এই রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে: বদিউল আলম মজুমদার
Published: 20th, November 2025 GMT
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান পুনরুজ্জীবিত করার রায়ে আনন্দিত সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, আপিল বিভাগের আজকের রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অন্যতম আপিলকারী বদিউল আলম মজুমদার।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া রায় পুরোটাই বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর ও এ-সংক্রান্ত রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে আজ রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সম্পর্কিত বিধানাবলি এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি ভবিষ্যৎ প্রয়োগ যোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে বলে রায়ে এসেছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তার মাধ্যমে দেশের নির্বাচনীব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। যার ফলে গত তিনটি নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। আজকের রায়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পর আদালত রিভিউ পিটিশনটা গ্রহণ করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছেন।
ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর থেকে এ বিষয়ে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এটা একটা অসাংবিধানিক রায় ছিল। এর পরবর্তী যে পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছে, সেটার ব্যাপারেও তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন।
বদিউল আলম মজুমদারসহ আপিলকারী চার বিশিষ্ট ব্যক্তির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আজকে রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া রায়টিকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরে এল। আজকের রায়টি সামগ্রিকভাবে এই সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই ঐতিহাসিক।
আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান পুনরুজ্জীবিত, কার্যকর ভবিষ্যতে২ ঘণ্টা আগেজ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া আরও বলেন, খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া রায়টি ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। রায়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেখা হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রুল শুনানি শুরু
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পরবর্তী শুনানির এ দিন ধার্য করেন।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। এর ধারাবাহিকতায় এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আবেদনের শুনানিতে ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুনানি শুরু হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। শুনানির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়। ২০১৫ সালের পিপিপি আইন ও ২০১৭ সালের জিটুজির নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দায়িত্ব দিতে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। জিটুজি হচ্ছে সরকার টু সরকার। ডিপি ওয়ার্ল্ড সরকার নয়, একটি কোম্পানি। পিপিপি আইন অনুসারে এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি বোর্ড অব গভর্নরস থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমানে সংসদ না থাকায় সেই বোর্ড অব গভর্নরস অনুপস্থিত। মূল্যায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও বোর্ড অব গভর্নরসের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আইন অনুসারে বোর্ড অব গভর্নরস না থাকার কারণে এ–সংক্রান্ত মূল্যায়ন কমিটি গঠনসহ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ আইনসম্মত নয়।
এরপর রিটের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব উপস্থিত ছিলেন।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন চলতি বছর রিট করেন। রুলে দেশি অপারেটরদের (প্রতিষ্ঠান) অনুমতি না দিয়ে পিপিপি আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুলের ওপর আজ শুনানি শুরু হলো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।