Samakal:
2025-07-31@12:07:15 GMT

ট্রেন বন্ধে দেশজুড়ে দুর্ভোগ

Published: 29th, January 2025 GMT

ট্রেন বন্ধে দেশজুড়ে দুর্ভোগ

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে মঙ্গলবার দেশজুড়ে ভোগান্তিতে পড়েন লাখো রেলযাত্রী। স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে রাজশাহীতে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। রেলওয়ে বিকল্প হিসেবে বিআরটিসির ৪০টি বাস দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্য। ট্রেন বন্ধের সুযোগে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া বাড়ান মালিকরা। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ায় আজ বুধবারও ট্রেন বন্ধ থাকা প্রায় নিশ্চিত।

ট্রেন বন্ধে আমদানি-রপ্তানিও বিঘ্নিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার এই স্টেশন থেকে চারটি ট্রেন যাত্রার কথা ছিল। সোমবার রাত ২টায় এবং মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ও বেলা ২টায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের যাত্রার সূচি ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় একটি তেলবাহী ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। সিজিপিওয়াইর স্টেশন মাস্টার আবদুল মালেক জানিয়েছেন, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন চলেনি।

সকালে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মে যাত্রীশূন্য দাঁড়িয়ে আগের রাতে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেন। শতাধিক যাত্রী প্ল্যাটফর্মে জমায়েত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ট্রেন ছাড়বে আশায় অনেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। সকাল ১০টার জামালপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী কবিতা আক্তার বলেন, ‘ট্রেন যে বন্ধ, এ কথা তো রেল একবার জানাতে পারত। তাইলে আইতাম না।’
সাড়ে ১০টার দিকে স্টেশনে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি যাত্রীদের জানান, স্টেশনের বাইরে বিআরটিসির বাস অপেক্ষমাণ। যারা বাসে যেতে চান, তারা ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে যেতে পারবেন।

প্রতিদিন সারাদেশে ১১২টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এতে আসন সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। আরও ২০৬টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন হলে। এতে আড়াই লাখের বেশি যাত্রী প্রতিদিন ভ্রমণ করেন। তবে বিআরটিসি মাত্র ৪০টি বাস দিতে পেরেছে। ১১টি বিমানবন্দর স্টেশন, ১৭টি কমলাপুর, ৬টি চট্টগ্রাম স্টেশন, ৫টি বগুড়া স্টেশন ও কুমিল্লা স্টেশন থেকে যাত্রা করে। বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেছেন, সব স্টেশনে বাস রয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা সাপেক্ষে সেবা দেওয়া হবে। 
তবে কমলাপুরে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান রংপুরের যাত্রী মানিক মিয়া। তিনি বলেন, বাসে যেতে কষ্ট হয় বলেই সকালের ঘুম নষ্ট করে ট্রেনের টিকিট কেটেছি। সন্তানরা বাসে উঠতে চায় না। বমি করে।

আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট যাত্রার ১০ দিন আগেই বিক্রি শুরু হয়। এ হিসেবে গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রেন না চললে টিকিটের পুরো দাম ফেরত পাবেন যাত্রীরা।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ট্রেন বন্ধ থাকায় গতকাল বিক্ষুব্ধ হয়ে যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালান। রেলের দুই কর্মচারীকে মারধর করা হয়। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেন না ছাড়ায় যাত্রীরা ওয়েটিং

রুমের বসার চেয়ার ভাঙচুর করেন। স্টেশনের ভেতরের বিভিন্ন কক্ষের দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অন্যান্য স্টেশনের মতো চট্টগ্রামেও হাজারো যাত্রী স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেন বন্ধ। বিকল্প হিসেবে ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক রুটে বিআরটিসির বাস চালু করে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার রুটের বাসে যাত্রীর চাপ বাড়ে। গতকাল দুপুরের দিকে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ (র.

) মাজার গেটে আবুল কালাম নামে এক যাত্রী সমকালকে বলেন, ট্রেনে টিকিট করে বাসে যেতে হচ্ছে।

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা গতকাল সকাল ১০টার দিকে স্টেশন সুপারের কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ জংশনে এলে যাত্রীদের তোপের মুখে চালক পালিয়ে যান।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট র ন বন ধ ব আরট স কমল প র ১০ট র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কা‌দেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’

এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের

আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”

তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”

“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”

এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”

মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”

কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ