জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ছয়টি আবাসিক হলের নির্মাণকাজের সব খরচের নথিপত্র দেওয়ার দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন হল সংসদের প্রতিনিধিরা।

আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রকল্প কার্যালয়ের ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন জাকসুর দুজন প্রতিনিধিসহ ছয়টি হলের সংসদের প্রতিনিধিরা। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকেও সেখানে তালা ঝুলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১০ তলাবিশিষ্ট ছয়টি হল নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালে এসব হল (শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, ২১ নম্বর ছাত্র হল, ফজিলাতুন্নেছা হল, বীর প্রতীক তারামন বিবি হল, রোকেয়া হল) উদ্বোধন করা হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, গত প্রশাসনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ছয়টি ১০ তলাবিশিষ্ট ভবনে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়ম হয়েছে। সম্প্রতি অনুভূত হওয়া ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে নতুন হলগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। তাঁরা প্রকল্প কার্যালয় থেকে নির্মিত এসব হলের নির্মাণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খরচের নথিপত্র, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিপত্র, কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে তার প্রমাণপত্র, মাটি পরীক্ষার প্রমাণপত্র, ভবনের নকশার প্রমাণপত্র ইত্যাদির নথিপত্র দেখার জন্য এসেছেন। এসব নথিপত্র না দেওয়া পর্যন্ত ভবনে তালা দেওয়া থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মোহা.

সিফাতউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন ছয়টি হল নির্মাণের শুরু থেকে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ প্রশাসন সেসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে লুটপাট করেছিল। তার প্রমাণ গত ভূমিকম্পে আমরা দেখেছি। এসব স্থাপনা নির্মাণের সব নথিপত্র আমরা দেখতে চাই। কারণ, ভূমিকম্পের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিন পার করছে। নথিপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হতে চাই, ভবন নির্মাণের কাজগুলো ঠিকঠাক ছিল নাকি কতটা গভীরে লুটপাট হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (পিডি) নাসিরুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা হল নির্মাণের বিভিন্ন ডকুমেন্টস (নথি) চাচ্ছে। আমি তাদের বলেছি, আমি প্রশাসনকে অবগত করব। কারণ, কোনো বিষয়ে তো আমি একা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকালে আমাদের তিনজন কর্মচারী অফিসে এসেছিলেন। তাঁদের বের করে দিয়ে তাঁরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি ইউজিসির একটা ওয়ার্কশপে ছিলাম। আমাকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে, এক ঘণ্টার মধ্যে না এলে তাঁরা আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে। আমি ওয়ার্কশপ রেখে চলে এসেছি।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে

সারা দেশে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গতকাল রোববার বিচারগানের আসরের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। তবে অনুষ্ঠানটি জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গতকাল রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।


প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। গানের উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছিল—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজকদের অনুরোধ করলে তাঁরা গান বন্ধ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, আয়োজক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি শিক্ষার্থীভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে গানের উচ্চ শব্দে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোস্ট করেন। রাত ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যায়।

প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।”নবীন কিশোর গোস্বামী, আয়োজকদের একজন

এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আয়োজকদের শব্দ কমানোর এবং রাত ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানান। এরপর আয়োজকেরা শব্দ কমিয়ে অনুষ্ঠান চালাতে থাকেন।

রাত ১টার দিকে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান চালাবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে সোয়া একটার দিকে তাঁরা হ্যান্ডমাইক ও ছোট সাউন্ডবক্স নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গান বাজাতে থাকেন।

রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।সিফাতউল্লাহ সিফাত, ভিপি, তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদ

একপর্যায়ে প্রক্টর পরিবহন চত্বরে ‘বাউলের দ্রোহের’ মঞ্চে গিয়ে আয়োজকদের গান বন্ধ করতে বলেন। তখন আয়োজকদের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এ সময় প্রক্টর দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদকে গালিগালাজও করেন।

আয়োজকদের অন্যতম নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নবীন কিশোর গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের সাউন্ড ছিল খুবই কম। শুধু মনিটরে সাউন্ড ছিল। তারপরও প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।” অনেক মানুষ সাক্ষী আছেন।’

পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।এ কে এম রাশিদুল আলম, প্রক্টর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অন্যদিকে গভীর রাতে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান বাজান কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সিফাতউল্লাহ সিফাত বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।’

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউল সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বললেন, পেটালে পিটুনি খাব২৪ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। কারণ, তাদের পরীক্ষা চলছে, এখন পরীক্ষার মৌসুম। অনেক শিক্ষার্থী গানের উচ্চ শব্দে মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চায় এবং সে সময়ের পর আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।’

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আরেকদল শিক্ষার্থীর গান বাজানো প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, ‘পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে