রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে মঙ্গলবার দেশজুড়ে ভোগান্তিতে পড়েন লাখো রেলযাত্রী। স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে রাজশাহীতে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। রেলওয়ে বিকল্প হিসেবে বিআরটিসির ৪০টি বাস দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্য। ট্রেন বন্ধের সুযোগে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া বাড়ান মালিকরা। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ায় আজ বুধবারও ট্রেন বন্ধ থাকা প্রায় নিশ্চিত।
ট্রেন বন্ধে আমদানি-রপ্তানিও বিঘ্নিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার এই স্টেশন থেকে চারটি ট্রেন যাত্রার কথা ছিল। সোমবার রাত ২টায় এবং মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ও বেলা ২টায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের যাত্রার সূচি ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় একটি তেলবাহী ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। সিজিপিওয়াইর স্টেশন মাস্টার আবদুল মালেক জানিয়েছেন, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন চলেনি।
সকালে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মে যাত্রীশূন্য দাঁড়িয়ে আগের রাতে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেন। শতাধিক যাত্রী প্ল্যাটফর্মে জমায়েত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ট্রেন ছাড়বে আশায় অনেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। সকাল ১০টার জামালপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী কবিতা আক্তার বলেন, ‘ট্রেন যে বন্ধ, এ কথা তো রেল একবার জানাতে পারত। তাইলে আইতাম না।’
সাড়ে ১০টার দিকে স্টেশনে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি যাত্রীদের জানান, স্টেশনের বাইরে বিআরটিসির বাস অপেক্ষমাণ। যারা বাসে যেতে চান, তারা ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে যেতে পারবেন।
প্রতিদিন সারাদেশে ১১২টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এতে আসন সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। আরও ২০৬টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন হলে। এতে আড়াই লাখের বেশি যাত্রী প্রতিদিন ভ্রমণ করেন। তবে বিআরটিসি মাত্র ৪০টি বাস দিতে পেরেছে। ১১টি বিমানবন্দর স্টেশন, ১৭টি কমলাপুর, ৬টি চট্টগ্রাম স্টেশন, ৫টি বগুড়া স্টেশন ও কুমিল্লা স্টেশন থেকে যাত্রা করে। বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেছেন, সব স্টেশনে বাস রয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা সাপেক্ষে সেবা দেওয়া হবে।
তবে কমলাপুরে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান রংপুরের যাত্রী মানিক মিয়া। তিনি বলেন, বাসে যেতে কষ্ট হয় বলেই সকালের ঘুম নষ্ট করে ট্রেনের টিকিট কেটেছি। সন্তানরা বাসে উঠতে চায় না। বমি করে।
আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট যাত্রার ১০ দিন আগেই বিক্রি শুরু হয়। এ হিসেবে গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রেন না চললে টিকিটের পুরো দাম ফেরত পাবেন যাত্রীরা।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ট্রেন বন্ধ থাকায় গতকাল বিক্ষুব্ধ হয়ে যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালান। রেলের দুই কর্মচারীকে মারধর করা হয়। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেন না ছাড়ায় যাত্রীরা ওয়েটিং
রুমের বসার চেয়ার ভাঙচুর করেন। স্টেশনের ভেতরের বিভিন্ন কক্ষের দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অন্যান্য স্টেশনের মতো চট্টগ্রামেও হাজারো যাত্রী স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেন বন্ধ। বিকল্প হিসেবে ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক রুটে বিআরটিসির বাস চালু করে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার রুটের বাসে যাত্রীর চাপ বাড়ে। গতকাল দুপুরের দিকে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ (র.
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা গতকাল সকাল ১০টার দিকে স্টেশন সুপারের কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ জংশনে এলে যাত্রীদের তোপের মুখে চালক পালিয়ে যান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট র ন বন ধ ব আরট স কমল প র ১০ট র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলা, দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) সামাজিক মাধ্যম এক্সে আজ সোমবার এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা ইরানের রাজধানী তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে। খবর আল জাজিরার
কুদস ফোর্স হলো ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) বিদেশি শাখা, যা লেবানন থেকে ইরাক, ইয়েমেন এবং সিরিয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করে।
হামলার ব্যাপারে ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইরানের নতুন হামলায় মধ্য ইসরায়েলে বিদ্যুৎ গ্রিডের ক্ষতি হয়েছে। সিএনএনের লরেন ইজসো এবং লেক্স হার্ভের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের হামলায় মধ্য ইসরায়েলের স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের ক্ষতি হয়েছে বলে ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন জানিয়েছে।
ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন বলেছে, নিরাপত্তা ঝুঁকি, বিশেষ করে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার থেকে বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঝুঁকি দূর করতে তাদের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। একই সময়ে, অবকাঠামো মেরামত এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।