কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক শ্রমিকদল নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় থানায় থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীর ওপরও হামলা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত সোমবার রাতে মুরাদনগর থানায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মাসুদ রানা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার আবুল কালাম নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ঘটনায় দুটি মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় একটি মামলা করেছেন থানার উপপরিদর্শক আলী আক্কাস। মামলায় যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে প্রধান আসামি করে ৩১ জনের নামে মামলাটি করা হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনায় শ্রমিকদল নেতা আবুল কালামকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের নামে একটি মামলা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল।

দুটি মামলায় গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন– শ্রমিকদল নেতা আবুল কালাম, রহিমপুর গ্রামের মো.

হোসেন, নবীপুর গ্রামের ওহাব আলী, মুরাদনগর উত্তরপাড়া গ্রামের আবুল হাসান, পরমতলা গ্রামের মহসিন সরকার ও রহিমপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী জানান, গত সোমবার ইফতারের আগে তিনিসহ তিনজন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ওইদিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিপি (চাঁদা) দিতে হবে। তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদার টোকেন আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাঁকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদা কে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে হামলা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫ থেকে ২০ জন থানার সামনে এসে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। এর মধ্যে যুবদল নেতা মাসুদের নেতৃত্বে শতাধিক লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা করেন। আমরা তিন-চারজন থানা ভবনের গেটের ভেতরে ছিলাম, বাকিরা ছিলেন বাইরে। তারা প্রথমে আমাদের বাইরে থাকা অন্তত ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় পুলিশ গেট বন্ধ করে দিলে তারা গেট ভেঙে থানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা।’

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ঘটনার সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত ৩০ মিনিট দফায় দফায় থানায় গেট ভাঙার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ে থানার সামনে অবস্থান নেন হামলাকারীরা। সেখানে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। পরে কয়েক দফা চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।

তবে থানায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুবদল নেতা মাসুদ রানা। তাঁর ভাষ্য, পুরো ঘটনার নেপথ্যে উপদেষ্টা আসিফের চাচাতো ভাই উবায়দুল সিদ্দিকী। আবুল কালামের স্ট্যান্ডের একটি অটোরিকশার সঙ্গে উবায়দুলকে বহনকারী অটোরিকশার ঘষা লাগে। এ সময় উবায়দুল নেমে অটোরিকশার চালককে থাপ্পড় দেন। তখন ঝামেলা হলে আবুল কালাম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তারা একটু দূরে গিয়ে পুলিশে খবর দিয়ে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু লোক থানায় গিয়ে ওসির কাছে জানতে চায় কেন অন্যায়ভাবে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করছেন। এ সময় ওসির কক্ষের ভেতরে আমাদের লোকদের জিম্মি করে পেটাতে থাকেন উবায়দুলসহ অন্যরা। এখন উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’

মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান সমকালকে জানান, একজন চাঁদাবাজকে আটকের খবর পেয়ে তার লোকজন থানায় হামলা করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর য বদল ন ত ম র দনগর আম দ র এ সময় ঘটন য় ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ