তভোগী দুজন হলেন কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য শেখ শহিদুল ইসলাম ও কাশিমপুর থানার জিয়া মঞ্চের সভাপতি আফজাল হোসেন। এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের সঙ্গে আফজাল হোসেনকে দেখা গিয়েছিল।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর শওকত হোসেন সরকার সংবাদ সম্মেলন করে চাঁদাবাজির অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁকে ঘায়েল করতে না পেরে চরিত্রহননের নোংরা পথে নেমেছে। এ নিয়ে তিনি আদালতে মানহানির অভিযোগে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ওই দুজনকে আসামি করা হয়।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিজের বাসভবনের বসার কক্ষে মুখোমুখি বসে আছেন বিএনপি নেতা শওকত হোসেন ও আফজাল হোসেন। তাঁর ঠিক উল্টো পাশ থেকেই ভিডিওটি করা হয়। ভিডিওতে আফজালকে বলতে শোনা যায়, ‘আমারে সাইদুল ভাই ফোন দিছিল তিনটার দিকে। ভাই (শওকত), সাইদুল ভাই কি কিছু কইছে আপনেরে? জবাবে শওকত বলেন, ‘তোরা আইতে পারস এইটা বলছে।’ এ সময় আফজাল নিজের পকেট থেকে টাকার বান্ডিল বের করে শওকতের হাতে দিয়ে বলেন, ‘এখানে ২৫ হাজার টাকা কম আছে, এই মাসে মোটামুটি ২২ দিন অফিস চলছে, ডিউটি সব সময় ১০টা পর্যন্ত অইতো। গত মাসে কাম কম অইছে, এ জন্য টাকা কম হইল।’ তখন বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঠিক আছে, যা হইছে তাই।’

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার। তখন তিনি বলেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে জড়িয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে আফজাল হোসেন নামের এক ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরা হয় এবং তাঁকে টাকা দেওয়ার একটি ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওর টাকার লেনদেনের অংশটি সত্য। তবে সেটি চাঁদাবাজির নয়, গাড়ি বিক্রির টাকা।

ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আফজাল হোসেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রোববার তিনি মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি আবেদন করেন। এ ছাড়া গত শনিবার সকালে শেখ শহিদুল ইসলাম নামে দলের আরেক কর্মীও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগ দুটি পেয়েছি। আমাদের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

আফজাল হোসেন আবেদনে উল্লেখ করেন, তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতির সঙ্গে রাজনীতি করার সময় ১৮ বছর ধরে পারিবারিকভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাঁর ব্যবসার দিকে বিএনপি নেতা শওকত হোসেনের নজর পড়ে। তিনি তাঁকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে বলেন এবং এককালীন ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি চাঁদা দিতে সম্মত হন এবং প্রতি মাসে চাঁদা দিয়ে আসছিলেন। যার কিছু ভিডিও নাজমুস সাকিব নামের ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর শওকত হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মানহানির মামলা করেন।

আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর শওকত সরকারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ ও জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আমি আমার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

অন্যদিকে আবেদনে শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেনের সঙ্গে রাজনীতি না করে এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে রাজনীতি করায় গত ১৪ মার্চ তাঁকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয়। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর গত ২৬ মে স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতা আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় তাঁর বাবার কেনা একমাত্র বসতবাড়ি জোর করে দখল করে নেন। তাঁকেসহ তাঁর পরিবারকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। ওই বাড়িতে তাঁর বাবার কবরও রয়েছে। এ নিয়ে তিনি থানা, সেনাক্যাম্প ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেন। সেই বক্তব্য নাজমুস সাকিব নামের একজনের ফেসবুকে প্রচারিত হয়। এতেই বিপত্তি বাধে।

শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ওই ভিডিও প্রচারের পর গত ২৬ অক্টোবর শওকত হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এ ছাড়া তাঁর লোকজন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু আমার পিতৃভূমি ও পিতা-মাতার কবর রক্ষা করতে চেয়েছি। কিন্তু সত্য বলার কারণে আজ আমি ও আমার পরিবার জীবননাশের আশঙ্কায় রয়েছি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে শওকত হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত যা রায় দেবেন, আমি তাই মেনে নেব। এ ছাড়া তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙার বিষয়টিও জানা নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শওকত হ স ন সরক র আফজ ল হ স ন র জন ত র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

সুরঙ্গে লুকিয়েও শেষরক্ষা হলো না যুবলীগ নেতার

নিজ বাসার ভিতরে ফ্লোর টাইলসের নিচে সুরঙ্গ বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে ছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার যুবলীগ নেতা শওকত হোসেন খোকন। তবু, শেষরক্ষা হয়নি তার। পুলিশ সুরঙ্গ থেকেই ওই যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ভোরে। 

বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান যুবলীগ নেতা শওকতকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

ঝালকাঠিতে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রিমন গ্রেপ্তার

ওসি বলেছেন, যুবলীগ নেতা শওকত হোসেন খোকন অত্যন্ত দুর্ধর্ষ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই সে ছিল পলাতক। পুলিশ তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। আত্মগোপনে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে দেয়াল লিখন, পোস্টারিং করে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছিল খোকন। পাশাপাশি গুজবও ছড়িয়ে যাচ্ছিল।

সোমবার রাতে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, শওকত বোয়ালখালী উপজেলায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ শওকতের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু, বাড়ির ভিতরে শওকতকে পাওয়া যায়নি। পরে ঘরের টাইলসের নিচ দিয়ে তৈরি করা একটি সুরঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সুরঙ্গে তল্লাশি চালিয়ে যুবলীগ নেতা শওকতকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

ওসি জানান, এই যুবলীগ নেতা কৌশলে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছিল বার বার। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শওকত হোসেন খোকন বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছনদণ্ডী গ্রামের ফারুকী পাড়ার মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে। তিনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে মশালমিছিল
  • সুরঙ্গে লুকিয়েও শেষরক্ষা হলো না যুবলীগ নেতার