খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আরও বড় করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করা হয়। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিক্রি করা হবে ৫৫ লাখ পরিবারের কাছে। শুধু তা–ই নয়, বর্তমানে চাল বিক্রি করা হয় বছরে পাঁচ মাস। এটা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রত্যেক পরিবারের কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল বিক্রি করা হয়। চালের পরিমাণ ও দাম অবশ্য একই রাখা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দেশের গ্রাম এলাকার গরিব মানুষের কথা মাথায় রেখে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় চালু করা হয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মসূচিটি চালু করা হয়, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় খাদ্য অধিদপ্তর।

সরকারের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রতিবছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর গরিব মানুষের কাজের অভাব থাকে। তাই এ পাঁচ মাস নামমাত্র দামে পরিবারগুলোকে চাল কেনার সুযোগ দেওয়া হয়। এখন তা ছয় মাস করা হচ্ছে।

কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারপ্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবারপ্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার একটি তালিকা করা হয় তখন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অবশ্য কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে চালের দাম করা হয় ১৫ টাকা।

মাঝখানে করোনা আসার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৬২ লাখ ৫০ হাজার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল তখন পাঁচ মাসের পরিবর্তে সাত মাস। করোনো চলে যাওয়ার পর উপকারভোগী কমিয়ে আবার নিয়ে আসা হয় ৫০ লাখে, আর কার্যক্রম চলে ৫ মাস।

উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হলেও তা সমতল এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং দুর্গম এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা দরে চাল বিক্রি করে সরকার।

দেশে এখন মোট উপজেলা ৪৯৫টি। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালিত হয় ৮ বিভাগের ২৫৬টি উপজেলায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী গরিবপ্রবণ অঞ্চল চিহ্নিত করার মাধ্যমে করা হয় তালিকা।

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আমরা সম্প্রসারণ করতে চাই। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত উপকারভোগী পরিবার ৫৫ লাখে উন্নীত করছি। আর ৫ মাসের বদলে ৬ মাস দেওয়া হবে চাল। সম্ভব হলে পরে সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।’

বেশি রংপুর বিভাগে, কম সিলেটে

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ উপকারভোগীর একটি তথ্যভান্ডার রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরে। সে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী রয়েছেন রংপুর বিভাগে। এ বিভাগের ৮টি জেলায় উপকারভোগী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৫ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫১০ জন রংপুর জেলায়, সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ৯৫৪ জন পঞ্চগড় জেলায়।

বিভাগ অনুযায়ী সবচেয়ে কম উপকারভোগী সিলেটে, ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৩০ জন। এ বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি ৮৯ হাজার ৫০৩ জন, সবচেয়ে কম সিলেট জেলায় ২৭ হাজার ৫১০ জন।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী টাঙ্গাইল জেলায়, ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৬ জন এবং কম মুন্সিগঞ্জ জেলায়, ৩৩ হাজার ৬৩৬ জন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় উপকারভোগী ৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৩ জন, যা ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৭ জন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৮৮ জন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২০৫ জন এবং রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৩২ জন।

পুষ্টি চাল দেওয়ার আওতা বাড়ছে না

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) নামের একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। খাদ্য অধিদপ্তর চাল সরবরাহ করলেও এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভিডব্লিউবি কর্মসূচিও চলবে। এর আওতায় ১৭০টি উপজেলায় ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে ভিটামিন এ, বি১, বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও জিংক–সমৃদ্ধ চাল ৩০ কেজি করে সারা বছর বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রতিবছর কর্মসূচিটির আওতা ১০ শতাংশ করে বাড়ানোর কথা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব মমতাজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচি চলবে। তবে আওতা বৃদ্ধি সার্বিক বাস্তবতার ওপর নির্ভর করবে। দুই বছর পরপর নতুন তালিকা তৈরি করা হয় বলেও জানান সচিব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ পর ব র র আওত য় ৫০ ল খ ৩০ ক জ সরক র সবচ য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।

অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।

জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ