পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূরে থাকা মহাকাশযানের ক্যামেরা যেভাবে মেরামত করেছে নাসা
Published: 28th, July 2025 GMT
২০২৩ সালে বৃহস্পতি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করার সময় বিকিরণের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় নাসার জুনো মহাকাশযান। সে সময় বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পাশাপাশি মহাকাশযানটিতে থাকা ‘জুনোক্যাম’ ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে আইও চাঁদের নিম্নমানের ছবি পাঠাতে থাকে ক্যামেরাটি। সমস্যা সমাধানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবী থেকেই ৩৭ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত ক্যামেরাটি মেরামত করে নাসা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এনএসআরইসি সম্মেলনে পৃথিবী থেকে ক্যামেরাটির মেরামতপদ্ধতি প্রকাশ করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
নাসার তথ্যমতে, অ্যানিলিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে জুনোক্যাম ক্যামেরা মেরামত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্যামেরাটিকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করে মাইক্রোস্কোপিক ত্রুটি মেরামত করা হয়। মেরামতের পরে বৃহস্পতির চাঁদের উন্নতমানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে ক্যামেরাটি। ফলে বৃহস্পতির চাঁদে সালফার ডাই–অক্সাইড, তুষারপাত ও আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমের জুনোক্যাম ইমেজিং ইঞ্জিনিয়ার জ্যাকব শ্যাফনার জানান, ‘অ্যানিলিং প্রক্রিয়ায় সিলিকনের মতো উপাদানকে মাইক্রোস্কোপিক স্তরে পরিবর্তন করা যায়। আমরা জানতাম না যে এ প্রক্রিয়ায় ক্ষতি মেরামত হতে পারে। আমরা একটি হিটারের মাধ্যমে জুনোক্যাম ক্যামেরার তাপমাত্রা ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। এই তাপমাত্রা জুনোক্যামের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ।’
অ্যানিলিং একটি তাপীয় প্রক্রিয়া যা মূলত ধাতুবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়। কোনো পদার্থের ভৌত ও কখনো কখনো রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করার জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। তবে পুরো সমস্যা সম্পর্কে জানা এবং পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূর থেকে ক্যামেরা মেরামত করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমের জুনোক্যামের যন্ত্র বিভাগের প্রধান মাইকেল র্যাভিন জানান, ‘বৃহস্পতি গ্রহে ৫৫তম বার প্রদক্ষিণের পরেই বিভিন্ন ছবিতে রেখা দেখা যায়। আমরা ছবির মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াকরণের চেষ্টা করলেও কিছুই কাজ করেনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আইও চাঁদের মুখোমুখি হবে দেখে আমরা অ্যানিলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি।’
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য
এছাড়াও পড়ুন:
আট বছর পর ছাত্রদলের ‘ঢাউস’ কমিটি, পদ পেলেন ৪২০ জন
আট বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পদ পেয়েছেন মোট ৪২০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শাখা ছাত্রদলের এত বড় কমিটি হয়নি। এ কারণে একে ‘ঢাউস’ কমিটি বলছেন শিক্ষার্থীরা। আবার এ কমিটির করার ক্ষেত্রে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রও মানা হয়নি।
গতকাল বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রদলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কমিটির এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এ তালিকায় সই করেন। চাকসুতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী আয়ুবুর রহমান এ কমিটিতেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যর আংশিক কমিটি প্রকাশ হয়েছিল। তবে চাকসু নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় একজনকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র। বাকি চার সদস্যর আংশিক কমিটিই এখন পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। সর্বশেষ সংগঠনটির শাখা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন সদস্য ছিল ২৪৩ জন। এরপর ২০২৩ সালে এ কমিটি বিলুপ্ত হয়।
শাখা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র মতে কমিটির সদস্য থাকার কথা ৮১ জনের। তবে ঘোষিত কমিটির সংখ্যা গঠনতন্ত্রের পাঁচ গুণের বেশি। এতে ৫৫ জন সহসভাপতি, ৯২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৬৩ জন সহসাধারণ সম্পাদক, ৬৪ জন সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ৬২ জন সদস্য পদে রয়েছেন। ৪২০ সদস্যর এ কমিটিতে ছাত্রী রয়েছেন মাত্র ১১ জন। কিন্তু সংগঠনটিতে ছাত্রী থাকার কথা ছিল অন্তত ১০ শতাংশ। সে হিসাবে ৪২০ সদস্যর অন্তত ৪২ জন ছাত্রী পদে থাকার কথা।
গঠনতন্ত্র না মেনে ‘ঢাউস’ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির শাখা সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে অনেককে মূল্যায়ন করতে হয়েছে, তাই সদস্যসংখ্যা এত বেশি। গত ১৫ বছর আমাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সংগঠনের নেতাদের কারাগারে দেওয়া হতো, এ কারণে আগে কমিটি গোছানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি।’
ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন। তবে নারীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা কম। তবু যাঁরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন, আমরা তাঁদের সবাইকে গ্রহণ করেছি।’
গঠনতন্ত্র না মেনে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মহসিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
কমিটিতে পদ পাওয়া চাকসুর এজিএস আয়ুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন ধরে কমিটি না থাকায় আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ছিল। তবে চাকসুর পর নতুন কমিটি ঘোষণায় এখন সবার মধ্যে নতুন করে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আমাদের কমিটি বিশাল হলেও আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে বসে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।’