কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সরকারকে গ্রেপ্তার করেছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নে পীর কাশিমপুর গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শাহ আলম একই এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা মেলায় শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ওই তিন খুনের মামলায় এজাহারনামীয় আসামি।

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর স্বীকারোক্তি দেননি ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’০৬ জুলাই ২০২৫

তবে শাহ আলম ওই মামলার প্রকৃত আসামি নন বলে দাবি করেছেন তাঁর ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আজিজ সরকার। তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ বলছে, আমার বাবাকে ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তিনি এজাহারনামীয় আসামি। তবে এ মামলার এজাহারের ২৫ নম্বরে থাকা শাহ আলম নামের আসামির বয়স ৪০ বছর। আর আমার বাবার বয়স ৭০ বছরের বেশি। এ ছাড়া আমার দাদার নাম জানেন না, এলাকায় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে আসামির পিতার নাম অজ্ঞাত রাখা হলো কেন? এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। আমার বাবাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এই মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।’

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনও বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে শুনিনি তিনি (শাহ আলম) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ঘটনার সময় বা আগে-পরের কোনো সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। আমার মনে হয়, কোথাও ভুল হচ্ছে। তাঁকে অযথা গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ বয়সে হয়রানি করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার মামলায় আরও ৬ জন গ্রেপ্তার০৫ জুলাই ২০২৫

ঘটনার সময় শাহ আলম ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পীর কাশিমপুরের শাহ আলম নামের একজন জড়িত বলে যখন জানতে পেরেছি, তখন মামলায় নামটি উল্লেখ করেছি। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি বলে আমি মামলাতে আসামির বাবার নাম অজ্ঞাত রেখেছি। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। আমি কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করতে চাই না। ডিবি পুলিশের তদন্তে যদি তিনি ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে গ্রেপ্তার করুক; না হলে, আমি চাই না কোনো নিরীহ মানুষের হয়রানি হোক।’

ঘটনার প্রায় এক মাস পার হলেও প্রধান আসামি শিমুল বিল্লাহ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিক্তা। তিনি বলেন, ‘শিমুল গ্রেপ্তার না হলে যেকোনো সময় আমার ওপর হামলা হতে পারে, আমাকে হত্যাও করতে পারে। আমি দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার ৩৯ ঘণ্টা পর মামলা, আটক ২০৫ জুলাই ২০২৫

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে শাহ আলমের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলাটির মোট ১০ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৯ আসামি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। নতুন করে গ্রেপ্তার শাহ আলমকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের রোকসানা বেগম (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানার বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আকুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে। তিনি পলাতক আছেন।

আরও পড়ুনমুঠোফোন চুরিকে কেন্দ্র করে খেপিয়ে তোলা হয় এলাকাবাসীকে০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনকুমিল্লায় মাদক বেচাকেনার অভিযোগে মা ও দুই সন্তানকে গণপিটুনি, কুপিয়ে হত্যা০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ম র দনগর শ হ আলম হয়র ন উপজ ল তদন ত ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

কারিগরি শিক্ষার্থীদের গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণাকে ‘সহিংস আন্দোলনের উসকানি ও গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনায় বসে। দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারী—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ডাকে। সবার যুক্তিতর্ক সমানভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়, যাতে কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না হয়।

লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলোচনার টেবিলে সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাই অবরোধ ডেকে সহিংস আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেন জনদুর্ভোগ করে অবরোধের উসকানি দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, এগুলো শুধুই বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা ও গভীর ষড়যন্ত্র, যা প্রথাগত আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আলোচনার টেবিল ছেড়ে যাঁরা অবরোধ করে দেশে নৈরাজ্য তৈরির উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা খতিয়ে দেখা দরকার।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবরোধের প্রয়োজন নেই। যৌক্তিক দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্রের অবসান হয়নি’
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা