আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ অংশ সংশোধন ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর বিচার দাবি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে হামলায় জড়িত ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদেরও বিচার চেয়েছে।

বিবৃতিতে সই করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড.

হারুন উর রশীদ, সীমা দত্ত, ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা, আবদুল্লাহ আল কাফী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, ড. মাহা মির্জা, আফজাল হোসেইন, মারজিয়া প্রভা প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ পুনর্বিবেচনার রায়কে ন্যায়বিচার অভিহিত করেছেন। কিন্তু চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রতিপন্ন করে বেকসুর খালাস কোনো ন্যায়বিচার নয় বরং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের উদাহরণ।

এতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকার ঐতিহাসিক ভিত্তি প্রমাণ করে আজহার সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে এতে অংশীদার। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম থেকেই গণহত্যা বিচারের মৌলিক নীতি না মেনে, দলের পরিবর্তে ব্যক্তি হিসেবে বিচার করেছে।

যে পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য ট্রাইব্যুনালে ত্রুটিপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, একই স্বার্থকে অন্তর্বর্তী সরকার ধারণ করে জামায়াতের স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আসামির বেকসুর খালাস পাওয়া ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন। এ রায় গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার না করার বন্দোবস্ত করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচিতে হামলা, নারী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে আক্রমণ, সিলেটের এক ছাত্রীকে ক্রমাগত হুমকির ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, বিগত ১৫ বছর ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ছাত্রশিবির মননে ও আচরণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকেই বহন করে চলছে।

এদিকে, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর পৃথক বিবৃতিতে এ টি এম আজহারের খালাসের রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ রায় বাতিল করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী