বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ‘দেশের’ মানুষ তিনি। গান লেখেন, গান করেন। গানই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। গানের ভণিতায় নিজের পরিচয় দেন ‘পল্লি বাউল’ হিসেবে। বেশভূষা, চলাফেরাতেও অতি সাধারণ তিনি।

৯০ বছর বয়সী জবান আলী আছেন তাঁর মতো করেই। গানে গানে বলেন মানুষের কথা, সহজ–সরল জীবনের কথা।

জবান আলীর বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায়। বোঝার বয়স থেকে গানে মজে আছেন। জীবনে আর কোনো কিছু করেননি। জীবন যৌবন সঁপে দিয়েছেন গানেই। এ পর্যন্ত সাত শতাধিক গান লিখেছেন। তাঁর একটি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে ১৫ বছর আগে ‘দর্পণে দর্শন’। ৭০টি গান আছে এতে। ২০০৯ সালে এটি প্রকাশ করে সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি।

‘জবান আলী ফকির, আপনাদের জন্ম হয়েছে বলে আমাদের সংগীত এত সমৃদ্ধ, এত মধুর.

..।’ দর্পণে দর্শন বইয়ের শুরুতে পল্লি বাউল জবান আলী সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বিজৎ। শুধু তা–ই নয়, কুমার বিশ্বজিৎ জবান আলীর দুটি গানও গেয়েছেন। শ্রোতাদের কাছে গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর একটি হলো, ‘প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে চাইয়া থাকে/ ভালো–মন্দের ধার ধারে না/ যা বলার বলুক লোকে/... প্রেমিকের একপলকে কোটি বছর যায়/ এর চেয়ে মরণ ভালা থাকা প্রতীক্ষায়/ পল্লি বাউল জবানে গায় তাঁর খবর কে রাখে।’ এই গান ‘পিরিতের আগুন জ্বলে দ্বিগুণ’ চলচ্চিত্রে গেয়েছেন সংগীতশিল্পী বেবি নাজনীন ও মনির খান।

গল্পে গল্পে জবান আলী শোনালেন তাঁর গানের জগতের কথা। তাঁর বাবা আবদুল মতলিব ফকির, দাদা আবদুল গণি ফকিরও গানের মানুষ ছিলেন। তাঁরাও গান লিখতেন, গাইতেন। বাবার সঙ্গে নিজেও গাইতেন জবান আলী। লেখাপড়া করেছেন সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। পারিবারিক টানাপোড়েনে এরপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। তখন থেকেই গান লেখা শুরু করেন। পাড়া–মহল্লার জলসায় গান গাইতেন।

একসময় ছোটখাটো ব্যবসা করতেন জবান আলী। এখন বয়স হওয়ায় কিছু করেন না। ছেলে–মেয়েরা বড় হয়েছেন; যে যাঁর মতো আছেন। সুনামগঞ্জে সংস্কৃতিকর্মীদের প্রিয় ‘জবান আলী ভাই’ তিনি। শহরের মানুষ চেনে একজন বাউল হিসেবে।

শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জবান আলী জানান, তাঁর প্রেমের মানুষ গানটি সুর করে প্রথমে গেয়েছিলেন সুনামগঞ্জের সুরকার ও সংগীতশিল্পী অলক বাপ্পা। অলক বাপ্পার সঙ্গে পরিচয় ছিল কুমার বিশ্বজিতের। একদিন অলক বাপ্পা গানটি কুমার বিশ্বজিতের সামনে গাইলে তিনি গানটি পছন্দ করেন। এরপর জবান আলীকে ডেকে নেন কুমার বিশ্বজিৎ। পরিচয় ও খাতির হয়। পরে ২০০৯ সালে এই গানটি তিনি গেয়েছেন। এরপর তাঁর ‘আমার মাথাটা ঘুরায়/ কলিজা কামড়ায় বুঝি বাঁচা ভীষণ দায়/ রস খইয়া বিষ খাওয়াইলো প্রাণও বন্ধুয়ায়...’ গানটিও গেয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। এরপর নানা মাধ্যমে তাঁর গান সংগীতশিল্পী অলক বাপ্পা, কাজী শুভ, খায়রুল ওয়াসী, ঝুমা, মুনসহ অনেকে গেয়েছেন।

বাবার সঙ্গে নিজেও গাইতেন জবান আলী। লেখাপড়া করেছেন সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। পারিবারিক টানাপোড়েনে এরপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। তখন থেকেই গান লেখা শুরু করেন।

জবান আলী বলছিলেন, ‘যাঁরা প্রেমে পড়ে, প্রেমে মজে, তাঁরা সর্বদা তাঁর প্রিয় মানুষটারে নিয়াই থাকে। শয়নে–স্বপনে তাঁরেই দেখে, তাঁরে নিয়া ভাবে। তাঁর নিদ্রা নাই। সে সব সময় এক রকম। শুধু মনের মানুষরে খোঁজে।’ এই ভাবটাই গানে বলেছেন তিনি।

জবান আলীর গানে প্রেম–বিরহ যেমন আছে, তেমনি রয়েছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর টান, ভক্তি। তিনি গানে সমাজের নানা অসংগতিও তুলে ধরেছেন। জবান আলী এক গানে লিখেছেন, ‘কর্মের ভেতরে ধর্ম জন্ম জন্মান্তর/ আমি কই আগে কর্ম কর/ ধর্ম করিতে হইলে আগে কর্ম কর।’

প্রিয় মানুষের বিরহে কাতর জবান আলী আরেক গানে লিখেছেন, ‘কত সুখে আছিরে বন্ধু একবার দেখে যাও/ পাষাণে বান্ধিয়া হিয়া ফিরিয়ানা চাও/ আমায় করে দেশান্তরি কিবা শান্তি পাওরে বন্ধু...।’

জবান আলী মনেপ্রাণে একজন বাউল। তাঁর ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২ ফেব্রুয়ারি। মূলত এটিকে ধরেই তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে শুধু তাঁর গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের করার চিন্তা করছি। কবি ওবায়দুল মুন্সী

নিজের গান নিয়ে আরেকটি বই প্রকাশের ইচ্ছা রয়েছে জবান আলীর। এ জন্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করছেন। সংকট আছে, তবু কারও কাছে কিছু চান না। বলেন, ‘আমি গ্রামের ছেলে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব করি না। ৯০ বছর বয়সে সুস্থ আছি, চলাফেরা করতে পারি, এইটাই তো বড় পাওয়া। যতদিন বাঁচি, গান নিয়াই থাকমু।’

জবান আলীর আত্মীয় কবি ওবায়দুল মুন্সী বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওর জনপদে অসংখ্য বাউল ফকিরের জন্ম হয়েছে। এখানকার প্রকৃতি এমনই। মনের ভেতর গানের সুর খেলা করে। জবান আলী মনেপ্রাণে একজন বাউল। তাঁর ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২ ফেব্রুয়ারি। মূলত এটিকে ধরেই তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে শুধু তাঁর গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের করার চিন্তা করছি আমরা। সুনামগঞ্জের শিল্পীরা এতে জবান আলীর জনপ্রিয় গান পরিবেশন করবেন, তাঁকে সম্মান জানাবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র অলক ব প প ৯০ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা
  • মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা