হারিয়ে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, সেফ হোমে ছয় বছর কাটিয়ে ফিরলেন ঘরে
Published: 24th, November 2025 GMT
বাবার সঙ্গে ভোলা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে আসে এক কিশোরী। এরপর হারিয়ে যায়। ভবঘুরে হয়ে সড়কের ধারে কাটছিল জীবন। এরই মধ্যে ধর্ষণের স্বীকার হয় সে। হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা। পুলিশ তাকে সড়ক থেকে উদ্ধার করলেও পরিবারের নাম-ঠিকানা ঠিকভাবে বলতে না পারায় আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে (সেফ হোম)। সেখানে এক ছেলেশিশুর জন্ম দেয় ওই কিশোরী।
ঘটনাটি ছয় বছর আগের। হারিয়ে যাওয়া সেই কিশোরীর বয়স এখন ২১। এক আইনজীবীর সহায়তায় অবশেষে বাবার খোঁজ পেয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার আদালত তাঁকে তাঁর বাবার জিম্মায় তুলে দেন।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কিশোরী থাকা অবস্থায় ওই নারী রিকশাচালক বাবার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরে বেড়াতে আসেন। তাঁকে বাসায় রেখে রিকশা নিয়ে বের হন বাবা। তিনি কৌতূহলবশত ঘর থেকে বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। বাবাও তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাননি। সড়কে ভবঘুরের মতো তাঁর জীবন কাটছিল। এর মধ্যেই তিনি ধর্ষণের শিকার হন, হয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা। ২০১৯ সালের মে মাসে তাঁকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ উদ্ধার করে। তবে পুলিশের কাছে বিস্তারিত কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। পুলিশই তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই শম্পা হাজারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর উদ্ধার কিশোরীকে আদালতে পাঠানো হয়। কোনো অভিভাবক না পাওয়ায় উদ্ধার কিশোরীকে হাটহাজারীর নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া তার শিশুটির বয়স এখন সাড়ে পাঁচ বছর। বর্তমানে নগরের রৌফাবাদের ছোট মণি নিবাসে রয়েছে শিশুটি।
বাবার কাছে অবশেষে মেয়ে ফিরতে পেরেছে—এটিতেই আমার আনন্দ। অসহায় মানুষের হাসিতেই আমি জীবনের সুখ খুঁজে পাই। সেফ হোমে জন্ম নেওয়া শিশুটিকেও ছোট মণি নিবাস থেকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে শিগগিরই আদালতে আবেদন করা হবে।তুতুল বাহার, আইনজীবীচট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবস্থিত মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের উপতত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে রয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় বছর আগে কৈশোর বয়সে আসা ওই নারী আমাদের সেফ হোমেই ছিলেন। এক আইনজীবী তাঁর অভিভাবকদের খুঁজে বের করেছেন। আদালতের নির্দেশে ওই নারীকে অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’
যে আইনজীবী ওই নারীকে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে সহায়তা করেন, তাঁর নাম তুতুল বাহার। ২৭ বছরের আইনি পেশায় অভিভাবকহীন শতাধিক নারী-শিশুকে জিম্মায় নিয়ে নিজের বাসায় রেখেছেন তুতুল বাহার। অনেককে বিয়ে দিয়েছেন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর অসহায় মানুষের পক্ষে বিনা মূল্যে মামলা লড়েছেন ২২ হাজারের বেশি।
জানতে চাইলে তুতুল বাহার জানান, হাটহাজারীর সেফ হোমে থাকা এক নারীকে সম্প্রতি পরিবারের জিম্মায় দিতে আদালতে আবেদন করেন তিনি। ওই নারীর বাড়িও ভোলায়। তাঁর মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকে সেফ হোম থাকা ওই নারীর বিষয়ে জানতে পারেন। এরপর ভোলা ও চট্টগ্রামের নানা জায়গায় যোগাযোগের মাধ্যমে ওই নারীর পরিবারকে খুঁজে বের করেন। তাঁকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে বিনা খরচে আইনি সহায়তা দেন তুতুল বাহার।
২৭ বছরের আইনি পেশায় শতাধিক অভিভাবকহীন নারী-শিশুকে জিম্মায় নিয়ে নিজের বাসায় রেখেছেন তুতুল বাহার। অনেককে বিয়ে দিয়েছেন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর অসহায় মানুষের পক্ষে বিনা মূল্যে মামলা লড়েছেন ২২ হাজারের বেশি।জানতে চাইলে তুতুল বাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার কাছে অবশেষে মেয়ে ফিরতে পেরেছে, এটিতেই আমার আনন্দ। অসহায় মানুষের হাসিতেই আমি জীবনের সুখ খুঁজে পাই। সেফ হোমে জন্ম নেওয়া শিশুটিকেও ছোট মণি নিবাস থেকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে শিগগিরই আদালতে আবেদন করা হবে।’
হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে দীর্ঘদিন পর ফিরে পেয়ে আপ্লুত তাঁর বাবা। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর মেয়েকে পুরো চট্টগ্রাম শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছিলেন তিনি। মাইকিং করেছেন, কিন্তু পাননি। আইনজীবী তুতুল বাহার তাঁর মেয়েকেই শুধু খুঁজে দেননি, বিনা খরচে আইনি সব সহযোগিতা করেছেন। মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি তিনি।
ওই বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে জন্মের পর থেকেই মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তাই হারিয়ে যাওয়ার সময় বয়সে কিশোরী হলেও বিস্তারিত ঠিকানা কাউকে জানাতে পারেনি। ধর্ষণের বিষয়েও সে পুলিশকে কিছুই জানাতে পারেনি। হারিয়ে যাওয়ার পর কিছু মানুষ আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, আবার একজন মানুষ মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সব মানুষ খারাপ নয়, ভালো মানুষ এখনো আছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অসহ য় ম ন ষ র উদ ধ র ক আইনজ ব ত ই আম জন ম ন ওই ন র পর ব র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের সব সংস্কার আইনের মাধ্যমেই হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
দেশের সব পরিবর্তন বা সংস্কার আইনের মাধ্যমেই হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর আদালতের জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ই-পারিবারিক আদালত’ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বলেন, পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে এখন আর আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিনা মূল্যে সেবা নেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় একজনের পরিবর্তে তিনজন বিচারককে যুক্ত করা হয়েছে।
সংস্কার ভাবনা আরও বাস্তবতার আলোকে হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব বেশি করতে পারিনি। তবে আশা করি, নতুন সরকারও এসব উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। না হলে উদ্যোগগুলো ম্লান হয়ে যাবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো দুর্বল করা যাবে না। যেকোনো প্রক্রিয়াই বাস্তবায়ন করতে গেলে তা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিতে হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংস্কারের ধারাবাহিকতার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এ পর্যন্ত ২১টি জায়গায় সংস্কার করা হয়েছে। তবে আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হলে, ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে সেগুলো টিকবে না।
ই-পারিবারিক আদালত প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নতুন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেপারলেস সিস্টেম আরও এগিয়ে যাবে। এটি আমার জন্য আনন্দের বিষয়।’
প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এই ডিজিটাল কার্যক্রম আইন পেশাজীবীদের আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা দিতে সহায়তা করবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ই-পারিবারিক আদালত বিচারব্যবস্থাকে পেপারলেস সিস্টেমের দিকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নেবে।