বিএনপির কেউ তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করলে ইসি কি ঠেকাতে পারবে, প্রশ্ন এনসিপির
Published: 19th, November 2025 GMT
নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রথম সংলাপে অংশ নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাতে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগ করার সামর্থ্য ইসির আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দলটি।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিবন্ধিত ৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয় এনসিপি। এক দিন আগেই নিবন্ধন পাওয়া এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা সংলাপে অংশ নেন।
নির্বাচনী আচরণবিধির ৭ ধারার চ উপধারাই ইসির ‘প্রথম পরীক্ষা’, এমন মন্তব্য করে এনসিপি নেতা জহিরুল ইসলাম সংলাপে বলেন, ‘বিএনপির বর্তমান প্রধান হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমানের ছবি বিএনপির কোনো প্রার্থী যদি ব্যবহার করেন, তাহলে কমিশনকে তার ওপর এই বিধিমালা প্রয়োগ করতে হবে। তখন এই কমিশনের সক্ষমতাটা দেখা যাবে।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য যে নির্বাচনী আচরণবিধিমালা প্রণয়ন করেছে, তার ৭ ধারার চ উপধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী কেবল তাঁর বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যানার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ও ফেস্টুন ছাপাতে পারবে। কোনো পোস্টারও ছাপানো যাবে না।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল এনসিপি সংলাপে বলেছে, এই আচরণবিধিমালা বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি, নির্বাচনী উৎসবের আমেজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
জহিরুল ইসলাম বলেন, বিধিমালার মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কাপড় এবং চটের তৈরি ব্যানার করতে হবে। দেশে চটের ওপর প্রিন্ট দেওয়ার কয়টি প্রতিষ্ঠান আছে? প্রত্যন্ত এলাকায় এই সুযোগ আরও কম।
আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, সাউন্ডবক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা হতে পারবে ৬০ ডেসিবেল। এই শব্দ পরিমাপ করবে কারা, সেই প্রশ্ন তুলে জহিরুল বলেন, ‘কয়জনের কাছে এই যন্ত্র রয়েছে? এ বিষয়ে অভিযোগটা কার কাছে জানাতে হবে, সেই বিষয়ও স্পষ্ট নয়।’
জহিরুল বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সংক্ষুব্ধ কেউ তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ দিতে পারবেন, এমন কথা বিধিমালায় বলা আছে। তবে আইনের সংজ্ঞায় তদন্ত কমিটির কোনো সংজ্ঞায়ন করা হয়নি। প্রক্রিয়াটিকে জটিল এবং সময়ক্ষেপণের একটা উদ্দেশ্য আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, সবাই নির্বাচন কমিশনকে একটি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যদি কমিশনের কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাঁর বিরুদ্ধে করণীয় কী হবে, এ বিষয়টিও স্পষ্ট নয়।
জহিরুল মনে করেন, এই আচরণবিধির মাধ্যমে কাঠামোগতভাবে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
আচরণবিধির ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার একই মঞ্চে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার পাঠ এবং আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন এবং ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দলের প্রতিনিধি টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃক আয়োজিত নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিতে পারবেন, তবে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
এ দুটি ধারাকে সাধুবাদ জানিয়ে এগুলোকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান জহিরুল ইসলাম।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে সহিংসতার একটা বড় সম্পর্ক দেখিয়ে তিনি বলেন, কোনো দলের অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় কেউ নিহত বা আহত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে—এমন বিধান যুক্ত করা উচিত।
ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণভোটের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে, সংলাপে তা জানতে চান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি তার স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখতে পারে এবং তার প্রতিশ্রুতি যদি সংবিধানের কাছে হয়, কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে না হয়, তাহলে এনসিপি নির্বাচন কমিশনকে শতভাগ সহযোগিতা করবে।
জোটের প্রার্থী নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এমন সংশোধনকে সাধুবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকার আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল আচরণব ধ ন বন ধ এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ: সিইসি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শুরু হয়েছে। সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দুই পর্বের এই সংলাপের প্রথম পর্ব শুরু হয়।
সংলাপে অংশ নেওয়া বাকি পাঁচটি দল হলো বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, সংলাপের মূল উদ্দেশ্য দুটি। আচরণবিধি পরিপালন নিয়ে আলোচনা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দলগুলোর সহযোগিতা নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশন একা নয়, সুন্দর–গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আচরণবিধির খসড়া করার সময় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া অনেকগুলো সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওয়েবসাইটে দিয়ে জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মতামত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে সুন্দর নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি প্রস্তুত নয়, পরিপালনটাই গুরুত্বপূর্ণ।
গত কয়েকটি নির্বাচনের কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রবিমুখ হয়েছে উল্লেখ করেন নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে একটা ভাবনা ছিল যে ভোট হয়তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে।
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের অঙ্গীকার করার আহ্বান জানান সিইসি।
বেলা আড়াইটায় বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদসহ আরও ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপের কথা রয়েছে ইসির।