৫৫ লাখ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে ৬ মাস
Published: 22nd, April 2025 GMT
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আরও বড় করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করা হয়। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিক্রি করা হবে ৫৫ লাখ পরিবারের কাছে। শুধু তা–ই নয়, বর্তমানে চাল বিক্রি করা হয় বছরে পাঁচ মাস। এটা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হচ্ছে।
বর্তমানে প্রত্যেক পরিবারের কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল বিক্রি করা হয়। চালের পরিমাণ ও দাম অবশ্য একই রাখা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশের গ্রাম এলাকার গরিব মানুষের কথা মাথায় রেখে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় চালু করা হয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মসূচিটি চালু করা হয়, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় খাদ্য অধিদপ্তর।
সরকারের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রতিবছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর গরিব মানুষের কাজের অভাব থাকে। তাই এ পাঁচ মাস নামমাত্র দামে পরিবারগুলোকে চাল কেনার সুযোগ দেওয়া হয়। এখন তা ছয় মাস করা হচ্ছে।
কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারপ্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবারপ্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার একটি তালিকা করা হয় তখন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অবশ্য কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে চালের দাম করা হয় ১৫ টাকা।
মাঝখানে করোনা আসার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৬২ লাখ ৫০ হাজার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল তখন পাঁচ মাসের পরিবর্তে সাত মাস। করোনো চলে যাওয়ার পর উপকারভোগী কমিয়ে আবার নিয়ে আসা হয় ৫০ লাখে, আর কার্যক্রম চলে ৫ মাস।
উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হলেও তা সমতল এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং দুর্গম এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা দরে চাল বিক্রি করে সরকার।
দেশে এখন মোট উপজেলা ৪৯৫টি। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালিত হয় ৮ বিভাগের ২৫৬টি উপজেলায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী গরিবপ্রবণ অঞ্চল চিহ্নিত করার মাধ্যমে করা হয় তালিকা।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আমরা সম্প্রসারণ করতে চাই। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত উপকারভোগী পরিবার ৫৫ লাখে উন্নীত করছি। আর ৫ মাসের বদলে ৬ মাস দেওয়া হবে চাল। সম্ভব হলে পরে সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।’
বেশি রংপুর বিভাগে, কম সিলেটে
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ উপকারভোগীর একটি তথ্যভান্ডার রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরে। সে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী রয়েছেন রংপুর বিভাগে। এ বিভাগের ৮টি জেলায় উপকারভোগী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৫ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫১০ জন রংপুর জেলায়, সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ৯৫৪ জন পঞ্চগড় জেলায়।
বিভাগ অনুযায়ী সবচেয়ে কম উপকারভোগী সিলেটে, ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৩০ জন। এ বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি ৮৯ হাজার ৫০৩ জন, সবচেয়ে কম সিলেট জেলায় ২৭ হাজার ৫১০ জন।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী টাঙ্গাইল জেলায়, ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৬ জন এবং কম মুন্সিগঞ্জ জেলায়, ৩৩ হাজার ৬৩৬ জন।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় উপকারভোগী ৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৩ জন, যা ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৭ জন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৮৮ জন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২০৫ জন এবং রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৩২ জন।
পুষ্টি চাল দেওয়ার আওতা বাড়ছে না
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) নামের একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। খাদ্য অধিদপ্তর চাল সরবরাহ করলেও এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভিডব্লিউবি কর্মসূচিও চলবে। এর আওতায় ১৭০টি উপজেলায় ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে ভিটামিন এ, বি১, বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও জিংক–সমৃদ্ধ চাল ৩০ কেজি করে সারা বছর বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রতিবছর কর্মসূচিটির আওতা ১০ শতাংশ করে বাড়ানোর কথা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব মমতাজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচি চলবে। তবে আওতা বৃদ্ধি সার্বিক বাস্তবতার ওপর নির্ভর করবে। দুই বছর পরপর নতুন তালিকা তৈরি করা হয় বলেও জানান সচিব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ পর ব র র আওত য় ৫০ ল খ ৩০ ক জ সরক র সবচ য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।