কুমিল্লায় ট্রিপল মার্ডার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
Published: 29th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সরকারকে বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তিনি স্থানীয় আকবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার দিকে মুরাদনগরের পীর কাশিমপুর গ্রামের একটি মসজিদের নিকট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
রাতে এ ঘটনা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, তাকে একটি কালো গাড়িতে সাদা পোশাকের লোকজন উঠিয়ে নিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “ট্রিপল মার্ডার মামলার এজাহারে ২৫ নম্বরে ওই বিএনপির নেতার নাম আছে। তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।”
এর আগে গত ৩ জুলাই মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানাধীন কড়ইবাড়ি গ্রামের কিছু লোক কুপিয়ে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করে।
তারা হলেন- রোকসানা বেগম রুবি, তার মেয়ে জোনাকি ও ছেলে রাসেল। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ৩৮ জনকে এজাহারনামীয় এবং ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাঙ্গরাবাজার থানা মামলা দায়ের করেন। ডিবি জানিয়েছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
বিএনপি নেতা শাহ আলমের ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আজিজ সরকার মুন্না বলেন, “নামাজে যাওয়ার সময় পীর কাশিমপুর গুলশানে চিশতিয়া মসজিদের সামনে থেকে বাবাকে তুলে নেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা উৎকণ্ঠায় ছিলাম। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। থানায় খোঁজখবর নিয়েও কোনো তথ্য পাইনি। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি অফিস থেকে একজনের মোবাইল দিয়ে কল করে বাবা। কল দিয়ে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করেছে সে কথা জানায়।”
তিনি বলেন, “সকালে ডিবি অফিসে এসে অপেক্ষা করছি। বাবাকে সম্প্রতি এলাকার ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে বলে শুনেছি। এ মামলার এজাহারের ২৫ নম্বরে থাকা যে শাহ আলম, তার বয়স ৪৫ ও পিতা অজ্ঞাত উল্লেখ আছে।”
মুন্না আরো বলেন, “আমার বড় বোনের বয়স ৪০। আমার বাবা চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বয়স ও বিস্তারিত পরিচয় এলাকার সবাই জানে। তিনটা হত্যা করলে কারো এলাকায় অবস্থান করার কথা নয়। এছাড়াও গ্রামে ৮-১০ জন শাহ আলম রয়েছে। আমি আমার বাবার মুক্তি দাবি করছি।”
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, “শাহ আলম সরকার উপজেলা বিএনপির একজন প্রবীণ নেতা। তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা প্রকাশ্যে হয়েছে। তিনি (শাহ আলম) এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও তাকে এ মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আমি তার মুক্তি দাবি করছি।”
ঢাকা/রুবেল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ আলম ব এনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে ড্রেজার সিন্ডিকেট, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃষিজমি থেকে উর্বর মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, ক্ষয়ে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামে ড্রেজার সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টিসহ মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিল প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।
বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট ফসলি জমি থেকে মাটি ও বালু তুলছে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালে কয়েক দিন থেমে থাকে মাটি উত্তোলন, পরে আবার সক্রিয় হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেছেন, “প্রতিদিন জমি থেকে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডালসহ অনেক কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।”
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, “আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু, কিছুদিনের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত ৩-৪টি স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওগুলো বন্ধ করুন, পরে আমারটা করব।
অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেছেন, “অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।”
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেছেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে, অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”
ঢাকা/রফিক