আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে যে কয়টি দেশ পাকিস্তানে বেশি খেলতে গেছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। ২০২০ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ আর গত মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ খেলেছে তারা। রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে খেলা হয়েছে বেশি। লিটন কুমার দাসরা গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টি২০, ওয়ানডে দুই সংস্করণই খেলেছেন। হার-জিত উভয় স্বাদ নেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচ জিততে পারলেও স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সাদা বলের ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি লিটনরা। এবার গেরো খোলার পালা। কারণ পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো খেলতে না পারলে সমর্থকরা নেতিবাচক ধারণার ভেতরে থাকবেন। বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজ হারের ক্ষতকে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করবেন সমালোচকরা। তাই আমিরাতের কাছে সিরিজ হারে হৃত আত্মবিশ্বাস ফেরাতে জয়ের বিকল্প নেই। কোচ ফিল সিমন্সের প্রত্যাশা পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতবেন। অধিনায়ক লিটন কুমার দাসও গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, বিশ্বের যে কোনো দলকে হারাতে সক্ষম তারা।
বাংলাদেশ টি২০ ক্রিকেটে অত ভালো খেলে না। পছন্দের ওয়ানডে সংস্করণেও খারাপ সময় পার করছে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে।
লাহোরের সংবাদ সম্মেলনে তা মেনে নিয়ে লিটন বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিক দল হলে র্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দিকে থাকতাম। আমরা যেহেতু পেছনের দল, তার মানে আমাদের কোথাও না কোথাও খুঁত আছে। সে খুঁত সারানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি, সামনে ভালো কিছু হবে।’
ভারতের সঙ্গে সামরিক লড়াইয়ের পর কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে সিরিজ আয়োজন করে পিসিবি। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ কমে হয়েছে তিন ম্যাচ, ডিআরএস ছাড়াই খেলতে হচ্ছে। এর পরও বাংলাদেশ সিরিজ খেলায় কৃতজ্ঞ দেশটি। তবে দেশটির সাংবাদিকরা ঠিকই লিটনকে দলের নেতিবাচক দিকগুলো মনে করিয়ে দেন।
ইউএইর কাছে হারের পর দলকে উজ্জীবিত করার চ্যালেঞ্জ কতটা জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি। তবে এটি একটি নতুন সিরিজ। দক্ষতা কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকবে। এটা ভিন্ন বলের গেম। আমাদের বিশ্বাস আছে, যে কোনো দলকে হারাতে পারি। অতীতে কী হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাবছি না। আমরা আগামীর কথা ভাবছি।’
বাংলাদেশের মতো পাকিস্তান দলটিও ২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে গড়া। যে কারণে শাহিন আফ্রিদি, বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রজন্ম আবার টি২০ পারদর্শী। চার-ছক্কা হাঁকাতে পারে। এই ব্যাটারদের বড় ইনিংস খেলার সুযোগ দিতেই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট করা হয়েছে ব্যাটিংবান্ধব। পিএসএলের মতো আজকের ম্যাচেও বড় স্কোর হবে বলে মনে করেন টাইগার দলপতি। সমস্যা হচ্ছে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা নেই টাইগারদের। ২০২০ সালে খেলা দুই ম্যাচ টি২০ সিরিজে দলীয় সংগ্রহ ছিল ১৪১ ও ১৩৪ রানের। এশিয়া কাপের ওয়ানডে ম্যাচেও লড়াই জমাতে পারেনি।
তবে এবার ভালো খেলতে প্রেরণা তাড়া দিচ্ছে ইউএইর কাছে হারের ক্ষত আর লাহোরে আগে খেলার অভিজ্ঞতা। এ ভেন্যুতে বর্তমান দলের ৯ জন ম্যাচ খেলেছে। এ কারণে সিরিজে দল হিসেবে জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা দেখেন লিটন। তাঁর মতে, ‘আমার ব্যাটিং রোল গুরুত্বপূর্ণ। আমি চেষ্টা করব ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তবে আমাদের দলের অনেক ব্যাটার ভালো ছন্দে আছে। দল হিসেবে ছন্দ দেখাতে পারলে ভালো কিছু হবে।’ এই ভালো শুরুতেই হোক।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)