ফরিদপুরে গরুচোর সন্দেহে পিটুনিতে একজন নিহত, তিনজন আহত
Published: 24th, November 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দায় গরুচোর সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনিতে শাহীন মিয়া (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের ভোজেরডাঙ্গী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত শাহীন মিয়া রামনগর ইউনিয়নের গজগাহ গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে। আহতরা হলেন একই ইউনিয়নের মাশাউজান গ্রামের পারভেজ মিয়া (২৪), সুমন শেখ (২২) এবং কুঞ্জনগর গ্রামের ইনামুল সরদার (২৬)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনায় মাশাউজান গ্রামের বাসিন্দা মাহিন্দ্রাচালক সবুজ মোল্লা (২৬) পালিয়ে গেছেন। আহত তিনজনকে পুলিশ পাহারায় নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোজেরডাঙ্গী গ্রাম মূলত নির্জন এলাকা এবং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গত তিন মাসে গ্রামের বাসিন্দা মিনা ফকিরের দুটি, সাহাজান মাতুব্বরের দুটি এবং লাল মিয়ার দুটি গরুসহ মোট ছয়টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসী পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন। গতকাল গভীর রাতে মাহিন্দ্রায় চড়ে পাঁচজন গ্রামে ঢোকেন। তাঁদের নিয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। গ্রামবাসী তাঁদের ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করেন। তবে একজন পালিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময় অন্তত দুই শতাধিক মানুষ জড়ো হয়। তারা ওই চার ব্যক্তিকে পিটুনি দেয়। আধা ঘণ্টা ধরে চলে পিটুনি। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা চারজনকে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে গ্রামীণ সড়কের ওপর ফেলে রাখে।
ভোজেরডাঙ্গী এলাকায় গ্রাম পুলিশের সদস্য বায়েজিদ মোল্লা বলেন, আজ ভোর পাঁচটার দিকে তিনি আহত শাহীনকে নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পরে নগরকান্দা থানা-পুলিশ লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ গিয়াসউদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে খবর পেয়ে তিনি গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠান এবং নিজেও যান। পাশাপাশি থানা-পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে নেয়।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘গত কয়েক মাসে এলাকায় বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত ছিল। রাতে ওই ব্যক্তিদের এমন অবস্থায় দেখে তারা চোর ভেবে মারধর করেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনকে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পাই। তখন তাদের আশপাশে কেউ ছিলেন না। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়
শত বছরের বেশি আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের এক মৃত যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া একটি পকেটঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যে এক নিলামে ১৭ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে এটি বিক্রি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকা (১ পাউন্ড সমান ১৫৯.৯৫ টাকা হিসাবে)।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কগামী টইটানিক জাহাজটি আটলান্টিক মহাসাগরে বিশাল বরফখণ্ডে (হিমশৈল) ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। এতে মারা যান দেড় হাজারের বেশি যাত্রী। তাঁদেরই একজন মার্কিন ধনকুবের ইসিডর স্ট্রাউস। তিনি ছিলেন ওই জাহাজের অন্যতম ধনী যাত্রী। ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আইডাও মারা গেছেন।
জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ইসিডর স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।
স্ট্রাউস দম্পতির পরিবারের কাছে থাকা এ ঘড়ি গতকাল যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারে হেনরি অ্যালরিজ অ্যান্ড সন অকশনার্স নামের প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নিলামে বিক্রি হয়েছে।
জার্মান বংশোদ্ভূত ইসিডর স্ট্রাউস ছিলেন একজন মার্কিন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেসি’স ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মালিকদের একজন ছিলেন।
ধারণা করা হয়, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময় স্ট্রাউসের স্ত্রী আইডা স্বামীকে রেখে একা লাইফবোটে উঠতে রাজি হননি। বলেছিলেন, তিনি স্বামীর সঙ্গেই মরতে চান। পরে আইডা স্ট্রাউসের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুননিলামে ৩ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে টাইটানিকের যাত্রীর চিঠি২৭ এপ্রিল ২০২৫টাইটানিকের আনুষ্ঠানিক কাগজে লেখা এবং জাহাজে থাকা অবস্থায় পাঠানো আইডা স্ট্রাউসের একটি চিঠিও গতকালের নিলামে ১ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া টাইটানিকের যাত্রীদের একটি তালিকা ১ লাখ ৪ হাজার পাউন্ডে এবং উদ্ধারকৃত যাত্রীদের পক্ষ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্রুদের দেওয়া একটি সোনার পদক ৮৬ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
টাইটানিক–সংক্রান্ত স্মারকসামগ্রী নিয়ে আয়োজিত এ নিলামে মোট আয় হয়েছে ৩০ লাখ পাউন্ড।
স্ট্রাউসের পকেটঘড়িটি রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসে থেমে গিয়েছিল। মূলত ওই সময়েই টাইটানিক জাহাজটি পানিতে তলিয়ে যায়।
ধারণা করা হয়, ১৮৮৮ সালে আইডা তাঁর স্বামীর ৪৩তম জন্মদিনে ঘড়িটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ঘড়িটির ওপর স্ট্রাউসের আদ্যক্ষর খোদাই করা আছে।
উদ্ধারের পর ঘড়িটি স্ট্রাউসের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘড়িটি সংরক্ষিত থাকে। একপর্যায়ে ইসিডরের প্রপৌত্র কেনেথ হলিস্টার ঘড়িটি মেরামত করান। এটি আবার সচল হয়।
নিলামকারী অ্যান্ড্রু অ্যালড্রিজ মনে করেন, ঘড়িটি রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, টাইটানিকের কাহিনির প্রতি মানুষের এখনো আগ্রহ আছে। তিনি আরও বলেন, ‘নারী, পুরুষ বা শিশু—প্রত্যেক যাত্রীরই একটি গল্প ছিল। আর ১১৩ বছর পরও সে গল্পগুলো স্মারকসামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।’
টাইটানিক থেকে ৭০০-এর বেশি যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্যাপ্টেনকে উপহার হিসেবে দেওয়া একটি সোনার পকেটঘড়ি গত বছর ১৫ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছিল। দামের দিক থেকে এটি সে সময় রেকর্ড করেছিল।
আরও পড়ুনটাইটানিকের যাত্রী মার্কিন ধনকুবেরের সেই সোনার ঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি২৯ এপ্রিল ২০২৪