সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে স্বনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর ওপর গুরুত্বারোপ
Published: 16th, November 2025 GMT
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, জবাবদিহি জোরদারকরণ, জন–আস্থা ফেরাতে এবং মানসম্মত সাংবাদিকতা ধরে রাখতে সংবাদমাধ্যমকে একটি টেকসই স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনেরা।
৮ ও ১৫ নভেম্বর ঢাকায় মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: আইনি কাঠামো, বৈশ্বিক অনুশীলন ও জবাবদিহির পথনির্দেশনা’ বিষয়ক তিনটি পরামর্শ সভায় দেশের নানা প্রান্তের সংবাদমাধ্যম অংশীজনেরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত জানান।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক থেকে শুরু করে বার্তাকক্ষের ব্যবস্থাপক, সংবাদকর্মী, ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, গণমাধ্যম উন্নয়নকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
সভায় অংশীজনেরা বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে পক্ষপাতমূলক রিপোর্টিং, ভিন্নমতের দমন, মালিকানা কেন্দ্রীকরণ, শাস্তিমূলক আইন, পেশাগত নীতিমালার দুর্বল প্রয়োগ, সংবাদ ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি–ব্যবস্থার অভাব এবং সাংবাদিকদের জন্য অপর্যাপ্ত সুরক্ষা।
অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়; টেকসই সংস্কারের জন্য সব অংশীজনের সমন্বিত ও ধারাবাহিক উদ্যোগ প্রয়োজন। যেখানে নেতৃত্ব দিতে হবে সংবাদমাধ্যম শিল্পকেই।
আলোচকেরা মনে করেন, একটি কার্যকর স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে পারবে। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকেও যেকোনো ভুলের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে এবং অসত্য, অপতথ্যের যুগে জনগণের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে জনস্বার্থ রক্ষা করবে।
আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়, টেকসই ব্যবসায়িক মডেল ও আর্থিক স্বচ্ছতার অভাবে সংবাদমাধ্যম শিল্পে একটি অন্যায্য প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। যা শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অনৈতিক সাংবাদিকতার প্রতি উৎসাহী করছে।
সভায় বার্তাকক্ষের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা কর্মক্ষেত্রে তাঁদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তাঁরা বলেন, অনেক বছর ধরে সরকার, গণমাধ্যম এবং জনগণের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি ও ‘পারস্পরিক অনাস্থার’ সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। একদিকে সরকার ও করপোরেটের চাপে সাংবাদিকদের আপস করতে হচ্ছে, অন্যদিকে বার্তাকক্ষের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাংবাদিকেরাও জেল–জরিমানার মুখে পড়ছেন বা ভয়ে থাকছেন।
বার্তাকক্ষের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা সংবাদমাধ্যমগুলোর ভেতরে আরও শক্তিশালী জবাবদিহি ব্যবস্থার দাবি জানান। এ ক্ষেত্রে তাঁরা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন প্রতিষ্ঠাকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বলে উল্লেখ করেন।
সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল, সংবাদমাধ্যমগুলোর অভিযোগ গ্রহণ, মান বজায় রাখা এবং সংবাদ ভোক্তাদের প্রতি জবাবদিহির জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে স্বাধীন ন্যায়পাল নিয়োগ দেওয়া, যিনি পাবলিক এডিটর, রিডার্স এডিটর বা এনগেজমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করতে পারেন।
অংশগ্রহণকারী বক্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা, প্রয়োজনীয় আইনগত সংস্কার এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তাসংক্রান্ত দৃঢ় অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
এমআরডিআই পরামর্শ সভার সুপারিশগুলোকে একটি পলিসি ব্রিফ হিসেবে সংকলন করবে, যা সংবাদমাধ্যমের জন্য বাস্তবসম্মত, বিশ্বাসযোগ্য ও সমষ্টিগত স্বনিয়ন্ত্রণ মডেল উন্নয়নে সহায়তা করবে।
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের সহায়তায় ‘প্রোমোটিং ইফেক্টিভ, রেসপন্সিভ অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ (পেরি)’ কর্মসূচির অধীন এই পরামর্শ সভাগুলো আয়োজিত হয়। বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংস্কারের পক্ষে অ্যাডভোকেসি–সংক্রান্ত এমআরডিআইয়ের কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার (২০২৫-২০৩০) অংশ হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ শ জন র ব যবস থ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে স্বনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর ওপর গুরুত্বারোপ
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, জবাবদিহি জোরদারকরণ, জন–আস্থা ফেরাতে এবং মানসম্মত সাংবাদিকতা ধরে রাখতে সংবাদমাধ্যমকে একটি টেকসই স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনেরা।
৮ ও ১৫ নভেম্বর ঢাকায় মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: আইনি কাঠামো, বৈশ্বিক অনুশীলন ও জবাবদিহির পথনির্দেশনা’ বিষয়ক তিনটি পরামর্শ সভায় দেশের নানা প্রান্তের সংবাদমাধ্যম অংশীজনেরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত জানান।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক থেকে শুরু করে বার্তাকক্ষের ব্যবস্থাপক, সংবাদকর্মী, ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, গণমাধ্যম উন্নয়নকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
সভায় অংশীজনেরা বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে পক্ষপাতমূলক রিপোর্টিং, ভিন্নমতের দমন, মালিকানা কেন্দ্রীকরণ, শাস্তিমূলক আইন, পেশাগত নীতিমালার দুর্বল প্রয়োগ, সংবাদ ভোক্তার অভিযোগ নিষ্পত্তি–ব্যবস্থার অভাব এবং সাংবাদিকদের জন্য অপর্যাপ্ত সুরক্ষা।
অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয়; টেকসই সংস্কারের জন্য সব অংশীজনের সমন্বিত ও ধারাবাহিক উদ্যোগ প্রয়োজন। যেখানে নেতৃত্ব দিতে হবে সংবাদমাধ্যম শিল্পকেই।
আলোচকেরা মনে করেন, একটি কার্যকর স্বনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে পারবে। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকেও যেকোনো ভুলের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে এবং অসত্য, অপতথ্যের যুগে জনগণের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে জনস্বার্থ রক্ষা করবে।
আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়, টেকসই ব্যবসায়িক মডেল ও আর্থিক স্বচ্ছতার অভাবে সংবাদমাধ্যম শিল্পে একটি অন্যায্য প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। যা শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অনৈতিক সাংবাদিকতার প্রতি উৎসাহী করছে।
সভায় বার্তাকক্ষের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা কর্মক্ষেত্রে তাঁদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তাঁরা বলেন, অনেক বছর ধরে সরকার, গণমাধ্যম এবং জনগণের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি ও ‘পারস্পরিক অনাস্থার’ সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। একদিকে সরকার ও করপোরেটের চাপে সাংবাদিকদের আপস করতে হচ্ছে, অন্যদিকে বার্তাকক্ষের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাংবাদিকেরাও জেল–জরিমানার মুখে পড়ছেন বা ভয়ে থাকছেন।
বার্তাকক্ষের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা সংবাদমাধ্যমগুলোর ভেতরে আরও শক্তিশালী জবাবদিহি ব্যবস্থার দাবি জানান। এ ক্ষেত্রে তাঁরা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন প্রতিষ্ঠাকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বলে উল্লেখ করেন।
সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল, সংবাদমাধ্যমগুলোর অভিযোগ গ্রহণ, মান বজায় রাখা এবং সংবাদ ভোক্তাদের প্রতি জবাবদিহির জন্য একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে স্বাধীন ন্যায়পাল নিয়োগ দেওয়া, যিনি পাবলিক এডিটর, রিডার্স এডিটর বা এনগেজমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করতে পারেন।
অংশগ্রহণকারী বক্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা, প্রয়োজনীয় আইনগত সংস্কার এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তাসংক্রান্ত দৃঢ় অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
এমআরডিআই পরামর্শ সভার সুপারিশগুলোকে একটি পলিসি ব্রিফ হিসেবে সংকলন করবে, যা সংবাদমাধ্যমের জন্য বাস্তবসম্মত, বিশ্বাসযোগ্য ও সমষ্টিগত স্বনিয়ন্ত্রণ মডেল উন্নয়নে সহায়তা করবে।
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের সহায়তায় ‘প্রোমোটিং ইফেক্টিভ, রেসপন্সিভ অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ (পেরি)’ কর্মসূচির অধীন এই পরামর্শ সভাগুলো আয়োজিত হয়। বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংস্কারের পক্ষে অ্যাডভোকেসি–সংক্রান্ত এমআরডিআইয়ের কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার (২০২৫-২০৩০) অংশ হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হয়।