গবেষণার চিত্র ও পোস্টার প্রদর্শনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বিশ্ব নগর–পরিকল্পনা দিবস পালিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় র‍্যালির মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্বের উদ্বোধন হয়। এ সময় চিত্র প্রদর্শন ও পোস্টার প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। এতে বিভাগটির শিক্ষার্থীদের মোট ৫০টি গবেষণাবিষয়ক প্যানেল প্রদর্শন করা হয়।

‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে পূর্ব–প্রস্তুতিমূলক পরিকল্পনা’ প্রতিপাদ্যে এ অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অতিথিরা শহরকে টেকসই, নিরাপদ, সুপরিকল্পিত ও বসবাসযোগ্য করে তুলতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান পটভূমিতে সময়ের আগে প্রস্তুতি নেওয়াই টেকসই উন্নয়নের পথ তৈরি করবে। নগর–পরিকল্পনাকারীরাই পরিকল্পনা–সচেতন, প্রযুক্তি–দক্ষ ও মানবকেন্দ্রিক বাংলাদেশ গড়ার পরবর্তী ধাপের নেতৃত্ব দেবে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে স্থাপত্য ও পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো.

রাশিদুল হাসান বলেন, ‘চুয়েটের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে ইপসা ও সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় আজকের অনুষ্ঠান আয়োজন করে আমরা সত্যি আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে ও কর্মক্ষেত্রে আরও আত্মবিশ্বাসী করবে বলে আশা করছি।’

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ফৌজিয়া গুলশানা রশিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি আক্তার মাহমুদ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের পোর্টফোলিও ম্যানেজার এনিকা লফ, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক মোস্তাক হোসাইন, চট্টগ্রাম মাস্টারপ্ল্যান প্রজেক্টের পরিচালক ও পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক পরিচালক নাসিম বানু প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। জানতে চাইলে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদ বিন শাহজাহান প্রথম আলোকে জানান, ‘সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমেই আমরা একটি টেকসই ও নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে পারি।’

আয়োজকেরা জানান, আজ সন্ধ্যা ছয়টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠান শেষ হবে। এ আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন, রয়েল সিমেন্ট ও জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র নগর ও

এছাড়াও পড়ুন:

নিজেকে বোরিং পারসন মনে করেন মুশফিক

রংচটা ক্যাপ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—মুশফিকুর রহিমের প্রায় মিনিট বিশেকের সংবাদ সম্মেলনে উঠে এল পুরো ২০ বছরের পথচলাই। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার উপলক্ষ ঘিরে গত কদিন ধরে তাঁর জন্য স্তুতিবাক্য ভেসে এসেছে সব জায়গা থেকেই।

সাবেক ও বর্তমান সতীর্থ, কোচ, ভক্ত, ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট সবার মুখেই মুশফিকের পরিশ্রম আর নিয়মানুবর্তিতার গল্প শোনা যাচ্ছে। শততম টেস্টের উপলক্ষের ম্যাচে মিরপুর টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে আরও রাঙিয়েছেন মুশফিক।
এরপর আজ সংবাদ সম্মেলনে এলে নিজের আয়নায় কেমন, তা জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। মুশফিকের উত্তরের প্রথম বাক্যটা হাসির রোলই ফেলে দেয় সংবাদ সম্মেলনে, ‘সত্যি কথা যদি বলি, আমি একজন বোরিং পারসন।’

কেন নিজেকে ‘বোরিং পারসন’ মনে করেন, সেটির একটি ব্যাখ্যাও দেন মুশফিক, ‘প্রতিদিন অনুশীলনে আমি একই কাজ বারবার করে যাই। ২০ বছর ধরে করছি, নাকি পরে আরও ৪০ বছর বেঁচে থেকে তা করব, এটা কোনো ব্যাপার নয়। যদি নিজের ও দলের জন্য তা দরকারের হয়, আমি এটা করে যেতে পারব। পেশাদারির জায়গায় কোনো ছাড় নেই। আমি শূন্য করলাম নাকি ১০০, এটা আমার সাফল্য নয়; কারণ, এটা আমার হাতে নেই। চেষ্টা, প্রসেস, সততাটা আমার হাতে আছে। আমার জীবনে এটাই একমাত্র মোটো। এটা শুধু ক্রিকেটে না, আমার জীবনের সবকিছুতেই।’

২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় মুশফিকের। মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে পূর্ণ হয়েছে ১০০ টেস্ট। এই পথচলায় ৩টি ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে ১২টি সেঞ্চুরি করেছেন, এই সংস্করণে রান করেছেন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি।

পুরো পরিক্রমায় নাকি প্রক্রিয়াটা একই ছিল মুশফিকের, ‘আমি টিম হাডলেও (মাঠে ঢোকার আগের রিচুয়াল) একটা কথা বলেছি, ১০০ টেস্ট খেলেছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে প্রথম ম্যাচ খেলছি। একই রকম রোমাঞ্চ ছিল। প্রতিটা টেস্ট ম্যাচই আমার কাছে বিশেষ, প্রতিটা ম্যাচ যখন খেলতে যাই, আমি সেই প্রথমবারের মতোই প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করি। নিজের সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারি।’

পুরো যাত্রায় অনেক ত্যাগও করতে হয়েছে মুশফিককে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ক্রিকেটের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ কী ছিল তাঁর? এ প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য মুশফিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াতের প্রতি।

মুশফিক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ত্যাগ আমার স্ত্রী করেছে। কারণ, আপনারাও হয়তো জানেন বা দেখেন যে আমি একটু অন্যদের তুলনায় বেশি অনুশীলন করি। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব না, যদি আমার ঘরে এ রকম একটা পরিবেশ না থাকত।’

এরপর স্ত্রীর ত্যাগের উদাহরণও দেন মুশফিক, ‘আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলি, দেখা যায় যে আমার স্ত্রীর ওপর যে প্রত্যাশা আছে এবং সবাইকে ওভাবে ম্যানেজ করা, কিছু হলেই ওকে ফোন দিয়ে এটা সমস্যা বা জরুরি টাকার দরকার হলে বলে। আমার দিকে না এনে ও সবকিছু করতে পারে।’

নিজের দুই সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রেও স্ত্রীর ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন মুশফিক, ‘আমার দুটো বাচ্চা আছে। রাতে স্বাভাবিক ছোট বাচ্চারা সারা রাত ঘুমায় না। কিন্তু আমার কখনো একটাও নির্ঘুম রাত কাটেনি। কারণ, সে পুরাটা সময় সেই রাত জেগে বাচ্চাদের মানুষ করেছে এবং আমাকে ওই টেনশন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। যে জন্য আমি সব সময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জান্নাতুল কিফায়াতকে বিয়ে করেন মুশফিক। তখন পর্যন্ত ৪০ ম্যাচের ৭৫ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৩.৬০ গড়ে ২১৫২ রান করেন তিনি। তখনো সেঞ্চুরি ছিল মাত্র ৩টি। বিয়ের পর খেলা ৬০ টেস্টের ১০৮ ইনিংসে ৪১.৮৮ গড়ে ৪১০৫ রান করেছেন মুশফিক। এই সময়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১০ সেঞ্চুরি।

এমন বদলে দেওয়ার পেছনে স্ত্রীর ভূমিকার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মুশফিক, ‘আমার প্রায় ১১ বছরের মতো হয়েছে সংসারজীবন। কিন্তু আমি মনে করি যে আমার ক্রিকেটে যদি আপনারা ২০১৪–এর পর থেকে দেখেন, অনেক বড় প্রভাব পড়েছে। তাই তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ