মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আজ বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ সকাল ৬টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা নিচের দিকেই থাকতে পারে। এটি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

তাপমাত্রা কম থাকলেও আজ সকাল থেকে শ্রীমঙ্গলে সূর্যের দেখা মিলেছে। ঝলমলে রোদ কিছুটা উষ্ণতা দিয়েছে। শহর ও শহরের বাইরের বেশ কিছু এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সন্ধ্যার পর শহরে ঠান্ডার মাত্রা তুলনামূলক কিছুটা কম থাকলেও গ্রাম ও চা-বাগান এলাকায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঠান্ডায় বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। চা-বাগানে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় কাজে সমস্যা হচ্ছে চা–শ্রমিকদের।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মোশাররফ করিম মিডলাইফ ক্রাইসিসে, এবার নতুন রূপে

নব্বইয়ের দশকে মঞ্চনাটকের ভেতর দিয়ে অভিনয়জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন মোশাররফ করিম। সময়ের সঙ্গে সেই যাত্রা বিস্তৃত হয়েছে টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র এবং সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত। আজ পর্যন্ত তাঁর কাজের পরিধি ও বৈচিত্র্য এতটাই বিস্তৃত যে একটি নির্দিষ্ট অভিনয়ছাঁচে মোশাররফ করিমকে আটকে রাখা কঠিন। সিরিয়াস, সংযত, দগ্ধ কিংবা নিঃসঙ্গ—মানুষের ভেতরের গভীর সংকট ও অদৃশ্য ক্ষয়কে পর্দায় জীবন্ত করে তোলাই হয়ে উঠেছে তাঁর অভিনয়ের প্রধান শক্তি।

‘মহানগর’-এর ওসি হারুন থেকে ‘মোবারকনামা’র মোবারক—মোশাররফ করিম মানেই দুর্দান্ত সংলাপ ডেলিভারি, শরীরী ভাষার সূক্ষ্ম ব্যবহার ও চোখে-মুখে চরিত্র হয়ে ওঠার অনন্য ক্ষমতা। ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘মহানগর’সহ একাধিক নাটক ও সিরিজে তিনি দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন একেবারে আলাদা ধাঁচের চরিত্র, যেখানে প্রকাশের চেয়ে গোপন কষ্টই বেশি প্রাধান্য পায়।

কঠোর পুলিশ কর্মকর্তার দৃঢ় মুখচ্ছবি হোক, কিংবা নৈতিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত এক সাধারণ মানুষের নীরব অসহায়ত্ব—প্রতিটি চরিত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের ছাপ। অনাড়ম্বর অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অপ্রকাশ্য আবেগ আর ভেতরের টানাপোড়েনকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাই তাঁর অভিনয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি।

এবার নতুন চরিত্রে
তবে এত বছরের অভিনয়জীবনে একটি জায়গায় কখনো প্রবেশ করেননি মোশাররফ করিম—কমেডিয়ান চরিত্রে। বিশেষ করে স্ট্যান্ড-আপ কমেডি, যেখানে মানুষের দৈনন্দিন যন্ত্রণা, হতাশা ও ব্যর্থতাকেই হাসির ভাষায় প্রকাশ করতে হয়। সেই না-করা কাজটাই এবার করে ফেললেন তিনি। দেশের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির অরিজিনাল ফিল্ম ‘ডিমলাইট’-এ প্রথমবারের মতো অভিনয় করছেন একজন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান চরিত্রে। এখানে তিনি এমন এক মধ্যবয়সী মানুষ, যে মানুষকে হাসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে; কিন্তু নিজের জীবনের হাসিটাই হারিয়ে ফেলেছে।

হাসির আড়ালে মধ্যবয়সী জীবনের সংকট
‘ডিমলাইট’ কেবল একটি কমেডি নয়। এই সিনেমা মূলত হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক গভীর সংকটের গল্প বলে। মোশাররফ করিমের চরিত্রটি ভুগছেন তথাকথিত মিডলাইফ ক্রাইসিসে। যেখানে দায়িত্ব, সংসার, কাজ আর সম্পর্কের চাপে ধীরে ধীরে আলো-আঁধারিতে ঢাকা পড়ে জীবনের মূল অনুভূতিগুলো। নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবনের ভাষায়, জীবনের অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো প্রচণ্ড আলোতেও দেখা যায় না আবার ঘুটঘুটে অন্ধকারেও নয়। সেগুলো দেখতে দরকার পরিমিত আলো, ঠিক সেই কারণেই ‘ডিমলাইট’। এই প্রতীকী আলোতেই দর্শক দেখতে পাবেন মোশাররফ করিমের একেবারে ভিন্ন রূপ।

চরকি ও ‘ডিমলাইট’-এর পথচলা
চরকিতে ‘ডিমলাইট’-এর প্রথম আনুষ্ঠানিক ইঙ্গিত দেয় ২০ নভেম্বর। সেদিন চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়, ‘মোশাররফ করিম চরকিতে ফিরছেন আরও একটি নতুন রূপে! কিন্তু কী নিয়ে?’ এই রহস্যময় পোস্ট দর্শকদের কৌতূহল তৈরি করে। তিন দিন পর, ২৩ নভেম্বর আরেকটি পোস্টে লেখা হয়,‘লাইফটাই একটা জোক, আর সবচেয়ে বড় জোক মিডলাইফ ক্রাইসিস।’ এই দুই পোস্ট থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, হাস্যরসের মোড়কে জীবনের গভীর কোনো সংকট নিয়েই কথা বলবে ‘ডিমলাইট’।

২৫ নভেম্বর প্রকাশিত অফিশিয়াল পোস্টারে নিশ্চিত করা হয়, এটি মিনিস্ট্রি অব লাভ প্রজেক্টের ষষ্ঠ চলচ্চিত্র। পোস্টারের ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস, থুক্কু ডিমলাইট ক্রাইসিস!’ যেখানে নির্মাতারা মিডলাইফ ক্রাইসিসকে প্রতীকের মাধ্যমে ‘ডিমলাইট ক্রাইসিস’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

নির্মাতা, শিল্পী ও গল্পের ভেতরের মানুষগুলো
সেনসেশন কনডমস প্রেজেন্টস চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘ডিমলাইট’ পরিচালনা করেছেন শরাফ আহমেদ জীবন। গল্প, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নাহিদ হাসনাত। সিনেমাটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন নিজেই। মোশাররফ করিমের সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন তানজিকা আমিন ও পারসা ইভানা। তানজিকা আমিন বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল এই গল্পটা এখনকার সময়ের এবং এখনই বলা উচিত। এটা একেবারেই জীবনের গল্প।’ পারসা ইভানার ভাষ্যে, ‘গল্পটায় হিউমার আছে, আবার ক্রাইসিসও আছে। খুব রিলেটেবল। আমরা যে জীবনটা লিড করি, ঠিক সেটারই গল্প সহজভাবে বলা হয়েছে।’ এটাই চরকির প্রজেক্টে পারসা ইভানার প্রথম কাজ।

মোশাররফ করিমের চোখে ‘ডিমলাইট’
‘ডিমলাইট’-এর গল্পটিকে মোশাররফ করিম দেখছেন আরও ভেতরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমাদের জীবনে নিত্যদিনের কাজ—চিনি কেনা, টুথপেস্ট, বাচ্চার স্কুলের ফি—এসবের একেকটা আবরণ আছে। সেই আবরণে ঢাকা পড়ে সম্পর্ক। আর তখন আর ফুল থাকে না, ফুলের ঘ্রাণও থাকে না।’ এই আবরণগুলোর নিচেই ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায় ভালোবাসা, সম্পর্ক ও আত্মপরিচয়—এমনটাই মনে করেন এই অভিনেতা।

মিনিস্ট্রি অব লাভ ও প্রত্যাশার জায়গা
চরকির মিনিস্ট্রি অব লাভ প্রজেক্ট থেকে এর আগে মুক্তি পেয়েছে ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ‘ফরগেট মি নট’ ও ‘৩৬-২৪-৩৬’। প্রতিটি সিনেমাই সম্পর্কের ভিন্ন ভিন্ন দিক তুলে ধরে দর্শক-সমালোচকের প্রশংসা পেয়েছে।

চরকির প্রধার নির্বাহী রেদওয়ান রনি বলেন, ‘আমরা সময় নিয়ে কাজ করি। কারণ, ভালো কনটেন্টের জন্য দর্শক অপেক্ষা করতেও রাজি থাকেন।’ সহ-প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছবিয়ালের কর্ণধার নুসরাত ইমরোজ তিশার ভাষ্য, ‘আমরা বিশ্বাস করি, “ডিমলাইট”-ও মিনিস্ট্রি অব লাভের আগের কাজগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।’

নতুন অধ্যায়, নতুন প্রত্যাশা
মঞ্চনাটক থেকে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ওটিটিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া মোশাররফ করিম এবার হাসির আড়ালে জীবনের নির্মম সত্য তুলে ধরতে যাচ্ছেন। বলা যায়, ‘ডিমলাইট’ শুধু একটি নতুন চলচ্চিত্র নয়, এটি তাঁর অভিনয়জীবনেরও এক নতুন অধ্যায়। দর্শকের কৌতূহল তাই স্বাভাবিকভাবেই তুঙ্গে। সিরিয়াস চরিত্রে অভ্যস্ত এই অভিনেতা, হাসাতে এসে শেষ পর্যন্ত দর্শককে কোথায় নিয়ে যান, সেই অপেক্ষাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ