আন্তর্জাতিক চার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থা থেকে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ অনুমোদন হয়েছে। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং শিগগিরই এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইইবি) ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এসব ঋণের অর্থ এলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার চলতি মাসে পাওয়া যাবে। আগামী ২৩ জুন সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই ঋণ অনুমোদন হওয়ার কথা। বিভিন্ন টানাপোড়েনের পর গত মাসে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ। এরপর সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে। আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতার কারণে অন্য সংস্থাগুলোও সহজে ঋণ ছাড় করছে।

গতকাল বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূষণ রোধে বায়ুর মান বৃদ্ধি ও গ্যাস সরবরাহ উন্নয়নে ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ। দুটি প্রকল্পের মধ্যে জ্বালানি খাত নিরাপত্তা জোরদারে ৩৫ কোটি এবং বায়ুমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯ কোটি ডলার দেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুর মান উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যাস সরবরাহের সংকট এবং শহর এলাকায় বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে এ দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে গতকাল এডিবি আলাদা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৯০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদনের তথ্য জানিয়েছে। গতকাল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির সদরদপ্তরে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদ বাংলাদেশের জন্য ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০ কোটি ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ৪০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যার মধ্যে আছে সম্পদের দুর্বল গুণমান, তারল্য সংকট এবং দুর্বল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ। এডিবির অর্থায়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাংক খাতের মূলধন কাঠামো শক্তিশালী করা হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে মোট ১০০ ডলার দেওয়ার কথা। ৬৪ কোটি ডলার অনুমোদনের পর বাকি ৩৬ কোটি ডলারও শিগগিরই হয়তো পাওয়া যাবে। আর আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার আগামী সোমবারের পর্ষদ সভায় হয়তো অনুমোদন হয়ে যাবে। এর বাইরে এআইআইবি থেকে ৪৪ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে যা হয়তো পাওয়া যাবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যা সহায়ক হবে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরিয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। এরপর থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে এখন আবার রিজার্ভ বাড়ছে। টানা ২০ মাস পর গত এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ের জন্য ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর তা ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। এরপর আবার বেড়ে বর্তমানে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি মাসে বড় অঙ্কের ঋণ যোগ হওয়ার পর রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে বলে তাদের ধারণা।
আইএমএফের শর্ত মেনে গত মে মাসের মাঝামাঝি ডলারের দর বাজারভিত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভের মোটামুটি শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দরে তেমন হেরফের হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে যা ১২২ টাকার মধ্যে ছিল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ আইএমএফ র ব শ বব য র জন য গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 

ফের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ সেপ্টেম্বর আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিন শেষে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ  ছিল ২৫ দশ‌মিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। 

গত জুন মাস শেষে রেমিট্যান্সে আয়ের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ পাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর গত জুলাইর প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ২০২ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। তখন গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ২৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর কমলেও আজ বুধবার রিজার্ভ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে ডলারের দাম ১২২-১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রাখে। বিপরীত দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। ফলে মাঝে মধ্যে বাজার থেকে ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসঙ্গে দাতা সংস্থার অনুদান রিজার্ভ বাড়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। করোনা পরবর্তী সময়ে সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে রিজার্ভ। যা অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। 

ঢাকা/নাজমুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপার ফোরে একাধিক বাড়তি ‘সুবিধা’ পাবে ভারত
  • হাত না মেলানো, বর্জনের হুমকি আর ম্যাচ রেফারির ক্ষমাপ্রার্থনা—এরপর সামনে কী
  • ‎১০ জনের কিংস ৪ গোলে উড়িয়ে দিল মোহামেডানকে
  • সে দিন ৪ মিনিট আগে খবর পেয়েছিলেন পাইক্রফট, এরপর দুবাইয়ে যা ঘটেছিল
  • ২৫ বছর পর সেই বেনফিকাতে ফিরলেন মরিনিও
  • নবীর ব্যাটে শ্রীলঙ্কাকে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট দিল আফগানিস্তান
  • সত্যি কি ‘মণিহার’ বন্ধ হচ্ছে
  • চট্টগ্রাম চেম্বারে ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের অভিযোগ
  • পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের থ্রো লাগল আম্পায়ারের মাথায়, এরপর যা হলো
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার