নিজেদের ব্যর্থতা আগেই স্বীকার করে নিলেন মাহবুব আনাম। বিসিবির পরিচালক ও বর্তমানে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। যিনি আ হ ম মুস্তাফা কামাল থেকে শুরু থেকে নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডেও পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন সহ-সভাপতিও।

১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বিপিএল যে কোনো মানদণ্ডেই দাঁড়ায়নি বৃহস্পতিবার তা স্বীকার করতে পিছু পা হননি হেভিওয়েট এই বিসিবির কর্তা, ‘‘অতীতের ব্যর্থতা, অপরিপক্কতা ঝেরে নতুন করে বিপিএল শুরুর সকল প্রস্তুতি নিয়েছে বোর্ড। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিপিএল আয়োজনের ইচ্ছা বোর্ডের। হাতে সময় কম। নতুন করে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে আয়োজন করার চ্যালেঞ্জটা হাতে নিয়েছে বিসিবি।’’

‘‘আমরা গ্রহণযোগ্য, পরিমাপযোগ্য বিপিএল চাই যা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট হিসেবে যেন সামনে থাকে। একটা টাইমলাইনও করা হয়েছে যা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমরা যখন দায়িত্বটা পাই, যদি আমরা স্লটটাকে ধরেই নেই ডিসেম্বর-জানুয়ারি, তাহলে কেবল পাঁচ মাসই আছে। যদি ভালো কিছু করতে চাই তাহলে এ ধরণের টুর্নামেন্ট সফল করতে এক বছর সময় লাগে। কিন্তু আমরা ফুল ফোর্সে এই সময়টায় কাজ করে বিপিএলটাকে আয়োজন করতে চাই।’’

আরো পড়ুন:

বিপিএলে আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’

বিপিএলের লাভের অংশ ও প্রাইজমানি অনুমোদন দিল বিসিবি

বল গড়ানোর আগে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল মাঠের বাইরের পরিবেশ ঠিক করতে মনোযোগ দিয়েছে। এতো বছর যা শুধু মুখ দিয়ে বলেই গেছে সেগুলোই করে দেখাতে তৎপর। বিপিএল ব্যবসা সফল হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিরা লভ্যাংশ পেতেন না। ফারুক আহমেদ সেই প্রথা চালু করেছে। তবে এটাই যে যথেষ্ট নয় তা সবারই জানা। এজন্য বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বিপিএলের কমার্শিয়াল মডেল রি-ডিজাইন করছে। এজন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করছে।

বিদেশি পেশাদার স্পোর্টস মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে বিসিবি। যারা বিপিএলের বাণিজ্যিক মডেল রি-রিজাইন করবে। বিপিএলকে গ্রহণযোগ্য করবে, যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা লাভবান হবেন, টুর্নামেন্ট লাভবান হবে। এই মডেলের ভেতরে মিডিয়া স্পন্সরশিপ রাইট থাকবে। এছাড়া ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, ফ্র্যাঞ্চাইজি স্ট্রাইকচার এবং ম্যাচ ডে ফ্যান এনগেজমেন্ট বিষয়গুলো থাকবে।

এই স্পোর্টস মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও নিয়োগ আগামী এক মাসের মধ্যে করতে চায় বিসিবি। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কনসালটেন্ট অনুমোদনের পর শেষের দিকে মিডিয়া রাইটস, ডিজিটাল রাইটস ও ফ্র্যাঞ্চাইজি রাইটসের দরপত্র দেবে বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়োগের ক্ষেত্রে দরপত্রের পাশাপাশি বিসিবি নিজের উদ্যোগে বড় প্রতিষ্ঠিত করপোরেট হাউজের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে। নিজেদের কমার্শিয়াল মডেল প্রেজেন্ট করবে।

‘‘ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটা আমরা করবো, আমরা বিভিন্ন লার্জ করপোরেট হাউজের কাছে এই ইভেন্টের নিউ মডেলটা দবে। বাই এন্ড অব আগস্ট এবং আর্লি সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে। আমরা যেন সঠিক পার্টনারকে এই অঙ্গনে নিয়ে আসতে পারি সেই চেষ্টা করবো। এন্ড অব সেপ্টেম্বর আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাই। বোর্ডের থেকে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি ফ্র্যাঞ্চাইজি দেব এবং পরবর্তীতে পাঁচ বছরের জন্য রিনিউনাল হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যদি আগামী পাঁচ বছর ভালোভাবে নিতে পারি এটার ব্র্যান্ড ভ্যালুটা ভালোভাবে পাবেন এবং পরবর্তীতে তারা যদি বদলাতেও চান, ভালো ব্র্যান্ড ভ্যালু পাবেন। রিটার্ন এক্সপেকটেশন পাবেন।’’

তবে পূর্বের আনডিসপিউটেড ফ্র্যাঞ্চাইজিদেরও বিবেচনায় রাখবে বিসিবি, ‘‘পূর্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক যারা আছেন যারা আনডিসপিউটেড এবং বিসিবির সঙ্গে যাদের কোনো ডিসপিউট নেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করবো।’’

নুন্যতম পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন মাহবুব আনাম, ‘‘নুন্যতম পাঁচটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। কিংবা তার অধিক। নির্ভর করবে আমরা তখন কী অবস্থায় থাকি।’’

দেশের বাইরে থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসতে পারে এমন শোরগোল শুরু হয়েছিল। সেসব নিয়ে আপাতত কোনো চিন্তা নেই তা মাহবুব আনামের কথায় বোঝা গেল, ‘‘আমাদের নিজস্ব অবস্থান ঠিক করতে হবে। আমাদের বাজার যদি শক্ত হয় এরকম (আইপিএল, পিএসএল) অনেক দল আসবে। যে জন্যই আমরা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় যাচ্ছি। যেন আমাদের ব্রান্ড ভ্যালুটা বাড়ে।’’

এছাড়া বগুড়া, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী ভেনু্যতে বিপিএলের ম্যাচ আয়োজনের সাম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চলছে বলে দাবি করলেন মাহমুব আনাম, ‘‘দুটি ভেন্যু যারা আগে ইন্টারন্যশনাল ক্রিকেট আয়োজন করেছে, বগুড়া ও খুলনা…এই দুইটাকে অডিট করার জন্য আমরা কর্মকর্তা পাঠিয়েছি। এছাড়া বরিশালের উইকেট প্রস্তুত। আউটফিল্ডের কাজ চলছে। সম্ভাবনা আছে এই কাজটাও শেষ হয়ে যাবে। তাহলে বরিশালও অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে। ইচ্ছা আছে অন্তত একটা ভেন্যুকে যেন আমরা বাড়াতে পারি। রাজশাহীর ব্যাপারে এনএসসি কাজ করছে। এই চারটা ভেন্যুর মধ্যে যেটাকে আমাদের সেরা মনে হবে সেটাকে আমরা যুক্ত করবো আগামী বিপিএলে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ফ র য ঞ চ ইজ ব প এল র দরপত র র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কয়েকবার শর্ত বদল, তবুও টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে পারছে না বিসিবি

মাঠের ক্রিকেটে পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা নেই। নেই স্থিতিশীল পরিস্থিতিও। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ক্রিকেটে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ক্রিকেট প্রশাসনে যে অস্থিরতা, তা কাটাতে পারেনি মাঠের পারফরম্যান্সও। তাতে সবকিছুই যেন ওলটপালট। তাই তো ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি আয়ের যে উৎস, সেখানেও যা-তা অবস্থা। শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, বিশ্বজুড়েই ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আয় হয় টিভি স্বত্ব থেকে। সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে ক্রিকেট বোর্ডগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্রিকেট আগ্রহে ভাটার কারণে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রিই করতে পারছে না বিসিবি। একাধিকবার শর্ত বদল, সময়সীমা বৃদ্ধি, দাম কমানো এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর শর্ত দিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছে না বিসিবি। তা রীতিমতো ভাবাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।

বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সবশেষ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দুই টেস্টের জন্য টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে না পারায় বিসিবি বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে খেলা দেখায়। যেখান থেকে কোনো লাভই করতে পারেনি। উল্টো প্রোডাকশন খরচ বহন করতে হয়েছে। সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জানা গেছে, এই সিরিজের টিভি স্বত্বও এখন পর্যন্ত বিসিবি বিক্রি করতে পারেনি। ৪ কোটি টাকায় টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে চেয়েছে বিসিবি। তাতেও আগ্রহ দেখায়নি কেউ।

শুধু তা-ই নয়, ২০২৫–২৭ হোম সিরিজের স্যাটেলাইট, ডিজিটাল এবং ডিটিএইচ সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও তাতে কোনো দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি। গত ১২ জুন ইংরেজি ও বাংলা জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিসিবি জানায়, ১২ জুলাই ২০২৫ থেকে ১৫ জুন ২০২৭ পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে এসব স্বত্ব বিক্রয়ের জন্য আগ্রহীদের দরপত্র দিতে হবে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৮ জুলাই। কিন্তু বিসিবি যেসব শর্ত দিয়েছিল, তা মেনে কেউই দরপত্র জমা দেয়নি।

আরো পড়ুন:

সাইফউদ্দিন-নাঈম শেখকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা

দশ বছরে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বাজে অবস্থা বাংলাদেশের

বিসিবি যে শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সিকিউরিটি ডিপোজিট। এই অর্থ ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, অপরিবর্তনীয় ব্যাংক গ্যারান্টি বা ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিশাল এই অঙ্ক জমা দিতে রাজি নয় কোনো প্রতিষ্ঠানই। কোনো সাড়া না পেয়ে বিসিবি গত ২৭ জুন ও ৪ জুলাই দরপত্রে সংশোধনী আনে এবং শুধুমাত্র পাকিস্তান সিরিজের জন্যও আলাদা দরপ্রস্তাব আহ্বান করেছে। তাতেও কোনো প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে বিসিবির একাধিক পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা কেউ কথা বলতে রাজি নন। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ বাজেভাবে হারের পর আড়ালে চলে গেছেন তারা।

টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে না পারলেও স্পন্সরশিপ স্বত্ব এই সিরিজের বিক্রি করতে পেরেছে বিসিবি। পাকিস্তান–বাংলাদেশ সিরিজের স্পন্সর হয়েছে কেএফসি।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য দরপত্র প্রক্রিয়া চেয়ে করা রিটের আদেশ ২৩ জুলাই
  • কয়েকবার শর্ত বদল, তবুও টিভি স্বত্ব বিক্রি করতে পারছে না বিসিবি