Samakal:
2025-05-01@09:08:44 GMT

ট্রেন বন্ধে দেশজুড়ে দুর্ভোগ

Published: 29th, January 2025 GMT

ট্রেন বন্ধে দেশজুড়ে দুর্ভোগ

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে মঙ্গলবার দেশজুড়ে ভোগান্তিতে পড়েন লাখো রেলযাত্রী। স্টেশনে এসে ট্রেন না পেয়ে রাজশাহীতে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। রেলওয়ে বিকল্প হিসেবে বিআরটিসির ৪০টি বাস দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্য। ট্রেন বন্ধের সুযোগে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া বাড়ান মালিকরা। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ায় আজ বুধবারও ট্রেন বন্ধ থাকা প্রায় নিশ্চিত।

ট্রেন বন্ধে আমদানি-রপ্তানিও বিঘ্নিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার এই স্টেশন থেকে চারটি ট্রেন যাত্রার কথা ছিল। সোমবার রাত ২টায় এবং মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ও বেলা ২টায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের যাত্রার সূচি ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় একটি তেলবাহী ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল। সিজিপিওয়াইর স্টেশন মাস্টার আবদুল মালেক জানিয়েছেন, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন চলেনি।

সকালে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মে যাত্রীশূন্য দাঁড়িয়ে আগের রাতে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেন। শতাধিক যাত্রী প্ল্যাটফর্মে জমায়েত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ট্রেন ছাড়বে আশায় অনেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। সকাল ১০টার জামালপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী কবিতা আক্তার বলেন, ‘ট্রেন যে বন্ধ, এ কথা তো রেল একবার জানাতে পারত। তাইলে আইতাম না।’
সাড়ে ১০টার দিকে স্টেশনে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি যাত্রীদের জানান, স্টেশনের বাইরে বিআরটিসির বাস অপেক্ষমাণ। যারা বাসে যেতে চান, তারা ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে যেতে পারবেন।

প্রতিদিন সারাদেশে ১১২টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এতে আসন সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। আরও ২০৬টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন হলে। এতে আড়াই লাখের বেশি যাত্রী প্রতিদিন ভ্রমণ করেন। তবে বিআরটিসি মাত্র ৪০টি বাস দিতে পেরেছে। ১১টি বিমানবন্দর স্টেশন, ১৭টি কমলাপুর, ৬টি চট্টগ্রাম স্টেশন, ৫টি বগুড়া স্টেশন ও কুমিল্লা স্টেশন থেকে যাত্রা করে। বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেছেন, সব স্টেশনে বাস রয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা সাপেক্ষে সেবা দেওয়া হবে। 
তবে কমলাপুরে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান রংপুরের যাত্রী মানিক মিয়া। তিনি বলেন, বাসে যেতে কষ্ট হয় বলেই সকালের ঘুম নষ্ট করে ট্রেনের টিকিট কেটেছি। সন্তানরা বাসে উঠতে চায় না। বমি করে।

আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট যাত্রার ১০ দিন আগেই বিক্রি শুরু হয়। এ হিসেবে গতকাল পর্যন্ত বিক্রি হয় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ট্রেন না চললে টিকিটের পুরো দাম ফেরত পাবেন যাত্রীরা।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ট্রেন বন্ধ থাকায় গতকাল বিক্ষুব্ধ হয়ে যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালান। রেলের দুই কর্মচারীকে মারধর করা হয়। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেন না ছাড়ায় যাত্রীরা ওয়েটিং

রুমের বসার চেয়ার ভাঙচুর করেন। স্টেশনের ভেতরের বিভিন্ন কক্ষের দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অন্যান্য স্টেশনের মতো চট্টগ্রামেও হাজারো যাত্রী স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেন বন্ধ। বিকল্প হিসেবে ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েক রুটে বিআরটিসির বাস চালু করে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার রুটের বাসে যাত্রীর চাপ বাড়ে। গতকাল দুপুরের দিকে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ (র.

) মাজার গেটে আবুল কালাম নামে এক যাত্রী সমকালকে বলেন, ট্রেনে টিকিট করে বাসে যেতে হচ্ছে।

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা গতকাল সকাল ১০টার দিকে স্টেশন সুপারের কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ জংশনে এলে যাত্রীদের তোপের মুখে চালক পালিয়ে যান।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট র ন বন ধ ব আরট স কমল প র ১০ট র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আলোর পাশে থেকেও তারা ‘অন্ধকারে’

রাজশাহী শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ত রুমন হোসেন (১৩)। মাদ্রাসার টিউশন ফি দিতে না পেরে বাবা নুর ইসলাম তাকে কাজে লাগিয়ে দেন। চার বছর ধরে সে কাজ করছে নগরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, চা ও মোটরসাইকেলের দোকানে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে বছর দুই ধরে। কখনো ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি, কখনোবা কাজ করে চা ও জুসের দোকানে। সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করে দৈনিক মজুরি পায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

যে বয়সে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়া ও খেলাধুলা করার কথা রুমনের, সেই বয়সে তাকে কাজ করতে হচ্ছে। রুমনের মতো এমন অনেক শিশু নানা কাজ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত তারা। আলোর পাশে থেকেও অন্ধকারে থাকার মতো অবস্থা তাদের।

রুমনের বাবা নূর ইসলাম পেশায় রিকশাচালক। তিনি জন্ডিসে আক্রান্ত থাকার কারণে বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারেন না। রুমনের মা সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ায় তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছেন। সৎমায়ের সঙ্গে রুমনের বনিবনা হয় না। তাই সে থাকে দাদির সঙ্গে। দাদি আগে একটি কারখানায় কাজ করতেন। তবে বার্ধক্যের কারণে তিনি এখন কাজ করতে পারেন না। প্রতিদিন রোজগার করে রুমন যে অর্থ পায়, তা দাদির হাতে তুলে দেয়। আলাপকালে রুমন হোসেন বলে, ‘আব্বা ছোটকালে ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করত। তারপর আমারে কাজে লাগায়া দেয়। কাজের জন্য খেলাধুলা করতে পারি না। বন্ধুদের মিস করি।’

আজ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা মে দিবস হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের একটি জুসের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১২ বছর বয়সী আরিফুল ইসলাম (শান্ত) কাজ করছে। কাজের ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, এর আগে তিন বছর মোটরসাইকেলের হেলমেটের দোকানে কাজ করেছে। পড়াশোনা করেছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তার বাবা মাহবুব ইসলাম ঢাকায় কাজ করেন। তবে সংসারের খরচ দেন না। মা আরিফা খাতুন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ঘর দিয়েছেন। প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। মা একা কাজ করে সংসারের খরচ বহন করতে পারতেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে কাজে লাগিয়ে দেন। এভাবেই চলছিল তাদের ছোট সংসার। তবে চার মাস আগে তাঁর মা ফুসফুসে সমস্যার কারণে মারা যান। এখন তার খালা তাকে দেখভাল করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন আবাসিক হলের ডাইনিং, ক্যানটিন, ভ্রাম্যমাণ খাবার, চা ও জুসের দোকানে কাজ করে অর্ধশতাধিক শিশু। তাদের অধিকাংশের বয়স ১২ বছরের কম। তারা কেউ-ই এখন লেখাপড়া করে না। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে কাজ করছে তারা।

 

‘অন্ধকার জগতে’ জড়ানোর নজির

ক্যাম্পাসে থাকা শিশুরা যে শুধু শিশুশ্রমের শিকার হচ্ছে, তা নয়। অনেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের কয়েকটি দোকানে চুরির ঘটনায় তিন শিশুকে পুলিশে দেন দোকানিরা। এ সময় তাদের কাছে মাদকও পাওয়া যায়।

ক্যাম্পাসে যেসব শিশু কাজ করে, তাদের অনেককে লুকিয়ে ধূমপানও করতে দেখা যায়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ও শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকায় ‘অন্ধকার জগতে’ জড়িয়ে পড়ছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘নবজাগরণ ফাউন্ডেশন’, ‘ইচ্ছে’ ও ‘শিশু নিকেতন’ নামের সংগঠন ক্যাম্পাসের আশপাশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে।

ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে নির্বিঘ্নে শিশুশ্রম হচ্ছে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জন্যই লজ্জাকর। একইভাবে শিশুশ্রম রাষ্ট্রের জন্যও অপমানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত এমন বেআইনি শিশুশ্রম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। যাতে কোনো দোকানি শিশুদের কাজে নিতে না পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ