মোহনীয় সৌন্দর্যের মাধবপুর লেকের নিস্তব্ধতা ভাঙে কৃষ্ণ দাসের বাঁশির সুরে
Published: 20th, November 2025 GMT
লেকের স্বচ্ছ জলে লুটোপুটিতে মেতেছে নীল শাপলা। চা–বাগানের টিলার ঢেউখেলানো প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠেছে লেকটি। এটির ওপর সকালবেলায় ভেসে থাকে হালকা কুয়াশার আবরণ, দুপুরে জলের গভীরে উঁকি দেয় ঝলমলে আকাশের প্রতিচ্ছবি, আর সন্ধ্যার নরম আলো দ্রুত হারাতে থাকে অদূর পাহাড়ের গা ছুঁয়ে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরে এই লেকের প্রতিটি ভোর, দুপুর আর বিকেল যেন ভিন্ন ভিন্ন সব দৃশ্যপটের জন্ম দেয়।
লেকের এমন মোহনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আরেকটি জিনিস আকর্ষণ করে পর্যটকদের, সেটি হলো কৃষ্ণ দাসের বাঁশির সুর। লেকের চারপাশে প্রায়ই স্তব্ধতা ঘিরে ধরে, নিয়ম মেনে সেই নীরবতা ভাঙেন তিনি। কখনো বসে, দাঁড়িয়ে এবং চোখ বন্ধ করে আপন মনে সুর তোলেন। তাঁর বাঁশির সুর লেক ছাপিয়ে বাতাসে ভেসে ভেসে যায় দূর পাহাড়ের গায়ে। কখনো প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। প্রকৃতির এমন নিবিড় নীরবতা, লেকের শীতল হাওয়ার মাদকতা আর কৃষ্ণ দাসের মর্মস্পর্শী বাঁশির সুরে মিলেমিশে মাধবপুর লেক হয়ে ওঠে আরও উপভোগ্য।
প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাধবপুর লেকর পাড়ের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বাঁশি বাজান ৪৫ বছর বয়সী কৃষ্ণ দাস। পর্যটকেরা কেউ হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ান, মুগ্ধতা নিয়ে হারাতে চান কৃষ্ণ দাসের বাঁশির সুরেলা ভুবনে। কেউ কেউ পাশেই কয়েক মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে শোনেন, কেউ আবার মুঠোফোনে বন্দী করেন অসাধারণ মুহূর্তটি। অনেকেই খুশি হয়ে কৃষ্ণের হাতে গুঁজে দেন কিছু টাকা, কেউ আবার শুনিয়ে যান মুগ্ধতার কথা। এই সামান্য আয় দিয়ে স্ত্রী আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার চালান।
গত শুক্রবার নিজের গল্প বলতে গিয়ে কৃষ্ণ দাসের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে নানা অভিজ্ঞতার রেখা। তাঁর ভাষায়, ‘ছোটবেলা থেকেই বাঁশির সুর আমাকে টানত। ভারত থেকে এই বাঁশি বাজানো শিখেছি। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই কাজ করেছি। এখন এই বাঁশিই আমার জীবনের প্রধান ভরসা। লেকে যারা আসে, তারা সুর শুনে খুশি হয়। কেউ কেউ ১০, ২০ টাকা দেয়।’
অনেক পর্যটক কৃষ্ণ দাসের বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান। কেউ কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করেন। কেউ খুশি হয়ে তুলে দেন টাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ধবপ র
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি যুবরাজের সমালোচক জামাল খাশোগি যেভাবে মারা হয়েছিলো
জামাল খাশোগি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সৌদি সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং লেখক। একসময়ের রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। পরে রাজপরিবারের একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। সৌদি রাজপরিবারের বৃত্তি নিয়ে জামাল খাশোগি যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি আল-আরাব নিউজ চ্যানেল-এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন। কিন্তু খাশোগির লেখায় ক্রমাগত স্থান পাচ্ছিলো সৌদি রাজতন্ত্রের নানা নেতিবাচক দিক। বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের।
২০১৭ সালের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর কড়া সমালোচক হিসেবে খাশোগি তার রোষানলে পড়েন। অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেকে বাঁচাতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে যান তুরস্কে।
আরো পড়ুন:
খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ: ট্রাম্প
সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিতে রাজি ট্রাম্প
২০১৮ সালে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যদের দল উড়ে গিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে গত ২ অক্টোবর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। সে সময় আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে স্থান পায় খাশোগির মৃত্যুর খবর। সমালোচনায় বলা হয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এমন উচ্চ নিরাপত্তার স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটানো অসম্ভব।
তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া বিবৃতির ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক মূলত সৌদি আরবের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
খাশোগিকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে সৌদি আরব। কিন্তু সমালোচনা আরও বাড়তে থাকে। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কনস্যুলেট ভবনে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি আরব। তবে এ হত্যার পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।
ঢাকা/লিপি