সৌন্দর্য বাড়াতে বোটক্স করা কতটা ভালো
Published: 30th, July 2025 GMT
সৌন্দর্য ও তারুণ্য ধরে রাখতে এ দেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বোটক্স। মুখে বয়সের ছাপ কমিয়ে, মসৃণ ও প্রাণবন্ত চেহারা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই চিকিত্সাপদ্ধতি। বোটক্স শব্দটি এসেছে বটুলিনাম টক্সিন থেকে। এটি একধরনের প্রোটিন, যা ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়।
বোটক্স প্রয়োগ করা হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। এটি বলিরেখা ছাড়াও অন্যান্য সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করে। যে কারণে ত্বক দেখায় আরও তরুণ। এটি একটি নন-সার্জিক্যাল কসমেটিক পদ্ধতি, যা মুখের বিভিন্ন অংশে প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে আছে কপাল, চোখের চারপাশ ও ঠোঁটের আশপাশ। যদিও এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা হলে এটি নিরাপদ ও উপকারী।
বোটক্স যেভাবে কাজ করেআমাদের মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, যেমন হাসি, রাগ বা চিন্তার ফলে মাসল সংকোচন হয়। বারবার এ সংকোচনের ফলে ত্বকে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে। বোটক্স ইনজেকশন মাংসপেশির ওই সংকোচনপ্রক্রিয়াকে সাময়িকভাবে শিথিল করে দেয়। এটি স্নায়ু ও মাসলের সংযোগস্থলে অ্যাসিটাইলকোলিন নামে একধরনের রিসিপ্টরকে ব্লক করে, ফলে স্নায়ু থেকে মাসলে সংকোচনের সংকেত পৌঁছায় না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মাসল শিথিল থাকে আর ওই জায়গার বলিরেখা কমে যায় বা সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। ত্বক দেখায় মসৃণ।
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বোটক্সকপালে বলিরেখা দূর করে।
চোখের পাশের কুঁচকে যাওয়া বা ক্রস ফিট কমায়।
ভ্রুর মাঝের ভাঁজ কমায়।
ঠোঁটের পাশের রেখা ও চোয়ালের অংশকে সুগঠিত করে।
কিছু ক্ষেত্রে ঘাম কমাতেও সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঅ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি কি খুব ব্যয়বহুল?২১ আগস্ট ২০২৪চিকিত্সায় ব্যবহারবোটক্স দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে।
চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া বা চোখের পাতার খিঁচুনি কমাতে বোটক্স ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, অতিরিক্ত লালা ঝরার মতো অসুখেও বোটক্স ব্যবহার করা হয়।
প্রভাব ও স্থায়িত্ববোটক্স প্রয়োগের প্রভাব সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এটি তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর আবার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বোটক্স নিরাপদ, তবু এটি প্রয়োগের পর কিছু সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন হালকা ব্যথা, ফোলা ভাব, মাথাব্যথা বা ইনজেকশনের স্থানে অস্বস্তি। তাই অবশ্যই এটি প্রশিক্ষিত চিকিত্সকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
বয়সের ছাপ লুকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে বা সৌন্দর্য বাড়াতে বিশ্বজুড়ে বোটক্স এখন একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায়। তবে মনে রাখা উচিত, সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, আত্মবিশ্বাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান।
আরও পড়ুনডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ওজন ও ইউরিক অ্যাসিড কমানোসহ কত গুণ চিচিঙ্গার ২২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দর য ব যবহ র বল র খ ব টক স
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান