ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হে ফিভারে আক্রান্ত হন অনেকে। বিশেষ করে বসন্তে যখন ফুল ফোটে, তখন এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। যাঁদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি, তাঁদের হে ফিভারে ভোগান্তিও বেশি। তবে এ বিষয়ে ভালো ধারণা থাকলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হে ফিভার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

হে ফিভার কী

হে ফিভার শুনলে মনে হয় এটি একধরনের জ্বর। এটি ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’–এর আরেক নাম। হে ফিভারে মূলত ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন—

১.

নাক দিয়ে পানি পড়া

২. নাক বন্ধ

৩. হাঁচি-কাশি

৪. নাক ও গলা চুলকানো

৫. শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া বা লাল হওয়া

৬. ক্লান্তি ও অবসাদ

৭. নাকের শ্লেষ্মা গলায় চলে আসা

হে ফিভার কেন হয়

আগেই বলেছি, এটি একধরনের অ্যালার্জিক সমস্যা। যাঁদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এটি বেশি দেখা যায়। পরিবেশ ও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এটি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত রাখে পোলেন বা পরাগরেণু। পরাগায়নের সময় পরাগরেণু বাতাসে ভাসতে থাকে। কেউ পরাগরেণুর সংস্পর্শে এলে শরীরে অ্যালার্জি এবং বিভিন্ন উপসর্গের সৃষ্টি করে, যাকে বলে হে ফিভার। এ ছাড়া ধুলাবালুর কীট, পোষা কুকুর-বিড়ালের লোম, বিষ্ঠা থেকেও এ রকম অ্যালার্জি হতে পারে। এসব জিনিসের সংস্পর্শে এলে শরীর এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যা থেকে হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। হিস্টামিনই শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে হে ফিভার নিয়ে আসে।

হে ফিভার ও কমন কোল্ড

হে ফিভার ও কমন কোল্ড এক জিনিস নয়। দুটির কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে, যেমন নাক দিয়ে পানি পড়া। কমন কোল্ড ভাইরাসবাহিত। হে ফিভারে কোনো ভাইরাস সংক্রমণ ছাড়াই অ্যালার্জিজনিত কারণে হয়। কমন কোল্ড সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার এক থেকে তিন দিন পর শুরু হয় এবং কয়েক দিন পর এর প্রকোপ কমে যায়। অন্য দিকে হে ফিভার অ্যালার্জিজনিত বস্তুর সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এবং যতক্ষণ সংস্পর্শে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর প্রকোপ থাকে।

আরও পড়ুনকীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে১৮ জানুয়ারি ২০২৪হে ফিভারের ঝুঁকিতে কারা

১. যাঁদের অ্যালার্জির সমস্যা ও হাঁপানি আছে

২. একজিমা ও অ্যালার্জিক ডার্মাটাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা

৩. ভাই-বোনের অ্যালার্জি থাকলে

৪. অ্যালার্জি হতে পারে এমন পরিবেশে থাকলে বা কাজ করলে

৫. ধোঁয়া, গন্ধযুক্ত ও রাসায়নিক পরিবেশের সংস্পর্শে থাকলে

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

১. হাঁপানি

২. সাইনুসাইটিস

৩. কানের ইনফেকশন

৪. শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ

৫. ঘুমের সমস্যা

করণীয়

হে ফিভার যে কারণে হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা জরুরি। চিহ্নিত হলে সে কারণ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এ জন্য মাস্ক পরা ভালো। নিয়মিত পানি খেতে হবে। অ্যালার্জির মাত্রা বেশি হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা

আরও পড়ুনবসন্তকালেই কেন ‘হে ফিভার’ ও অ্যালার্জি বেশি হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স স পর শ উপসর গ

এছাড়াও পড়ুন:

জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের

প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।

ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।

লক্ষণ বা উপসর্গ

এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—

অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।

তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।

ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।

সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।

গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।

বয়স ও বংশগতির প্রভাব।

ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।

নির্ণয় ও চিকিৎসা

আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।

টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কেন সচেতনতা জরুরি

ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌন্দর্য বাড়াতে বোটক্স করা কতটা ভালো
  • জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের