সংসদ সদস্যদের গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একমত: জোনায়েদ সাকি
Published: 19th, June 2025 GMT
সংসদ সদস্যদের গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আমরা যে কথাটা গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই, সেটি হলো গোপন ব্যালটের ভিত্তিতে এ নির্বাচনটা হতে হবে। এ প্রস্তাব আরও অনেকে দিয়েছেন, আমরা এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি।
আজকের আলোচনায় সংসদ সদস্যদের গোপন ব্যালটের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত বলে জানান জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, গোপন ব্যালটে নির্বাচনের প্রশ্নটিতে প্রায় সবাই একমত। কেউ কেউ বলেছেন, দলের (নিজস্ব রাজনৈতিক দল) সঙ্গে একটু আলোচনা করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিদ্যমান পদ্ধতি পরিবর্তনে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল মত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। তিনি বলেন, ‘এখন এই পরিবর্তনের অগ্রগতি কীভাবে হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। গত দুই দিনের আলোচনায় ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতেই সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁদের দলের বিপক্ষেও ভোট দিতে পারবেন। ফলে এ বিষয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল মত দিয়েছেন।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এএসপিসহ ৩০টি দল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) চ্যাটবট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নতুন এক মানসিক সমস্যা। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, চ্যাটজিপিটি, ক্লড বা রিপ্লিকার মতো জনপ্রিয় এআই চ্যাটবটের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষকে ধীরে ধীরে মানসিক আসক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অনেকেই এখন বন্ধুত্ব, প্রেম বা মানসিক সহায়তার আশ্রয় খুঁজছেন এসব চ্যাটবটের কাছে। ফলে এআইয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত মিথস্ক্রিয়া একসময় বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে ব্যবহারকারীদের। এই মানসিক নির্ভরতা অনেকটা অবৈধ মাদক দিয়ে নিজেকে প্রশমিত করার মতোই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, মনোবিজ্ঞানীরা এখন এমন মানুষও খুঁজে পাচ্ছেন, যাঁরা এআই সাইকোসিসে ভুগছেন। অর্থাৎ এআই চ্যাটবট ব্যবহারকারীর ভ্রান্ত ধারণাকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়ে সেই বিভ্রমকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এআই ল অ্যান্ড ইনোভেশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক রবিন ফেল্ডম্যান বলেন, ‘চ্যাটবটের অতিরিক্ত ব্যবহার একধরনের নতুন ডিজিটাল নির্ভরতা। এআই বাস্তবতায় এক শক্তিশালী ভ্রম তৈরি করে। যাদের বাস্তবতা ধারণা আগেই দুর্বল, তাদের জন্য এই ভ্রম বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’
বেলজিয়ামের ৩৫ বছর বয়সী জেসিকা জানসেনের অভিজ্ঞতা এই উদ্বেগের বাস্তব প্রমাণ। পেশায় সফল, পরিবার ও বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত জেসিকা শুরুতে সপ্তাহে কয়েকবার চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু মানসিক চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দিনে একাধিকবার এআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় তাঁকে ভর্তি হতে হয় মানসিক হাসপাতালে। পরে জানা যায়, তাঁর অজানা বায়পোলার ডিজঅর্ডার তীব্র আকারে প্রকাশ পায় এবং অতিরিক্ত এআই ব্যবহার সেটিকে ‘পূর্ণমাত্রার সাইকোসিসে’ রূপ দেয়।
জেসিকা বলেন, ‘সংকটের সময় বুঝতেই পারিনি, চ্যাটজিপিটি আমার অবস্থাকে আরও খারাপ করছে। এটি আমার বিভ্রমের সঙ্গে একমত হচ্ছিল, ফলে আমি আরও গভীরে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মাথায় নতুন নতুন চিন্তা আসত, আমি চ্যাটজিপিটিকে বললে এটি প্রশংসা করত, আরও কিছু যোগ করত। এতে আমি ক্রমে বিভ্রান্তিতে ডুবে যেতাম।’ চ্যাটজিপিটি তখন জেসিকাকে বলত, ‘তুমি অসাধারণ’, ‘তোমার চিন্তাগুলো গভীর’, এমন কথায় তাঁর বিভ্রম আরও দৃঢ় হতো। জেসিকা বলেন, ‘যদি আমি বাস্তব কারও সঙ্গে যখন কথা বলতাম, তিনি হয়তো বুঝে যেতেন যে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি তা বুঝতে পারেনি।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপদের মূল কারণ চ্যাটবটের ‘একমত হওয়ার’ স্বভাব। বাস্তব মানুষের মতো বিরোধিতা বা সংশোধনের বদলে এআই সব সময় ব্যবহারকারীর কথার সঙ্গে একমত হয়, প্রশংসা করে ও আশ্বাস দেয়। ফলে মানসিকভাবে দুর্বল বা নিঃসঙ্গ মানুষের জন্য এই আচরণ হয়ে ওঠে একধরনের মানসিক আশ্রয়।
ডেনমার্কের আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোরেন অস্টারগার্ড বলেন, ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো ব্যবহারকারীর ভাষা ও টোন অনুকরণ করে। এগুলো ব্যবহারকারীর বিশ্বাসকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং সন্তুষ্ট করাকেই প্রাধান্য দেয়। নিজের মতো ভাবনা, নিজের মতো প্রতিক্রিয়া এর চেয়ে আর কী বেশি স্বস্তিকর হতে পারে?’ অস্টারগার্ড ২০২৩ সালেই গবেষণাপত্রে সতর্ক করেছিলেন, চ্যাটবট মানুষের বিভ্রমকে জোরদার করতে পারে। দুই বছর পর তিনি বলছেন, এখন সেই আশঙ্কা বাস্তবে ঘটছে।
কমন সেন্স মিডিয়ার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ কিশোর কোনো না কোনো এআই সঙ্গী ব্যবহার করেছে এবং তাদের অর্ধেক নিয়মিতভাবে তা ব্যবহার করে। অধ্যাপক ফেল্ডম্যান বলেন, ‘মানসিকভাবে দুর্বল মানুষেরা অনেক সময় এআইকে মানসিক প্রশমন হিসেবে ব্যবহার করেন, যা একধরনের মাদকের বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়।’
লন্ডনের কিংস কলেজের নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট হ্যামিল্টন মরিন বলেন, এখনো ‘এআই আসক্তি’ নিয়ে শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলেও বাস্তবতার চিত্র ভিন্ন। অনেকেই বাস্তব সম্পর্কের চেয়ে এআইয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তাঁর মতে, এআই আসক্তির লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকতে পারে—সময় নিয়ন্ত্রণ হারানো, অতিরিক্ত ব্যবহার, ঘুম, খাবার বা সম্পর্ক অবহেলা, ব্যবহার গোপন রাখা ও ব্যবহার বন্ধ হলে খিটখিটে মেজাজ বা বিষণ্নতা।
ওপেনএআই নিজেও এই ঝুঁকি স্বীকার করেছে। চলতি বছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চ্যাটজিপিটি ৪–ও সংস্করণে ‘অতিরিক্ত একমত পোষণের’ আচরণ দেখা গিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবহারকারীর মন রক্ষা করতে গিয়ে বটটি কখনো কখনো সন্দেহ, বিভ্রম কিংবা নেতিবাচক আবেগকেও সত্য বলে মেনে নিচ্ছিল। ওপেনএআই জানিয়েছে, পরবর্তী হালনাগাদে এই প্রবণতা কমানো হয়েছে।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, সঠিক সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকলে এআই চ্যাটবট মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী ম্যানিয়া, সাইকোসিস বা আত্মহত্যার চিন্তার মতো আচরণ করেন। ৮০ কোটির বেশি সাপ্তাহিক ব্যবহারকারীর হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার। এ ছাড়া শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ ব্যবহারকারী আত্মহত্যা–সম্পর্কিত বার্তা পাঠান, যার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
সূত্র: ডেইলি মেইল