সিএনজিচালিত অটোরিকশাস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও থানায় ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার শ্রমিক দলের নেতা আবুল কালামের মুক্তির দাবিতে কুমিল্লার মুরাদনগরে আজ অর্ধবেলা পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

ধর্মঘটের কারণে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন পথে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের আগে হঠাৎ এমন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। হাসিবুর রহমান নামের এক বাসযাত্রী বলেন, ‘সকালে জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার জন্য কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এটা কেমন কথা। কোনো কিছু হলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করা হয়। পরে বাধ্য হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় করে কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে ঢাকার বাসে উঠেছি। ঈদের এমন সময় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শত শত মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।’

গ্রেপ্তার আবুল কামাল স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলার নবীপুর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার ইফতারের আগে বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করেন মুরাদনগর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী। এ ঘটনায় তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। পরে আবুল কালামকে আটক করে মুরাদনগর থানা–পুলিশ। তাঁকে প্রধান আসামি করে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু ফয়সাল। উবায়দুল সিদ্দিকী স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার চাচাতো ভাই।

এদিকে আবুল কালামকে ছাড়িয়ে আনতে গত সোমবার রাতে মুরাদনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে থানায় হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। থানায় হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশের ওপর হামলাসহ কয়েকটি অভিযোগে মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক মো.

আলী আক্কাস বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে যুবদল নেতা মাসুদ রানাকে। আজ বিকেল পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ওই মামলায় সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার সকালে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম এবং থানায় হামলার মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনসহ ছয়জনকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আজ ধর্মঘট ডাকে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড শাখা। ওই বাসস্ট্যান্ড এলাকার অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধর্মঘটের কারণে কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা ও গোমতী পরিবহন, চট্টগ্রামগামী প্রান্তিক ও হানিফ সুপার পরিবহন এবং বিআরটিসি বাস, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পথে চলাচলকারী রয়েল সুপার, ফারজানা, সুগন্ধা, ফারহানা ট্রান্সপোর্টের কোনো বাস ছয় ঘণ্টা চলাচল করেনি। এতে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বাস না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যে গেছেন অনেকে।

পরিবহনশ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শ্রমিক মানুষ, আমরা পরিশ্রম করে সংসার চালাই। আমাদের শ্রমিকনেতার মুক্তি ও তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার চাই। তা না হলে আবারও ধর্মঘট হলে আমাদের সমস্যা হবে। এক দিন কাজ না করলে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না।’

কুমিল্লা জেলা পরিবহনের শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখার সভাপতি হাজি ইদ্রিস জানান, কোম্পানীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে বাস মালিক সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেয়। এর খরচ বাস মালিক সমিতি বহন করে থাকে। এর দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান ও শ্রমিক দলনেতা আবুল কালামকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরা।

এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাউকে হয়রানি নয়, থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় আবুল কালামসহ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানায় মামলার ঘটনায় হওয়া পুলিশের মামলার প্রধান আসামি মাসুদ রানাসহ অন্যরা পলাতক। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু

কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বরুড়ায় দুই স্কুল ছাত্র এবং মুরাদনগরে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং বিল্লাল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) দুপুরে হালকা বৃষ্টির মাঝে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

ওই দুই স্কুলছাত্র বরুড়ার উপজেলার বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অপর ঘটনায় মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় বজ্রপাতে দুই কৃষক মারা গেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত বীর চরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৫৫) ও উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ২ ব্যক্তি।

কোরবানপুর গ্রামের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরে কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থনের পাশের একটি মাঠে জমিতে ধান কাটছিলেন ওই দুই কৃষক। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে ঘটনাস্থলে ওই দুই কৃষক মারা যান। পরে এলাকাবাসী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় খবর দেন।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে দুই জন কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগ দাবিতে মুরাদনগরে বিক্ষোভ, পুলিশের বাধা
  • উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবিতে মুরাদনগরে বিক্ষোভ মিছিল, পুলিশের বাধা
  • উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদী আচরণের’ অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেন আসিফ মাহমুদ
  • কুমিল্লায় বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু