বিএনপির আড়াই দশকের ‘কোন্দল’ অবসানে উচ্ছ্বসিত নেতা–কর্মীরা
Published: 19th, November 2025 GMT
কুমিল্লা–৯ আসনে (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ) বিএনপির ‘কোন্দল’ বেশ পুরোনো। প্রায় ২৫ বছর ধরে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল আজিম ও বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলার সভাপতি মো. আবুল কালামের অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি করে আসছেন। সম্প্রতি তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে ঢাকায় বৈঠকের পর সেই কোন্দলের অবসান হয়েছে। এতে উচ্ছ্বসিত দুই উপজেলার নেতা–কর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা–৯ আসনে ‘আজিম গ্রুপ’ ও ‘কালাম গ্রুপ’–এ বিভক্ত হয়ে বিএনপির রাজনীতি করেন দুই উপজেলার নেতা–কর্মীরা। চলতি বছরের ৩১ মে আনোয়ার উল আজিম মারা গেলেও কোন্দল শেষ হয়নি। আনোয়ার উল আজিমের মেয়ে সামিরা আজিম (দোলা) বাবার জায়গায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে ৩ নভেম্বর আবুল কালামকে কুমিল্লা–৯ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিলে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য মাঠে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন সামিরা আজিম।
তারেক রহমানের নির্দেশে ১৪ নভেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে আবুল কালাম ও সামিরা আজিমকে নিয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে সামিরা আজিমকে ফোন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তারেক রহমান। দীর্ঘ আলোচনা শেষে দুজনকে ‘গ্রুপিং’ ভুলে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। এরপর দলের সিদ্ধান্ত মেনে আবুল কালামকে নির্বাচনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন সামিরা আজিম। এ ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, আনোয়ার উল আজিমের সঙ্গে আবুল কালামের দ্বন্দ্বের শুরু ২০০১ সালের নির্বাচনের সময়। তখন আনোয়ার উল আজিমকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আনোয়ার উল আজিমকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রতিটি নির্বাচনে আবুল কালাম মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আনোয়ার উল আজিমের মৃত্যুর পর এবার মনোনয়ন পান আবুল কালাম। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আনোয়ার উল আজিমের মেয়ে সামিরা আজিম। চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য তিনি মাঠে সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে ৯ নভেম্বর লাকসামে সামিরার গাড়িবহরে হামলা হলে আবুল কালামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে নেতাদের নিয়ে ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়।
ঢাকায় বৈঠকের পর ১৫ নভেম্বর লাকসাম উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে আবার বসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা (বুলু)। সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবুল কালাম ও সামিরা আজিম নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন। ওই বৈঠকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহেরের (সুমন) সভাপতিত্বে ও বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার পরিচালনায় দলের জেলা কমিটি ও স্থানীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, “ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।” আমিও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই আসনে বিএনপিতে এখন আর কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা সবাই দলের পক্ষে, ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। আমরা এক এবং অভিন্ন।.
এ বিষয়ে সামিরা আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আস্থা ও ভরসার শেষ জায়গা হচ্ছে তারেক রহমান। তিনি আমাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমি তাঁর কথা মেনে নিয়েছি এবং আমার নেতা–কর্মীদের পক্ষে কিছু আবেদন ও দাবি জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। ঢাকা ও লাকসামের বৈঠকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও একই আশ্বাস দিয়েছেন সেগুলো মেনে নেওয়ার। আশা করছি, সেগুলো শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে।’
দুই পক্ষের ঐক্যে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা উচ্ছ্বসিত বলে জানিয়েছেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার জাহান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ অনেক আগে থেকেই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বিএনপি বড় দল হওয়ায় কিছুটা দ্বিধাবিভক্তি ছিল। তবে ঐক্যের কারণে নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত। তাঁরা ধানের শীষের পক্ষে এক ও অভিন্নভাবে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘তারেক রহমানের হস্তক্ষেপের কারণেই এই ঐক্য সম্ভব হয়েছে। এই ঐক্যে নেতা–কর্মীরা ভীষণ খুশি। তারেক রহমান দোলার দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করছি, তিনিও মূল্যায়িত হবেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ র স ক ন দল র জন ত কর ম র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির আড়াই দশকের ‘কোন্দল’ অবসানে উচ্ছ্বসিত নেতা–কর্মীরা
কুমিল্লা–৯ আসনে (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ) বিএনপির ‘কোন্দল’ বেশ পুরোনো। প্রায় ২৫ বছর ধরে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল আজিম ও বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলার সভাপতি মো. আবুল কালামের অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি করে আসছেন। সম্প্রতি তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে ঢাকায় বৈঠকের পর সেই কোন্দলের অবসান হয়েছে। এতে উচ্ছ্বসিত দুই উপজেলার নেতা–কর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা–৯ আসনে ‘আজিম গ্রুপ’ ও ‘কালাম গ্রুপ’–এ বিভক্ত হয়ে বিএনপির রাজনীতি করেন দুই উপজেলার নেতা–কর্মীরা। চলতি বছরের ৩১ মে আনোয়ার উল আজিম মারা গেলেও কোন্দল শেষ হয়নি। আনোয়ার উল আজিমের মেয়ে সামিরা আজিম (দোলা) বাবার জায়গায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে ৩ নভেম্বর আবুল কালামকে কুমিল্লা–৯ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিলে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য মাঠে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন সামিরা আজিম।
তারেক রহমানের নির্দেশে ১৪ নভেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে আবুল কালাম ও সামিরা আজিমকে নিয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে সামিরা আজিমকে ফোন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তারেক রহমান। দীর্ঘ আলোচনা শেষে দুজনকে ‘গ্রুপিং’ ভুলে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। এরপর দলের সিদ্ধান্ত মেনে আবুল কালামকে নির্বাচনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন সামিরা আজিম। এ ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, আনোয়ার উল আজিমের সঙ্গে আবুল কালামের দ্বন্দ্বের শুরু ২০০১ সালের নির্বাচনের সময়। তখন আনোয়ার উল আজিমকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এরপর ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আনোয়ার উল আজিমকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রতিটি নির্বাচনে আবুল কালাম মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আনোয়ার উল আজিমের মৃত্যুর পর এবার মনোনয়ন পান আবুল কালাম। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আনোয়ার উল আজিমের মেয়ে সামিরা আজিম। চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য তিনি মাঠে সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে ৯ নভেম্বর লাকসামে সামিরার গাড়িবহরে হামলা হলে আবুল কালামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে নেতাদের নিয়ে ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়।
ঢাকায় বৈঠকের পর ১৫ নভেম্বর লাকসাম উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে আবার বসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা (বুলু)। সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবুল কালাম ও সামিরা আজিম নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন। ওই বৈঠকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহেরের (সুমন) সভাপতিত্বে ও বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার পরিচালনায় দলের জেলা কমিটি ও স্থানীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, “ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।” আমিও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই আসনে বিএনপিতে এখন আর কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা সবাই দলের পক্ষে, ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। আমরা এক এবং অভিন্ন।... আমাদের নেতা তারেক রহমান সামিরা আজিম দোলার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি যোগ্য স্থানে মূল্যায়িত হবেন।’
এ বিষয়ে সামিরা আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আস্থা ও ভরসার শেষ জায়গা হচ্ছে তারেক রহমান। তিনি আমাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আমি তাঁর কথা মেনে নিয়েছি এবং আমার নেতা–কর্মীদের পক্ষে কিছু আবেদন ও দাবি জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। ঢাকা ও লাকসামের বৈঠকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও একই আশ্বাস দিয়েছেন সেগুলো মেনে নেওয়ার। আশা করছি, সেগুলো শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে।’
দুই পক্ষের ঐক্যে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা উচ্ছ্বসিত বলে জানিয়েছেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার জাহান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ অনেক আগে থেকেই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বিএনপি বড় দল হওয়ায় কিছুটা দ্বিধাবিভক্তি ছিল। তবে ঐক্যের কারণে নেতা–কর্মীরা উজ্জীবিত। তাঁরা ধানের শীষের পক্ষে এক ও অভিন্নভাবে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘তারেক রহমানের হস্তক্ষেপের কারণেই এই ঐক্য সম্ভব হয়েছে। এই ঐক্যে নেতা–কর্মীরা ভীষণ খুশি। তারেক রহমান দোলার দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করছি, তিনিও মূল্যায়িত হবেন।’