হে ফিভার কেন হয়, কারা আছেন ঝুঁকিতে?
Published: 21st, February 2025 GMT
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হে ফিভারে আক্রান্ত হন অনেকে। বিশেষ করে বসন্তে যখন ফুল ফোটে, তখন এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। যাঁদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি, তাঁদের হে ফিভারে ভোগান্তিও বেশি। তবে এ বিষয়ে ভালো ধারণা থাকলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হে ফিভার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হে ফিভার কীহে ফিভার শুনলে মনে হয় এটি একধরনের জ্বর। এটি ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’–এর আরেক নাম। হে ফিভারে মূলত ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন—
১.
২. নাক বন্ধ
৩. হাঁচি-কাশি
৪. নাক ও গলা চুলকানো
৫. শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া বা লাল হওয়া
৬. ক্লান্তি ও অবসাদ
৭. নাকের শ্লেষ্মা গলায় চলে আসা
হে ফিভার কেন হয়আগেই বলেছি, এটি একধরনের অ্যালার্জিক সমস্যা। যাঁদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এটি বেশি দেখা যায়। পরিবেশ ও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত রাখে পোলেন বা পরাগরেণু। পরাগায়নের সময় পরাগরেণু বাতাসে ভাসতে থাকে। কেউ পরাগরেণুর সংস্পর্শে এলে শরীরে অ্যালার্জি এবং বিভিন্ন উপসর্গের সৃষ্টি করে, যাকে বলে হে ফিভার। এ ছাড়া ধুলাবালুর কীট, পোষা কুকুর-বিড়ালের লোম, বিষ্ঠা থেকেও এ রকম অ্যালার্জি হতে পারে। এসব জিনিসের সংস্পর্শে এলে শরীর এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যা থেকে হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। হিস্টামিনই শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে হে ফিভার নিয়ে আসে।
হে ফিভার ও কমন কোল্ডহে ফিভার ও কমন কোল্ড এক জিনিস নয়। দুটির কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে, যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া। কমন কোল্ড ভাইরাসবাহিত। হে ফিভারে কোনো ভাইরাস সংক্রমণ ছাড়াই অ্যালার্জিজনিত কারণে হয়। কমন কোল্ড সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার এক থেকে তিন দিন পর শুরু হয় এবং কয়েক দিন পর এর প্রকোপ কমে যায়। অন্য দিকে হে ফিভার অ্যালার্জিজনিত বস্তুর সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এবং যতক্ষণ সংস্পর্শে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর প্রকোপ থাকে।
আরও পড়ুনকীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে১৮ জানুয়ারি ২০২৪হে ফিভারের ঝুঁকিতে কারা১. যাঁদের অ্যালার্জির সমস্যা ও হাঁপানি আছে
২. একজিমা ও অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা
৩. ভাই-বোনের অ্যালার্জি থাকলে
৪. অ্যালার্জি হতে পারে এমন পরিবেশে থাকলে বা কাজ করলে
৫. ধোঁয়া, গন্ধযুক্ত ও রাসায়নিক পরিবেশের সংস্পর্শে থাকলে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
১. হাঁপানি
২. সাইনুসাইটিস
৩. কানের ইনফেকশন
৪. শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ
৫. ঘুমের সমস্যা
করণীয়হে ফিভার যে কারণে হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা জরুরি। চিহ্নিত হলে সে কারণ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এ জন্য মাস্ক পরা ভালো। নিয়মিত পানি খেতে হবে। অ্যালার্জির মাত্রা বেশি হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা
আরও পড়ুনবসন্তকালেই কেন ‘হে ফিভার’ ও অ্যালার্জি বেশি হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স স পর শ উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাডিনোমায়োসিস: নারীদের যন্ত্রণার আরেক নাম
এপ্রিল মাসকে ‘অ্যাডিনোমায়োসিস সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ মাসে বিশ্বজুড়ে মানুষকে অ্যাডিনোমায়োসিস নামক নারীদের বিশেষ এক গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার ব্যাপারে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালানো হয়।
অ্যাডিনোমায়োসিস কী
অ্যাডিনোমায়োসিস হলে জরায়ুর ভেতরের স্তরের (এন্ডোমেট্রিয়াম) কোষগুলো জরায়ুর পেশিতে (মায়োমেট্রিয়াম) অস্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করে। এর ফলে জরায়ুর দেয়াল মোটা হয়ে যেতে পারে এবং হতে পারে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা ও ভারী রক্তপাত।
লক্ষণ
মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা।
ভারী বা অনিয়মিত রক্তপাত।
তলপেটে চাপ বা ভারী অনুভব।
যৌনমিলনের সময় ব্যথা।
ঝুঁকি
অ্যাডিনোমায়োসিসের কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যেমন:
বয়স: সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
জরায়ুসম্পর্কিত পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচার: সিজারিয়ান সেকশন করার পর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসাপদ্ধতি
চিকিৎসাপদ্ধতি রোগীর উপসর্গ ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ইবুপ্রোফেন মাসিকের ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হরমোনাল চিকিৎসা: ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন কমবাইন্ড পিল, প্যাচ বা ভ্যাজাইনাল রিং অতিরিক্ত রক্তপাত ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রোজেস্টিন-অনলি কনট্রাসেপটিভ যেমন আইইউডি বা কন্টিনিউয়াস পিল মাসিক বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
হিস্টেরেকটমি: যদি অন্যান্য চিকিৎসায় উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ না হয়, তবে জরায়ু অপসারণ করা হয়, যা একমাত্র নিশ্চিত চিকিৎসাপদ্ধতি।
উপশম
গরম স্নান বা হিটিং প্যাড ব্যবহার: পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ব্যথানাশক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ: ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম: শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সচেতনতার গুরুত্ব
অনেক নারী এ সমস্যার মুখোমুখি হলেও ঠিক বুঝতে পারেন না কেন হচ্ছে বা গুরুত্ব দেন না। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে অ্যাডিনোমায়োসিস জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং সমর্থন তৈরি করাই এই মাসের মূল লক্ষ্য।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ, প্রসূতি ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ