নববর্ষে হাঁকডাকে মুখোর শতবর্ষী মাছের মেলা
Published: 15th, April 2025 GMT
বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে বসেছে মাছের মেলা। ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। ভোর থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে এই মেলা।
আজ মঙ্গলবার সকালে মেলায় ভিড় ঠেলে এগোতেই শোনা গেল মাছ বিক্রেতাদের হাঁকডাক। তারা ক্রেতাদের উদ্দেশে বলছেন–‘মাছ.
মেলায় সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, জি-থ্রি রুই, ব্ল্যাককার্প, পাঙাস, গ্রাসকার্প, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের বড় মাছ ছাড়াও রয়েছে চিংরি, টেঙড়া, পাবদা, শোলসহ নানা প্রজাতির মাছ। ভোর থেকে বসেছে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে মাছের চাহিদা অনেক বেড়েছে। মেলায় সবধরনের মাছ নিয়ে এসেছেন তারা। নববর্ষ উপলক্ষে সবাই বড় মাছটাই বেশি কেনেন। মাছের দাম একটু বেশি থাকায় তারাও কিছুটা দাম বেশি চাচ্ছেন।
সাত কেজি ওজনের একটি পাঙাস মাছের দরদাম করতে দেখা গেল রামচন্দ্রপুর ইউপি সদস্য আব্দুল কাদেরকে। তার সঙ্গে কথা হলে সমকালকে বলেন, মেলায় নানা প্রজাতির বড় মাছ উঠলেও দাম একটু বেশি। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে মাছ কিনে নিতে হচ্ছে। সবাই সাধ্যমতো মাছ ক্রয় করছেন।
এই মাছের মেলা রামচন্দ্রপুর বাজারের ঐতিহ্যের অংশ বলে জানালেন রামচন্দ্রপুর অধ্যাপক আব্দুল মজিদ কলেজের অধ্যাপক শাহ আলম জাহাঙ্গীর।
তাঁর ভাষ্য, ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এই মেলার বয়স শত বছরের বেশি এবং এটি মুরাদনগরের ঐতিহ্য। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠানো হয় এবং অনেকে মেলার মাছ দিয়ে অতিথি আপ্যায়নও করেন। কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা এই মেলায় বিক্রির জন্যই মাছ বড় করে থাকেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের
কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।
সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।
সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।
এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।
এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।