কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সরকারকে বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তিনি স্থানীয় আকবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। 

সোমবার (২৮ জুলাই) রাত সাড়ে আটটার দিকে মুরাদনগরের পীর কাশিমপুর গ্রামের একটি মসজিদের নিকট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। 

রাতে এ ঘটনা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, তাকে একটি কালো গাড়িতে সাদা পোশাকের লোকজন উঠিয়ে নিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “ট্রিপল মার্ডার মামলার এজাহারে ২৫ নম্বরে ওই বিএনপির নেতার নাম আছে। তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।” 

এর আগে গত ৩ জুলাই মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানাধীন কড়ইবাড়ি গ্রামের কিছু লোক কুপিয়ে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করে।

তারা হলেন- রোকসানা বেগম রুবি, তার মেয়ে জোনাকি ও ছেলে রাসেল। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ৩৮ জনকে এজাহারনামীয় এবং ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাঙ্গরাবাজার থানা মামলা দায়ের করেন। ডিবি জানিয়েছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।

বিএনপি নেতা শাহ আলমের ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আজিজ সরকার মুন্না বলেন, “নামাজে যাওয়ার সময় পীর কাশিমপুর গুলশানে চিশতিয়া মসজিদের সামনে থেকে বাবাকে তুলে নেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা উৎকণ্ঠায় ছিলাম। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। থানায় খোঁজখবর নিয়েও কোনো তথ্য পাইনি। তবে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি অফিস থেকে একজনের মোবাইল দিয়ে কল করে বাবা। কল দিয়ে ডিবি পুলিশ তাকে আটক করেছে সে কথা জানায়।”

তিনি বলেন, “সকালে ডিবি অফিসে এসে অপেক্ষা করছি। বাবাকে সম্প্রতি এলাকার ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে বলে শুনেছি। এ মামলার এজাহারের ২৫ নম্বরে থাকা যে শাহ আলম, তার বয়স ৪৫ ও পিতা অজ্ঞাত উল্লেখ আছে।”

মুন্না আরো বলেন, “আমার বড় বোনের বয়স ৪০। আমার বাবা চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বয়স ও বিস্তারিত পরিচয় এলাকার সবাই জানে। তিনটা হত্যা করলে কারো এলাকায় অবস্থান করার কথা নয়। এছাড়াও গ্রামে ৮-১০ জন শাহ আলম রয়েছে। আমি আমার বাবার মুক্তি দাবি করছি।”

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, “শাহ আলম সরকার উপজেলা বিএনপির একজন প্রবীণ নেতা। তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা প্রকাশ্যে হয়েছে। তিনি (শাহ আলম) এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও তাকে এ মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আমি তার মুক্তি দাবি করছি।”

ঢাকা/রুবেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ আলম ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সড়ক বন্ধ করে ফুটবল খেলা দেখার সময় বাসচাপায় নিহত ১, আহত ১৪

কুমিল্লার মুরাদনগরে ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখতে আসা দর্শকদের চাপা দিয়েছে একটি বাস। এতে গিয়াস উদ্দিন (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন, যাঁদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার ডি আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের পাশে মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত গিয়াস উদ্দিন দুলারামপুর গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার গকুলনগর গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে শাহজালাল (৪৫), পরমতলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে গোলাম রব্বানী (১৮), দড়িকান্দি গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে সাইদুল (৩০) এবং মুরাদনগর সদরের অনিল চন্দ্র বর্মণের ছেলে ঋত্বিক চন্দ্র বর্মণ (২০)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গতকাল উপজেলা যুবদলের পৃষ্ঠপোষকতায় মুরাদনগর ড্রাগন ফুটবল একাডেমি আয়োজিত মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা চলছিল ডি আর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। ফাইনাল খেলায় দুলারামপুর ফুটবল একাডেমি বনাম ধনিরামপুর ফুটবল একাডেমির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। খেলাটি দেখতে আশপাশের ভবনের ছাদ ও মাঠের চারপাশে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে। এত মাঠের পূর্ব পাশ ঘেঁষে থাকা মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে ছিল। খেলার এক পর্যায়ে চালক গাড়িটি চালাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং দর্শকদের ওপর বাসটি তুলে দেন। এতে ঘটনাস্থলে গিয়াস উদ্দিন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। এ ছাড়া অন্তত আরও ১০ জন দর্শক সামান্য আহত হন।

দুর্ঘটনার জন্য আয়োজকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, আয়োজকেরা তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেননি এবং নিরাপত্তা চাননি।

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে এই খেলা চলছে, আজকে ছিল টুর্নামেন্টের ফাইনাল। আজকের খেলায় প্রায় এক লাখ দর্শকের ঢল নামে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে দাওয়াত করা হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে থানার ওসির পক্ষ থেকে মাত্র একজন এসআই ও তিনজন কনস্টেবল পাঠানো হয়। তাঁরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখেননি, যদিও থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে এই খেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাসটি আধা ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিল। হঠাৎ এটি দর্শকদের ওপর উঠিয়ে দিয়ে একজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। স্থানীয় লোকজন বাসের চালক ও হেলপারকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেও তাঁদের হেফাজতে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। যার কারণে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এ ছাড়া বাসটির মালিক একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেও জানতে পেরেছি। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার চাই।’

তবে পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মুরাদনগর থানার ওসি মো. জাহিদুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো প্রকার নিরাপত্তা বা অতিরিক্ত ফোর্স চাওয়া হয়নি। এখানে এত মানুষের ঢল নেমেছে, সেই হিসেবে আয়োজকদেরও কোনো প্রস্তুতি ছিল না। আমি আজ সারা দিন কুমিল্লা শহরে ছিলাম, মাত্র থানায় এসেছি। এখনো পুরো ঘটনা জানিও না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চালক ও হেলপারকে কেউ আমাদের কাছে সোপর্দ করেননি। তবে ঘটনার পর পুলিশ বাসটিকে জব্দ করে হেফাজতে নিয়েছে।’

বিএনপি নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যারা অভিযোগ তুলছে, তারা এর আগেও আমার বিরুদ্ধে মিছিল, মানববন্ধন করেছে এবং মামলাও করেছে। খেলার বিষয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে কোনো নিরাপত্তা চাওয়া হয়নি। তবে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
  • মুরাদনগরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র কেয়ার পদত্যাগ
  • সড়ক বন্ধ করে ফুটবল খেলা দেখার সময় বাসচাপায় নিহত ১, আহত ১৪