গানে গানে পল্লি বাউল জবানের প্রশ্ন, ‘তাঁর খবর কে রাখে’
Published: 5th, April 2025 GMT
বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ‘দেশের’ মানুষ তিনি। গান লেখেন, গান করেন। গানই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। গানের ভণিতায় নিজের পরিচয় দেন ‘পল্লি বাউল’ হিসেবে। বেশভূষা, চলাফেরাতেও অতি সাধারণ তিনি।
৯০ বছর বয়সী জবান আলী আছেন তাঁর মতো করেই। গানে গানে বলেন মানুষের কথা, সহজ–সরল জীবনের কথা।
জবান আলীর বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায়। বোঝার বয়স থেকে গানে মজে আছেন। জীবনে আর কোনো কিছু করেননি। জীবন যৌবন সঁপে দিয়েছেন গানেই। এ পর্যন্ত সাত শতাধিক গান লিখেছেন। তাঁর একটি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে ১৫ বছর আগে ‘দর্পণে দর্শন’। ৭০টি গান আছে এতে। ২০০৯ সালে এটি প্রকাশ করে সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি।
‘জবান আলী ফকির, আপনাদের জন্ম হয়েছে বলে আমাদের সংগীত এত সমৃদ্ধ, এত মধুর.
গল্পে গল্পে জবান আলী শোনালেন তাঁর গানের জগতের কথা। তাঁর বাবা আবদুল মতলিব ফকির, দাদা আবদুল গণি ফকিরও গানের মানুষ ছিলেন। তাঁরাও গান লিখতেন, গাইতেন। বাবার সঙ্গে নিজেও গাইতেন জবান আলী। লেখাপড়া করেছেন সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। পারিবারিক টানাপোড়েনে এরপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। তখন থেকেই গান লেখা শুরু করেন। পাড়া–মহল্লার জলসায় গান গাইতেন।
একসময় ছোটখাটো ব্যবসা করতেন জবান আলী। এখন বয়স হওয়ায় কিছু করেন না। ছেলে–মেয়েরা বড় হয়েছেন; যে যাঁর মতো আছেন। সুনামগঞ্জে সংস্কৃতিকর্মীদের প্রিয় ‘জবান আলী ভাই’ তিনি। শহরের মানুষ চেনে একজন বাউল হিসেবে।
শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জবান আলী জানান, তাঁর প্রেমের মানুষ গানটি সুর করে প্রথমে গেয়েছিলেন সুনামগঞ্জের সুরকার ও সংগীতশিল্পী অলক বাপ্পা। অলক বাপ্পার সঙ্গে পরিচয় ছিল কুমার বিশ্বজিতের। একদিন অলক বাপ্পা গানটি কুমার বিশ্বজিতের সামনে গাইলে তিনি গানটি পছন্দ করেন। এরপর জবান আলীকে ডেকে নেন কুমার বিশ্বজিৎ। পরিচয় ও খাতির হয়। পরে ২০০৯ সালে এই গানটি তিনি গেয়েছেন। এরপর তাঁর ‘আমার মাথাটা ঘুরায়/ কলিজা কামড়ায় বুঝি বাঁচা ভীষণ দায়/ রস খইয়া বিষ খাওয়াইলো প্রাণও বন্ধুয়ায়...’ গানটিও গেয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। এরপর নানা মাধ্যমে তাঁর গান সংগীতশিল্পী অলক বাপ্পা, কাজী শুভ, খায়রুল ওয়াসী, ঝুমা, মুনসহ অনেকে গেয়েছেন।
বাবার সঙ্গে নিজেও গাইতেন জবান আলী। লেখাপড়া করেছেন সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে, সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। পারিবারিক টানাপোড়েনে এরপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। তখন থেকেই গান লেখা শুরু করেন।জবান আলী বলছিলেন, ‘যাঁরা প্রেমে পড়ে, প্রেমে মজে, তাঁরা সর্বদা তাঁর প্রিয় মানুষটারে নিয়াই থাকে। শয়নে–স্বপনে তাঁরেই দেখে, তাঁরে নিয়া ভাবে। তাঁর নিদ্রা নাই। সে সব সময় এক রকম। শুধু মনের মানুষরে খোঁজে।’ এই ভাবটাই গানে বলেছেন তিনি।
জবান আলীর গানে প্রেম–বিরহ যেমন আছে, তেমনি রয়েছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর টান, ভক্তি। তিনি গানে সমাজের নানা অসংগতিও তুলে ধরেছেন। জবান আলী এক গানে লিখেছেন, ‘কর্মের ভেতরে ধর্ম জন্ম জন্মান্তর/ আমি কই আগে কর্ম কর/ ধর্ম করিতে হইলে আগে কর্ম কর।’
প্রিয় মানুষের বিরহে কাতর জবান আলী আরেক গানে লিখেছেন, ‘কত সুখে আছিরে বন্ধু একবার দেখে যাও/ পাষাণে বান্ধিয়া হিয়া ফিরিয়ানা চাও/ আমায় করে দেশান্তরি কিবা শান্তি পাওরে বন্ধু...।’
জবান আলী মনেপ্রাণে একজন বাউল। তাঁর ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২ ফেব্রুয়ারি। মূলত এটিকে ধরেই তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে শুধু তাঁর গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের করার চিন্তা করছি। কবি ওবায়দুল মুন্সীনিজের গান নিয়ে আরেকটি বই প্রকাশের ইচ্ছা রয়েছে জবান আলীর। এ জন্য পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করছেন। সংকট আছে, তবু কারও কাছে কিছু চান না। বলেন, ‘আমি গ্রামের ছেলে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব করি না। ৯০ বছর বয়সে সুস্থ আছি, চলাফেরা করতে পারি, এইটাই তো বড় পাওয়া। যতদিন বাঁচি, গান নিয়াই থাকমু।’
জবান আলীর আত্মীয় কবি ওবায়দুল মুন্সী বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওর জনপদে অসংখ্য বাউল ফকিরের জন্ম হয়েছে। এখানকার প্রকৃতি এমনই। মনের ভেতর গানের সুর খেলা করে। জবান আলী মনেপ্রাণে একজন বাউল। তাঁর ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২ ফেব্রুয়ারি। মূলত এটিকে ধরেই তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে শুধু তাঁর গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের করার চিন্তা করছি আমরা। সুনামগঞ্জের শিল্পীরা এতে জবান আলীর জনপ্রিয় গান পরিবেশন করবেন, তাঁকে সম্মান জানাবেন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র অলক ব প প ৯০ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা
রাজধানীতে হাত ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর কাউন্সিল শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পুরান ঢাকার সদরঘাটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।
আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে আনোয়ার বাসা থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পরে খবর পান, তাঁর ভাইকে কাউন্সিল উত্তর শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির গ্যারেজে নিয়ে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে গিয়ে আনোয়ারের হাত–পা বাঁধা ও রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা।
লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে মৃত্যুর আগের তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন আনোয়ার। তাঁর ভাই এ কথা জানিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলেই আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ীর থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোরে সঙ্গী সুমনকে নিয়ে আনোয়ার বাসের কাঠামো তৈরির কারখানায় চুরি করতে যান। এ সময় সেখানে থাকা লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গী সুমন পালিয়ে যান।