এনআইডিতে বাবার জন্ম ১৯৫০ সালে, ছেলের ১৮৮৭-তে!
Published: 13th, May 2025 GMT
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) জন্ম সাল ভুল হওয়ায় ছেলে-মেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারছেন না জিতু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। এনআইডি কার্ডের তথ্য অনুযায়ী, তার বয়স ১৩৮ বছর, আর তার বাবার ৭৫ বছর। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধনে নবীগঞ্জ ইউএনএর কাছে আবেদন জানিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী।
জিতু মিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ার ভাঙা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মান্দারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ১৮৮৭ সালের ২ মার্চ। অন্যদিকে জিতু মিয়ার বাবা হারিছ মিয়ার জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ১ মার্চ। অর্থাৎ বাবার চেয়ে ছেলে ৬৩ বছরের বড়।
ভুক্তভোগী জিতু মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি তার ১২ বছরের ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে গেলে এনআইডি কার্ডে বয়সের সমস্যা ধরা পড়ে। জন্মনিবন্ধন সঠিক না হওয়ায় মেয়েকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারছেন না। তিনি বলেন, লেখাপড়া না করায় এনআইডিতে এত বেশি বয়স দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেননি তিনি। আইডি কার্ড সংশোধন করতে গত কয়েক মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন। অনেক অর্থ ব্যয় করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। আজ (মঙ্গলবার) হবিগঞ্জ জেলা জজ আদালতে তার বয়স এফিডেভিট করে এনআইডি সংশোধন করতে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে এসেছেন। তিনি বলেছেন, এটা ঠিক করে দেবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কমিশনার উত্তম কুমার দাসের ভাষ্য, মূলত ২০০৭ সালে যখন সার্ভারে ভোটার তালিকা করা হয়েছিল, তখনই বয়স ভুলের সমস্যাটি হয়েছে। ভুক্তভোগী কেউ আবেদন করলে জন্মনিবন্ধন ছাড়া সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। ওই ব্যক্তির অনলাইন জন্মনিবন্ধনেরও সংশোধন থাকতে হবে। বয়স সংশোধনে জিতু মিয়ার আবেদন তারা পেয়েছেন। কিন্তু জন্মনিবন্ধন ছাড়া কিছু করতে পারছেন না।
নবীগঞ্জ ইউএনও মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনআইড
এছাড়াও পড়ুন:
সাচারের রথযাত্রায় সনাতনীদের ঢল
প্রায় ১৫৮ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার রথযাত্রা। এই রথযাত্রা অত্র অঞ্চলের একটি সনাতনী মিলনমেলার ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকাল ৫টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। যার উল্টো রথ আগামী ৪ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।
রথযাত্রায় আগত সনাতনীরা জানান, এখানে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে কয়েকশ’ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কেনাকাটা করতে পারেন দর্শনার্থীরা। সাচার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রায় এলে এখানে অবস্থিত দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির এবং কালী মন্দিরও ঘুরে দেখা যায়। তাই সাচারের রথযাত্রা সনাতনীদের কাছে আবেগ ও অনুভূতির স্থান।
সরজমিনে দেখা যায়, রথে সুসজ্জিত জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রাকে বাতাস দিচ্ছেন সেবায়েতগণ। আর ভক্তরা সে রথের দড়ি ধরে সুশৃঙ্খলভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে ভক্তদের উৎফুল্ল করতে রথ থেকে সেবায়েতগণ ফল ও ফুল ছুড়ে দিচ্ছেন। তা ভক্তরা পরম আনন্দে গ্রহণ করছেন।
মন্দিরের ভক্ত সাংবাদিক রাজিব সরকার জানান, ১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথের প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকেই আষাঢ়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রার প্রতিমূর্তি স্থাপন করে প্রথম রথ ও ফিরতি রথযাত্রা হয়ে আসছে। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সাচারের রথটিতে দাপর, ত্রেতা ও কলিযুগের বহু কাহিনি কাঠে খোদাই করে তা রথের শোভা বর্ধনে ব্যবহার করা হয়।
যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা সৌন্দর্য মণ্ডিত সাচারের রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর পোড়া রথের সেই ধ্বংসাবশেষই রথ হিসেবে টানা হতো। পরে এক সময় এখানকার তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটি ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুনভাবে নির্মাণ করে দেন।
সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ধর জানান, পুরো মন্দিরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গরম ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে জাগো হিন্দু পরিষদ, গীতা স্কুল পরিচালনা পরিষদ, গীতা সংঘসহ একাধিক সনাতনী সংগঠন এখানে মন্দিরের ভেতরেই আগত ভক্তবৃন্দের সেবায় ক্যাম্প স্থাপন করে সেবা দিচ্ছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে ওষুধ, পানি এবং শরবত সরবরাহ করছে। সবার একটাই আকাঙ্খা- জগন্নাথ যেন সকল ভক্তের মনের আশা পূরণ করেন।
চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, “রথযাত্রায় কচুয়া ও চাঁদপুর ছাড়াও পুরোদেশতো বটেই ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বহু বিদেশি সনাতনীরা এখানে আসেন। এশিয়া উপমহাদেশে তাই সাচারের রথযাত্রা বেশ জনপ্রিয়। এবারো সাচার মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জড়ো হয়ে লাখো সনাতনী ভক্তবৃন্দ রথটানায় অংশ নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ও সুধীমহলকে সাথে নিয়ে রথযাত্রা নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে আমরা কয়েকশ’ সনাতনী যুবকদের সাথে নিয়ে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম তৎপর রেখেছি। মানুষের দান অনুদানে এগিয়ে নেওয়া এই সাচার মন্দির দর্শনে সকল সনাতনী সবসময় আসবেন এই প্রত্যাশাই করছি।”
প্রসঙ্গত, সাচার অঞ্চলের একজন জমিদার ছিলেন গঙ্গা গোবিন্দ। তিনি ভারতের পুরীতে গিয়েছিলেন জগন্নাথ দর্শনে। কিন্তু ওই সময়ে তিনি জগন্নাথের দর্শন পাননি। সে রাতে তিনি স্বপ্নে আদেশ পান- তার নিজ এলাকা সাচারেই যেন রথযাত্রার আয়োজন করা হয়।
পরে তিনি এলাকায় ফিরে রথযাত্রার প্রচলন করেন। চাঁদপুরের কচুয়ার এই সাচার এলাকাটি তৎকালীন ঐ সময়ে ভারতের ত্রীপুরা রাজ্যের সাচার এলাকা নামে পরিচিত ছিল।
জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ এখন নেই, তবে জমিদার বাড়িটি এখনও রয়েছে। তার প্রচলেন পর থেকে প্রতি বছর আয়োজতি হয়ে আসছে রথযাত্রা। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রথযাত্রায় যেন সনাতনীদের ঢল নেমেছে।
ঢাকা/অমরেশ/এস