গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
Published: 29th, July 2025 GMT
কখনো বিমান হামলা করে, কখনো অভুক্ত রেখে, কখনো তিলে তিলে, আবার কখনো দ্রুত—সব রকমভাবে অব্যাহতভাবে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে চলেছে ইসরায়েল। এর মধ্যেই ২৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের অবসানের দাবিতে একটি বিবৃতি স্বাক্ষর করেছেন।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানানোর কয়েক মাস পর এখন এসব দেশ কেবল বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু সংকট সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
যেসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন, সেসব দেশের কয়েকটি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে ফ্রান্সও ঘোষণা দিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে দেশটি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এ ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব দেশ মুখে যতই ইসরায়েলের সমালোচনা করুক না কেন, তারা এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করে লাভবান হচ্ছে। তারা ইসরায়েলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বা এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতে পারে।
এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ও নৃশংস হামলায় অন্তত ৫৯ হাজার ৮২১ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৭ জন।
জেনে নেওয়া যাক, কোন দেশগুলো ইসরায়েলকে একদিকে তাদের সামরিক আগ্রাসনের জন্য দোষারোপ করছে, অন্যদিকে তাদের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্যভিত্তিক উন্মুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটির (ওইসি) ২০২৩ সালের তথ্যানুসারে, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য—প্রতিটি দেশ ওই বছর ইসরায়েলের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আমদানি-রপ্তানি বা উভয় ধরনের বাণিজ্য করেছে।
এসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কী ধরনের বাণিজ্য করে
এসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে প্রধানত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (চিপ), টিকা ও সুগন্ধির মতো বিভিন্ন পণ্য বাণিজ্য করে।
ইসরায়েল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোর একটির নাম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। এগুলো আসলে ছোট আকারের চিপ, যা কম্পিউটার, মুঠোফোন, টেলিকম যন্ত্রপাতি, মেডিকেল ডিভাইসসহ নানা ইলেকট্রনিক পণ্যে ব্যবহৃত হয়।
এই চিপগুলোর একটি বিশাল অংশ আয়ারল্যান্ডে রপ্তানি হয়। শুধু ২০২৩ সালে দেশটিতে প্রায় ৩৫৮ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট রপ্তানি করেছিল ইসরায়েল। আয়ারল্যান্ড ইসরায়েল থেকে মোট যত পণ্য আমদানি করে, তার মধ্যে এই চিপই সবচেয়ে বেশি দামে এবং বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে ইতালি।
২০২৩ সালে ইসরায়েলে মোট ৩৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ইতালি। এর মধ্যে গাড়ি রপ্তানি করা হয় ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ইতালি ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে।আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ণ জ য কর এসব দ শ ইসর য় ল সব দ শ ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
আট বছর পর ছাত্রদলের ‘ঢাউস’ কমিটি, পদ পেলেন ৪২০ জন
আট বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পদ পেয়েছেন মোট ৪২০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শাখা ছাত্রদলের এত বড় কমিটি হয়নি। এ কারণে একে ‘ঢাউস’ কমিটি বলছেন শিক্ষার্থীরা। আবার এ কমিটির করার ক্ষেত্রে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রও মানা হয়নি।
গতকাল বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রদলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কমিটির এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এ তালিকায় সই করেন। চাকসুতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী আয়ুবুর রহমান এ কমিটিতেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যর আংশিক কমিটি প্রকাশ হয়েছিল। তবে চাকসু নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় একজনকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র। বাকি চার সদস্যর আংশিক কমিটিই এখন পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। সর্বশেষ সংগঠনটির শাখা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন সদস্য ছিল ২৪৩ জন। এরপর ২০২৩ সালে এ কমিটি বিলুপ্ত হয়।
শাখা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র মতে কমিটির সদস্য থাকার কথা ৮১ জনের। তবে ঘোষিত কমিটির সংখ্যা গঠনতন্ত্রের পাঁচ গুণের বেশি। এতে ৫৫ জন সহসভাপতি, ৯২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৬৩ জন সহসাধারণ সম্পাদক, ৬৪ জন সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ৬২ জন সদস্য পদে রয়েছেন। ৪২০ সদস্যর এ কমিটিতে ছাত্রী রয়েছেন মাত্র ১১ জন। কিন্তু সংগঠনটিতে ছাত্রী থাকার কথা ছিল অন্তত ১০ শতাংশ। সে হিসাবে ৪২০ সদস্যর অন্তত ৪২ জন ছাত্রী পদে থাকার কথা।
গঠনতন্ত্র না মেনে ‘ঢাউস’ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির শাখা সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে অনেককে মূল্যায়ন করতে হয়েছে, তাই সদস্যসংখ্যা এত বেশি। গত ১৫ বছর আমাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সংগঠনের নেতাদের কারাগারে দেওয়া হতো, এ কারণে আগে কমিটি গোছানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি।’
ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন। তবে নারীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা কম। তবু যাঁরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন, আমরা তাঁদের সবাইকে গ্রহণ করেছি।’
গঠনতন্ত্র না মেনে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মহসিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
কমিটিতে পদ পাওয়া চাকসুর এজিএস আয়ুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন ধরে কমিটি না থাকায় আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ছিল। তবে চাকসুর পর নতুন কমিটি ঘোষণায় এখন সবার মধ্যে নতুন করে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আমাদের কমিটি বিশাল হলেও আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে বসে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।’