আট বছর আগে নাজিম উদ্দিনের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, মামলাও হয়েছিল। কিন্তু খুনি কে, তাকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল তার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। খুনিরাও থেকে যায় অধরা। আট বছর পর হত্যাকাণ্ডের জট খুলেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে দরজার চৌকাঠের সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে খুন করেন স্ত্রী। এরপর কম্বল মুড়িয়ে সাত দিন লাশটি মালামাল রাখার ঘরে সুগন্ধি দিয়ে রাখা হয়। পরে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলা হয়। দুই মাস পর লাশ পেয়েছিল পুলিশ।এভাবে স্বামীকে খুনের বর্ণনা দিয়ে সোমবার চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন স্ত্রী নাছিমা আক্তার।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি নাজিম উদ্দিনের ছেলে মুরাদ হাসান আসিফ নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি কাউকে না জানিয়ে বিদেশ থেকে দেশে আসেন নাজিম। এ নিয়ে স্ত্রী নাছিমা আক্তারের সঙ্গে তার পারিবারিক কলহ শুরু হয়। একই বছরের ২১ মে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে নাছিমাকে চড় মারেন তার স্বামী। নাছিমাও স্বামীকে পাল্টা ধাক্কা দেন। তখন দরজার চৌকাঠে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নাজিম। এতে মৃত্যু হয় তার। বিষয়টি টের পেয়ে লাশ কম্বল ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে মালামাল ও মুরগির খাবার রাখার ঘরে লুকিয়ে রাখেন। এরপর ঘরের মেঝে থেকে রক্ত মুছে স্বামীর পাসপোর্ট ও আইডি কার্ড পুড়িয়ে ফেলেন নাছিমা। মেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে বাবার খোঁজ করলে বলেন, তাদের বাবা ঝগড়া করে বিদেশে চলে গেছেন। প্রতিবেশীদেরও এ কথা জানান। পরে লাশে সুগন্ধি ছড়িয়ে সাতদিন ঘরে লুকিয়ে রাখেন। এবং মেয়েদের কৌশলে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। এই সুযোগে লাশ বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি পুকুরে ফেলে দেন নাছিমা। পুকুরে দুর্গন্ধ যুক্ত বস্তা দেখে এলাকার লোকজন ভেবেছিলেন বস্তায় মৃত কুকুর রয়েছে। পরে তারা তা তুলে পাশের ঝোপঝাড় ভর্তি একটি গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই বস্তা ফেটে হাড়গোড় বেরিয়ে এলে তা খেলাধুলো করতে যাওয়া শিশুরা দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এতে পেরিয়ে যায় প্রায় দুই মাস। লাশ উদ্ধারের পরও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তভার সিআইডির হাতে আসার পর রহস্যের জট খুলতে থাকে। গত রোববার নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী নাছিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সোমবার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।

সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরা বলেন, ‘ঋণ নিয়ে স্বামী নাজিমকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন নাছিমা। স্বামী বিদেশ থেকে ফিরে আসায় ক্ষিপ্ত ছিলেন তিনি। কারণ ঋণ শোধ করতে পারেননি নাজিম। আর্থিক টানাপোড়নও ছিল। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কলহ লেগে থাকতো। কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড।’ 

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক নাছির উদ্দিন রাসেল জানান, তদন্তে নেমে জানতে পারেন ওই এলাকা থেকে একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক উধাও হন। নাজিম উদ্দিনকে হত্যার পর যার মাধ্যমে মেয়েদের নানার বাড়ি পাঠিয়েছিলেন নাছিমা। আবুল কালাম নামে সেই চালককে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে নাছিমা জড়িত থাকতে পারে বলে তথ্য পায় সিআইডি। পরে নাছিমা ও দেবর জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন নাছিমা। জসিমের সঙ্গে নাছিমার সুসম্পর্ক রয়েছে। ভাইয়ের লাশ গুমে জসিমের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স আইড তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যানারে নেত্রকোনায় ঝটিকা মিছিল হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর থেকে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পৃথক দুটি ভিডিও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন গ্রুপে দেখা যাচ্ছে। মিছিল ও বক্তব্যের স্থান জেলা শহরের বড়বাজার এলাকা ও ছোটবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে নিশ্চিত হলেও সময় বলতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মিছিলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র প্রশান্ত কুমার রায়।

পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নেত্রকোনা জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি ঝটিকা মিছিল হয়। অবশ্য এসব ঘটনায় মামলাসহ মিছিলে অংশ নেওয়া কিছু নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর গত ১০ মে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাফিজ ও জেলা আওয়ামী লীগের নাম লেখা ব্যানার নিয়ে কয়েকজন যুবক একটি ঝটিকা মিছিল করেন। পরে সে মিছিলের একটি ভিডিও ফেসবুকে দেওয়া হয়। তবে ওই মিছিলের স্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুর থেকে প্রশান্ত কুমারের নেতৃত্বে বেশ বড় একটি ঝটিকা মিছিলের ভিডিও ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিছিলটি সকাল ৬টার দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর প্রশান্ত কুমার দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

প্রায় দেড় মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, লাল গেঞ্জি পরা প্রশান্ত কুমার রায় শারীরিক অসুস্থতার জন্য টেনে টেনে হাঁটছেন। তিনি ও তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছেন। মিছিলে ৩৫ থেকে ৪০ জন ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগের মুখে কালো কাপড় ও মাস্ক ছিল।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রশান্ত কুমারের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আজ সকালে বড় বাজার এলাকায় হঠাৎ করে প্রশান্ত কুমারের নেতৃত্বে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক একত্র হয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করেন। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে প্রায় তিন মিনিট বক্তব্য দেন। শেষে যে যাঁর মতো করে চলে যান।’

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ মুঠোফোনে বলেন, মিছিল ও বক্তব্য দেওয়ার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভোরের দিকে হয়েছে। আজ জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন চলছে। পুলিশের অনেক সদস্য ওই নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন। এ সুযোগে তাঁরা ঝটিকা মিছিল করে থাকতে পারেন। যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কাজেই এ ধরনের মিছিল ও বক্তব্য বেআইনি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নায়ারের ৪০২ ম্যাচের অপেক্ষা
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
  • গিল যুগের শুরুতেই আক্রমণাত্মক বার্তা
  • বর্ষায় পায়ের যত্নে এই নিয়মগুলো মানতে পারেন
  • চট্টগ্রামে থানা ঘেরাওয়ের পর ‘আসামি’ ছেড়ে দিল পুলিশ
  • নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
  • টস হেরে ব্যাটিং চ্যালেঞ্জ গিলদের, সুদর্শনের অভিষেক 
  • তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি
  • ফলের তিন হাজার কোটি টাকার বাজার পাহাড়ে
  • রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস